ভাইফোঁটাকে যমদ্বিতীয়া বলা হয় কেন? জেনে নিন ভাইফোঁটার অনেক অজানা গল্প

বছরে দু’টি উৎসবের জন্য ভাই বোনেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। রাখিবন্ধন উৎসব ও ভাইফোঁটা। রাখিবন্ধন অতিক্রান্ত, সময় এসেছে ভাইফোঁটা উৎসবের।কার্তিক মাসের শুক্লাদ্বিতীয়া তিথিতে, পাঁজি মতে  শুক্লাপক্ষের প্রথম তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়।

কথিত আছে যে, মৃত্যুর দেবতা যম নাকি তাঁর বোন যমুনার হাতে ফোঁটা নেন। মৃত্যুর দেবতাও এই উৎসবে সামিল হয়েছিলেন। সাধারণত কার্তিক মাসের শুক্লাদ্বিতীয়া তিথিতে (কালীপূজার দুই দিন পরে) এই উৎসব হয়। হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, এই উৎসব কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ২য় দিন উদযাপিত হয়।

ভাইফোঁটার আরও নাম

ভাইফোঁটা, পোষাকি নাম ভ্রাতৃদ্বিতীয়া, পশ্চিম ভারতে এই উৎসব ভাইদুজ নামেও পরিচিত। মহারাষ্ট্র, গোয়া ও কর্ণাটকে ভাইফোঁটা  “ভাইবিজ” বলে। নেপাল ও পার্বত্য অঞ্চলে এই উৎসবকে “ভাইটিকা “ বলা হয়।

ভাইফোঁটাকে যমদ্বিতীয়া বলা হয় কেন?

এই উৎসবের আরও একটি নাম হল যমদ্বিতীয়া। কথিত আছে যম ও তাঁর বোন যমুনা হচ্ছেন সূর্য্যের যমজ সন্তান, অর্থাৎ তারা যমজ ভাই বোন। বড় হয়ে তারা পরস্পর থেকে অনেক দূরে থাকতেন। দীর্ঘকাল অদর্শনে থেকে বোন যমুনার খুব ইচ্ছে হলো ভাই যমকে একটু দেখার। ভাইকে নিমন্ত্রণ করতেই ভাই যমরাজ বোনের বাড়ীতে এসে উপস্থিত।

ভাইফোঁটাকে যমদ্বিতীয়া বলার কারণ

ভাইকে যথাসাধ্য আপ্যায়ন শেষে ভাইয়ের জন্য মন ব্যাকুল হতেই বোন যমুনা ভাইয়ের সর্বাঙ্গীন কুশল কামনা করে প্রার্থনা করেন, ভাই যমরাজ খুব প্রীত হন বোনের এই আকুলতা দেখে। বোনকে নিশ্চিন্ত করতে বোনের ডাক পেলেই আবার আসার প্রতিশ্রুতি দেন। যমুনা তার ভাইয়ের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে খুশীতে আনন্দাশ্রু ফেলেন। সেই থেকেই ভাইয়ের মঙ্গল কামনা উৎসবের প্রচলন।

ভাইফোঁটাকে যমদ্বিতীয়া বলা হয় কেন? ভাইফোঁটার অজানা গল্প, জানলে চমকে যাবেন

কীভাবে ভাইফোঁটার উত্‍পত্তি হল?

অন্য মতে, নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে বধ করার পর যখন কৃষ্ণ তাঁর বোন সুভদ্রার কাছে আসেন, তখন সুভদ্রা তাঁর কপালে ফোঁটা দিয়ে তাঁকে মিষ্টি খেতে দেন। সেই থেকে ভাইফোঁটা উৎসবের প্রচলন হয়।

সর্বানন্দসুরী নামে পণ্ডিতের পুথি থেকে জানা যায়  জৈন ধর্মের অন্যতম প্রচারক মহাবীর বর্ধমানের মহাপ্রয়াণের পরে তাঁর অন্যতম সঙ্গী রাজা নন্দীবর্ধন মানসিক এবং শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েন। সেই সময়ে তাঁর বোন অনসূয়া নন্দীবর্ধনকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান এক কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে। সেখানে অনেক প্রার্থনার পরে নন্দীবর্ধন বোনের কাছে অনশন ভঙ্গ করেন।

ভাইফোঁটার পৌরাণিক কাহিনী

কিছু পৌরাণিক কাহিনি মতে একসময়ে বলির হাতে পাতালে বন্দি হন বিষ্ণু। বিপদে পড়ে যান দেবতারাও। কোনওভাবেই যখন বিষ্ণুকে উদ্ধার করা যাচ্ছে না, তখন নারায়ণকে বলির হাত থেকে উদ্ধার করতে সকলে লক্ষ্মীর শরণ নেন। লক্ষ্মী উপায় হিসেবে বলিকে ভাই ডেকে কপালে তিলক এঁকে দেন। সেটাও ছিল কার্তিক মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথি। ফোঁটা পেয়ে বলি লক্ষ্মীকে উপহার দিতে চান। আর তখনই লক্ষ্মী, ভগবান বিষ্ণুর মুক্তি উপহার চান।

ভাই ফোঁটা কেমন করে দেয়

সব মিলিয়ে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, এই উৎসবের আসল লক্ষ্যই হল কল্যাণ কামনা। তবে ভিন্ন মত থাকলেও যমুনার যমকে ফোঁটা দেওয়ার কাহিনিই বেশি প্রচলিত৷ কারণ ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেওয়ার সময় বোনেরা ছড়া কেটে বলে-
“ ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা॥
যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হল অমর।
আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে আমার ভাই হোক অমর॥