শেক্সপিয়ারের বিখ্যাত সংলাপ ‘নামে কি এসে যায়?’ তবে দক্ষিণী সুপারস্টার রজনীকান্তের (Rajnikant) অভিনয় জীবনের শুরুতে নামটাই হয়ে উঠেছিল তার কাল। এমনিতেই তার জীবনে সংগ্রাম কিছু কম ছিল না। ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকের কাজ করে কিংবা বাসের কন্ডাক্টরি করে ক্যামেরার সামনে আসতে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল তাকে। তবে এত পরিশ্রমের পর আজ তিনি দক্ষিণের ‘থালাইভা’ হতে পেরেছেন।
আসমুদ্রহিমাচল ‘রজনীকান্ত’ নামে চেনে তাকে। তবে তার আসল নাম ছিল শিবাজী রাও গাওকোয়াড়। কোন পরিস্থিতিতে বাবা-মায়ের দেওয়া নাম বদলাতে হয়েছিল তাকে? জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হয় বেশ কয়েকটা বছর। তখন রজনীকান্ত বলে ইন্ডাস্ট্রিতে কার্যত কোনও নাম ছিল না। কাজের আশায় প্রতিদিন সেটে গিয়ে হাপিত্যেশে বসে থাকতেন শিবাজী নামের একটি ছেলে। তবে ক্যামেরার সামনে আসার আর সুযোগ হয় না তার।
দাড়ি না কামানো মুখ, উস্কোখুস্কো পোশাকে প্রথমবার ক্যামেরার সামনে আসার সুযোগ দিয়েছিলেন পরিচালক বালাচন্দর। ছবির নাম ‘অপূর্ভা রাগাঙ্গল’। তৎকালীন সুপারস্টার কমল হাসান, শ্রীবিদ্যা, মেজর সুন্দররাজন, জয়সুধা, নাগেশদের মাঝে ছোট্ট একটি চরিত্রের জন্য ডাক পেয়েছিলেন শিবাজী। ৪-৫ দিন পর পর সেটে এলেন, চারিদিকে ঘুরে দেখলেন, বসে থাকলেন, শেষমেষ ফিরে গেলেন বাড়িতে। তবে এভাবে বিনা কাজে সময় কাটাতে কাঁহাতক ভাল লাগে? তবুও মনকে প্রবোধ দিয়ে রাখছিলেন, সময় একদিন আসবেই।
একদিন শুটিং ফ্লোরের বাইরে অন্যমনস্ক হয়ে টান দিচ্ছিলেন সিগারেটে। আচমকা পরিচালকের চোখ পড়ে যায় তার দিকে। শিবাজীর এমন গা ছাড়া মনোভাব দেখে রেগে মেগে চিৎকার করে ওঠেন বালাচন্দর, “এই শিবাজি তোমার শেখার ইচ্ছে টিচ্ছে নেই নাকি! এখানে কমল অভিনয় করছে আর তুমি বেয়াক্কেলের মতো বাইরে গিয়ে সিগারেট ফুঁকছ! এখানে এসে ওঁর অভিনয় দেখে কিছু শেখো। অভিজ্ঞ অভিনেতাদের থেকে কত কিছু শেখার আছে। তাঁদের কাজ না দেখলে তুমি শিখবে কি! ঘণ্টা!”
পরিচালক রাগ কমলে অবশ্য বুঝিয়ে বললেন, “কমলের চরিত্রে বসিয়ে নিজেকে ভাবো। একজন নায়কের যা যা লাগে, সৌন্দর্য, প্রতিভা, অভিজ্ঞতা, সব ওঁর আছে। ওঁকে মন দিয়ে দেখো, শিখতে পারবে অনেক কিছু”। এরপর এল সেই বহু প্রতীক্ষিত দিন। ২৭শে মার্চ, ১৯৭৫ সাল, হোলির দিনেই নতুন এক তারকার জন্ম হল ইন্ডাস্ট্রিতে। এদিকে দক্ষিণে ততদিনে শিবাজী গণেশনের নামডাক ছড়িয়ে পড়েছে। আর একটা নতুন শিবাজীকে কি মনে রাখবে মানুষ?
বড় তারকার ছত্রছায়ায় যাতে উঠতি প্রতিভা চাপা পড়ে না যায় তার জন্য পরিচালক তামিল ইন্ডাস্ট্রির নতুন মুখের নাম দিলেন ‘রজনীকান্ত’। নতুন পরিচয়ে ক্যামেরার সামনে প্রথমবার শট দিলেন শিবাজী। তবে তিনি এতটাই নার্ভাস ছিলেন যে মাত্র দু লাইনের সংলাপ বলতেই বারবার টেক দিতে হচ্ছিল। তবে ধৈর্য হারাননি পরিচালক। কারণ তার জহুরীর চোখ বুঝে ফেলেছিল এই ছেলেটি তার মুখ রাখবে। হয়েছিলও তাই। সাধারণ এক দৃশ্যতেই রজনীকান্ত এমন জমিয়ে অভিনয় করলেন যে দর্শকরা প্রথম দেখাতেই গ্রহণ করে ফেললেন তাদের নতুন তারকাকে।
রজনীকান্তের কাজে খুশি হয়েছিলেন পরিচালক। ‘এক নতুন তারকার জন্ম দিলাম আজ’, গর্বে ফুলে উঠেছিল তার বুক। তামিলের এক ম্যাগাজিনে সাক্ষাৎকার দিয়ে পরিচালক বড় মুখ করে বলেছিলেন, কয়েকবছরের মধ্যেই তামিল তথা সমগ্র ভারতীয় সিনেমায় রাজত্ব করবে এই ছেলে! বালাচন্দ্ররের কথা রেখেছিলেন রজনীকান্ত। সুপারস্টার হয়েছিলেন অল্প সময়ের মধ্যেই। তবে তিনি কখনও ইন্ডাস্ট্রিতে তার জন্মদাতাকে ভোলেননি। প্রত্যেক বছর হোলির দিনটিতে গুরু বালাচন্দরের কাছে গিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতেন। শিবাজীকে ‘রজনীকান্ত’ হিসেবে গড়ে নিয়েছিলেন বালাচন্দর। বাকিটা ইতিহাস।