জীবনের প্রথম প্রেম ভোলা যায় না কেন ?

প্রেম একধরণের শিল্প। তাই সার্থক প্রেম খুঁজতে মাথা খোঁড়ার দরকার নেই! কথায় আছে ‘লিখতে লিখতে সরে আর হাগতে হাগতে মরে’। তাই চিন্তা নেই! প্রেম পড়ার অভ্যাস করতে থাকুন। অনুশীলন করুন। একদিন আপনার প্রেমও সার্থক হবে। বলা যায়, উথাল-পাথাল উত্তরণ ঘটবে আপনার প্রেমের। শুধু বিশ্বাস রাখুন। আর প্রেমে পরতে দ্বিধা করবেন না। কম বয়স হোক আর বেশি বয়স, মেয়ে দেখলেই ডাইভ দিয়ে জাস্ট প্রেমে পড়ে যান। ব্যস, কেল্লা ফতে!

কথায় বলে প্রথম প্রেম নাকি ভোলা অসম্ভব। প্রথম প্রেম ভেঙে যাওয়ার পর জীবনে যত প্রেমই আসুক না কেন তা কখনই প্রথমের জায়গাটা নিতে পারে না। প্রথম প্রেম তাই সবার কাছে সব সময়ই স্পেশ্যাল। অতীতের সম্পর্ককে ভুলতে না পারা এবং বারবার সেই কথা মনে করে বর্তমান জীবন বিপর্যস্ত হওয়ার ঘটনা বেশ কষ্টদায়ক। প্রথম প্রেম, প্রথম অনুভূতি, প্রথম ভালোবাসার মতো অনুভূতিগুলো জীবনভর মনে গেঁথে থাকে। কিন্তু কেন ? কিন্তু জানেন কি কেন এ রকম হয় ? কেন প্রথম প্রেম ভোলা যায় না ?

প্রথম কারণ :-

যে কোনো বিষয়ে আপনার প্রথমবারের অভিজ্ঞতা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি ভালো মনে থাকে। কারণ প্রথমবার কোনো কাজ করার সময় কিছুটা ভয়, কিছুটা উত্তেজনা কাজ করে সেই জন্য। প্রেমে পড়ার বিষয়টিও অনেকটা এই রকম। প্রথম প্রেমের ক্ষেত্রে কখনো কখনো আমাদের মধ্যে ভয় কাজ করে, প্রত্যাখ্যাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রত্যাশা পূরণ হবে কি না, সে নিয়ে সংশয় থাকে। উদ্বেগ হচ্ছে প্রেমের সবচেয়ে বড় অংশ। বিশেষ করে প্রথম প্রেমের ক্ষেত্রে।’

একটি গবেষণায় দেখা গেছে প্রথম প্রেমের অনুভূতি অনেকটা প্রথমবার স্কাইডাইভিং বা বিমান থেকে প্যারাস্যুট নিয়ে লাফ দেওয়ার মতো। এরপর আপনি যতবারই লাফ দেন না কেনো, প্রথমবারের স্মৃতিটা সবচেয়ে স্পষ্টভাবে মনে থাকে। সেই কারণে প্রথম প্রেম আমাদের স্মৃতি খুব গভীরে প্রোথিত থাকে। আর কোনো প্রেমের স্মৃতিই আর এভাবে মনে দাগ কাটতে পারে না। বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সবশেষে যে প্রেমটি জীবনে আসে, সেটিই শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সেই প্রেমটিতেই সবচেয়ে বেশি যত্ন পায় মানুষ। তবু প্রথম প্রেমের স্মৃতি কখনো না কখনো মনে পড়েই যায়।

দ্বিতীয় কারণ :-

বেশির ভাগ প্রথম প্রেম হয় বয়ঃসন্ধিকালে। যখন প্রবলভাবে হরমোনের পরিবর্তন হয়, পরিবারের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়। মোট কথা, সব মানুষের জীবনেরই সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়। আর সে কারণেই এই সময় হওয়া প্রেমের প্রভাব অনেক গভীরভাবে পড়ে জীবনে।

প্রেম কত প্রকার ও কী কী ?

১। প্রথম দেখায় প্রেম

আহা! বড় মধুর। তবে বেশিদিন চলে না। কারণ একহাতে তালি বাজে না। ছেলেদের ক্ষেত্রেই এই প্রেমের প্রকোপ বেশি। ম্যালেরিয়া জ্বরের মতো বয়ঃসন্ধির ছেলেরা প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে। সাধারণত রূপের মোহ প্রবল হওয়ায় বেশিদিন টিক্তে পারে না। প্রথম প্রেমের অভিজ্ঞতা ছাড়া সঞ্চয়ের ঝুলি শূণ্য।

২। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম

সবসময় ‘কাজটা ঠিক হল’ না ‘কাজটা ঠিক হল না’ এই ভাবনা ঘুরতে থাকে। দুজনেই অধিকার ফলাতে চাওয়ায় এই ধরণের প্রেম কেঁচে যায়। একতরফা সিদ্ধান্ত বা পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব থাকে।

৩। বিবাহোত্তর প্রেম

এর অধিকার শুধু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বিয়ের প্রথম কয়েক মাস এই প্রেম থাকে প্রবল। বিবাহোত্তর প্রেম ফলাতে হানিমুনের জুড়ি নেই। তবে মাস ছয়েক পরেই বিবাহোত্তর প্রেম ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত হয়ে যায়।

৪। পরকীয়া প্রেম

সভ্যতার আদি যুগ থেকে চলে আসছে এই প্রেম। নিজের স্বামী বা স্ত্রীর থেকে অন্যের স্বামী বা স্ত্রীকে সবসময় ভালো লাগে। এটা ‘নদীর এপাড় কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস/ ওপাড়েতে সর্বসুখ তাহার বিশ্বাস’ টাইপ। তাই বাছবিচার না করে অন্যের স্বামী বা স্ত্রীকে নিজের মনে করে প্রেম করাই পরকীয়া।

৫। অপরিণত প্রেম

সাধারণত ছেলেবেলায় এই ধরণের প্রেম বেশি হয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সমবয়সীদের মধ্যে দেখা যায়। মেয়েরাই এ ধরনের প্রেমে বেশি পড়ে। তবে ছেলেরাও যে পড়ে না সেটা বলা ভুল।

৬। কর্মক্ষেত্রে প্রেম

চাকরির সূত্রে আলাপ। কাছাকাছি আসা, একসঙ্গে যাওয়া-আসা, টিফিন খাওয়া থেকে প্রেম। বেসরকারি সংস্থায় এমন প্রেম বেশি দেখা যায়।

৭। মোবাইল প্রেম

পাড়ার দোকান থেকে অনেক কষ্টে সংগ্রহ করে, বন্ধুর ফোনলিস্ট হাতিয়ে, ফোনবুক ঘেঁটে মেয়ের নাম্বার জোগাড় করে আপন মনের মাধুরী মেশায়ে কোনও মেয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে প্রেম করাই মোবাইল প্রেম।

৮। ইন্টারনেট প্রেম

ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ায় যেটা হচ্ছে। ফাঁকা সময় পেলেই একটু প্রেম করে নেওয়া। কেউ কাউকে চিনত না। সোশ্যাল মিডিয়ায় আলাপ। সেখান থেকে পছন্দ হয়ে প্রেম। কমিটমেন্টের বালাই না থাকায় প্রেম করা সহজ। বিবাহিত বা অবিবাহিত উভয় ক্ষেত্রেই এমন প্রেম চলতে পারে।

৯। ত্রিভূজ প্রেম

একটা মেয়েকে নিয়ে ২ টো ছেলের দড়ি টানাটানি। দুজনেই একই মেয়েকে পেতে মরিয়া। সাধারণত এমন প্রেমে বাজি মেরে যায় অন্য কোনও ছেলে।

১০। বহুভূজ প্রেম

পাড়া বা এলাকায় এমন একজন মেয়ে থাকে যার মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া রূপ। সবাই তাঁর সঙ্গে প্রেম করতে চায় কিন্তু মেয়েটা ধরা দেয় না কাউকেই। পিছলে পিছলে যায়। এবং এতজনের প্রেম দেখে মনে মনে পুলকিত হয়।

১১। ঘানিটানা প্রেম

দাবি এবং দাবি আদায়ে সর্বস্ব পণ করে প্রেম চালানোই ঘানিটানা প্রেম।

১২। অব্যক্ত প্রেম

একে অপরকে ভালোবাসে। অথচ কোনওদিনই বলতে পারেনি। হতে পারে মনে জোর পায়নি, হতে পারে ল্যাদ খেয়ে আর বলা হয়ে ওঠেনি। অব্যক্ত প্রেম হারানো কষ্টদায়ক। জীবনের অন্যতম বড় ভুল হিসেবেও গণ্য হয়।

১৩। সুপ্ত প্রেম

অনেকটা অব্যক্ত প্রেমের মতোই। তবে সূক্ষ ফারাক আছে। একে অপরকে ভালোবাসে কিন্তু বলতে পারছে না। সুপ্ত প্রেম আজীবন সুপ্ত থেকে গেলে তা পরিণত হয় অব্যক্ত প্রেমে।

১৪। চুক্তিবদ্ধ প্রেম

পারস্পরিক সমঝতার মাধ্যমে এমন প্রেম হয়।

১৫। অসাম্প্রদায়িক প্রেম

দুই ধর্ম বা সম্প্রদায়ের অনুসারী। বিশেষত, হিন্দু-মুসলমান ছেলে-মেয়ের মধ্যে প্রেম। সমাজ না মানলেও প্রেম তো বাঁধা মানে না।

১৬। ভাড়াটে প্রেম

সকালে একজন বিকালে একজন। জামাকাপড় বদলের মতো প্রেমিক প্রেমিকা বদলায়।

১৭। ঝগড়াটে প্রেম

দুজনেই সারাক্ষণ একে-অপরের বাপ-মা উদ্ধার করে দিচ্ছে। সাধারণত ঝগড়া না হলে এরা থাকতে পারে না। এমন ঝগড়া ফোনে বেশি শুনতে পাওয়া যায়।

১৮। ‘আজো তোমায় ভালোবাসি’ প্রেম

কবেই বিচ্ছেদ ঘটেছে অথচ আজও একে অপরকে ভালোবাসে। এর সেই কথা মনে করে চোখের জল ফেলা আর নাকের জল টানাই এদের অবসর সময়ের কাজ।

১৯। ব্যার্থ প্রেম

শুরুর আগেই শেষ হয়ে যায় এমন প্রেম। ব্যর্থ প্রেমিকার চাইতে ব্যর্থ প্রেমিকের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি হয়। এমন প্রেমে সরাসরি প্রত্যাখ্যান জোটে। শেষে থাপ্পড়, জুতোর বাড়ি কিংবা গণধোলাই খাওয়াও বিচিত্র নয়।