
রাজপরিবারের জন্মেছিলেন অথচ অভাব তাঁর পিছু ছাড়েনি। স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হওয়ার অথচ হয়ে গেলেন অভিনেতা। আশির দশকের ত জনপ্রিয় অভিনেতা ইরফান মারা গেলেন বুধবার সকালে। দীর্ঘদিন ধরে নিউরোএন্ডোক্রিন টিউমারে ভুগছিলেন তিনি। গতকাল হঠাৎ করে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করায় মুম্বাইয়ের আম্বানি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করে তাঁর পরিবার। রাতে তাঁকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছিল। আর আজ সকালেই আসে দুঃসংবাদ।
২০১৮ সালের ৫ই মার্চ তিনি নিজে ট্যুইট করে তাঁর রোগের কথা বলেন। আশাবাদী ছিলেন এই কঠিন রোগকে পরাজিত করে সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। কিন্তু আর পারলেন না। আজ সকালেই তিনি জান্নাতবাসী হন। বিখ্যাত এই অভিনেতার থেকে আমাদের আরও অনেক কিছু পাওয়ার ছিল। কিন্তু হারালাম আমরা তাকে!
একজন সৈনিকের মতোই লড়াই করে গেছিলেন তিনি। লাখ লাখ দর্শকের ভালোবাসায় ছিল তার অগাধ আস্থা। এই মানুষগুলিরর শুভকামনা জড়িয়ে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন তিনি রাখতেন তাই তিনি ট্যুইট করে লিখেছিলেন, পরিচিত-অপরিচিত বিভিন্ন মানুষের প্রার্থনাই এখন তাঁর বেঁচে থাকার শক্তি।
২০১৯ সালে ভারতে ফিরে আসেন তিনি আংরেজি মিডিয়াম ছবির শ্যুটিং করতে। কিন্তু ছবির প্রমোশনে থাকতে পারেন না এই রোগের কারনে। ট্রেলার রিলিজের সময় তিনি বলেছিলেন, বন্ধুরা আমি ইরফান। আজ আপনাদের সাথে নেই আবার আছিও। আপনারা বিশ্বাস করুন যতটা ভালবেসে এই ছবির কাজ করেছিলাম ঠিক ততখানি ভালোবাসা নিয়ে এই ছবির প্রমোশন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু উপায় নেই। শরীরে রোগ বাসা বেঁধেছে। এরপর খানিক থেমে বলেছিলেন, ‘আমার জন্য অপেক্ষা করুন।’
তিনি যে ফিরে আসবেন এ বিশ্বাস তাঁর ছিল। বিশ্বাস ছিল আমাদেরও। কিন্তু ফিরে আর এলেন না। আমাদের অপেক্ষা শেষ হয়ে গেল। স্ত্রী সুতপা এবং দুই ছেলেকে ফেলে রেখে তিনি পাড়ি দিলেন অনন্তের জগতে। ছেলে এবং স্ত্রীর জন্যই বাঁচতে চেয়েছিলেন তিনি। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “সুতপার ব্যাপারে আমি আর কি বলবো। ২৪ ঘন্টা ও আমার পাশে আছে। আজ যে আমি সুস্থ হয়েছি। মনোবল ফিরে পাচ্ছি। সে সবটাই ওর অবদান অবদান। এই অবদান বলে বোঝানোর নয়।ওর জন্যই এখন আমি বাঁচতে চাই।”
কিন্তু বলিউডের অন্যতম সেরা এই অভিনেতা যে রোগে ভুগছিলেন সেই নিউরোএন্ডোক্রিন টিউমার আসলে কী? কী বা উপসর্গ এর? আর এই টিউমারে বাঁচার সম্ভাবনাই বা কতটা?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন নিউরোএন্ডোক্রিন টিউমার একটি বিরল রোগ। এই টিউমার আসলে এন্ডোক্রিন গ্রন্থি ও স্নায়ুতন্ত্রের কোষ থেকে জন্মায়। এই টিউমার থেকে এক রকমের হরমোন নিঃসৃত হয়। ফুসফুস, অগ্ন্যাশয়, অন্ত্রে এছাড়াও শরীরের যে কোন জায়গায় হতে পারে এই টিউমার। হরমোন ক্ষরণকারী কোষ থেকে এই টিউমার তৈরি হওয়ার কারণে এটি নিজেও হরমোন ক্ষরণ করতে পারে।
আসলে এই টিউমার থেকে সেরোটোনিন নামে এক রকমের হরমোন নিঃসৃত হয়। এর ফলে শরীরে নানারকম উপসর্গ দেখা যায়। এই উপসর্গগুলি হলো হুঠ করে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, শরীরের প্রদাহ তৈরি হওয়া, ত্বকের সমস্যা, হৃদ স্পন্দন আচমকা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। অন্ত্রে এই টিউমার বেশি হয়। অন্ত্রের ক্ষুদ্রান্তে এই ধরনের টিউমার হলে তাকে বলা হয় কার্সিনয়েড টিউমার। এই টিউমারের কোষ সারা শরীরে যদি ছড়িয়ে পড়ে তবে বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম বলা যেতে পারে। তবে সাধারণভাবে দেখা যায় যে ৬০ বছরের উপর বয়স হলে সেক্ষেত্রে রোগীরা পাঁচ বছর বেঁচে থাকেন এই রোগে।