রাজ্যের নতুন মন্ত্রীদের কার দায়িত্ব কী কী, রইলো সম্পূর্ণ তালিকা

একুশের নির্বাচনী লড়াই শেষ। টানটান উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে ভোটের গণনা। আগামী পাঁচ বছরের জন্য রাজ্যের শাসন ভার ফের বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই উঠেছে। দলে তিনিই শেষ কথা। তাই দলত্যাগীদের ভিড়ে দলের যতই হেভিওয়েট নেতাকর্মীরা থাকুন না কেন, রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্ল্যামারে এতটুকুও ভাটা পড়েনি। রাজ্যের মানুষ তাই আবারও তাকেই বেছে নিয়েছেন। রাজ্যে বিজেপি যতই ঝড় তোলার চেষ্টা করুক না কেন, মমতা সাইক্লোনের কাছে বিজেপির সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে।

একুশের লড়াইয়ে বিধানসভা নির্বাচনে রেকর্ড জয়ের পর গত বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পর আজ অর্থাৎ সোমবার নবান্নে মন্ত্রিসভার দফতর বণ্টন করলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গঠিত হলো নতুন মন্ত্রিসভা। মমতা বন্দোপাধ্যায় একাই ছ’টি দফতরের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে আবার সেই পুরনো ফর্মে ফিরে গেলেন।

স্বরাষ্ট্র ও পার্বত্য বিষয়ক দফতর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর, ভূমি ও ভূমি সম্পদ এবং উদ্বাস্তু ও পুনর্বাসন দফতরের দায়িত্ব, কর্মীবর্গ ও প্রশাসন, তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর তো বটেই, এবার থেকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের দায়িত্বও মুখ্যমন্ত্রী একাই সামলাবেন। আগে এই দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া ছিল রবীন্দ্রনাথ ঘোষের উপর। তবে একুশের লড়াইয়েও উত্তরবঙ্গ কার্যত বিজেপির দখলে। তাই দলনেত্রী এবার নিজেই উত্তরবঙ্গের দায়িত্ব সামলাবেন।

   

৪৩ জন মন্ত্রীর মধ্যে পূর্ণমন্ত্রী ২৪ জন, বাকি ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী। এদের মধ্যে ১০ জন পাচ্ছেন স্বাধীন দফতর। মন্ত্রীর তালিকায় এ বার ১৭ জন নতুন মুখ। প্রার্থী না হলেও মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ৪৪ সদস্যের রাজ্য মন্ত্রিসভায় মহিলার সংখ্যা হল ৯। সোমবার শপথ নেওয়া ৪৩ জনের মন্ত্রিসভার ৮ জন মহিলা মন্ত্রীর মধ্যে ১ জন পূর্ণমন্ত্রী, ৩ স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী এবং ৪ জন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন।

ফিরহাদ হাকিম : মমতার অন্যতম ছায়াসঙ্গী তথা কলকাতা পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিমকে রাজ্যের পরিবহন দপ্তরের দায়িত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আগে এই পদের দায়িত্ব সামলাতেন শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু বিজেপি শিবিরে যোগদান করার পর এই পদ খালিই ছিল।

পার্থ চট্টোপাধ্যায় : ২০১১ সালে মমতা সরকার গড়ে ওঠার পর রাজ্যের শিল্প দপ্তরের দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। এরপর ২০১৪ সালে তাকে শিক্ষা বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তিনি নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে আজ থেকে তিনি শিল্প এবং বাণিজ্য দফতরের দায়িত্ব পেলেন। একই সঙ্গে তথ্য-প্রযুক্তি, বৈদুতিন এবং সংসদীয় বিষয়ক বিভাগের দায়িত্বও তুলে দেওয়া হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাঁধে।

ব্রাত্য বসু : পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে শিক্ষা দপ্তর থেকে সরিয়ে দিয়ে তার জায়গায় ব্রাত্য বসুকে শিক্ষা দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হল। উল্লেখ্য ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত শিক্ষা বিভাগের দায়িত্ব সামলিয়েছেন ব্রাত্য বসু। ২০১৮ সালে ব্রাত্য বসুকে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি এবং জৈব-প্রযুক্তি দফতরের দায়িত্বভার অর্পণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

অমিত মিত্র : ২০১৮ সাল থেকে রাজ্যের অর্থ দপ্তরের দায়িত্ব সামলেছেন অমিত মিত্র। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি এই দফায় বিধানসভা নির্বাচনে দাঁড়াননি। তবে মুখ্যমন্ত্রী অর্থ দপ্তরের দায়িত্ব অমিত মিত্রের থেকে কেড়ে নেননি। আগামী পাঁচ বছরের জন্য রাজ্যের অর্থ দপ্তর সামলাবেন অমিত মিত্র। এছাড়াও পরিকল্পনা, পরিসংখ্যান ও পর্যবেক্ষণ দফতরের দায়িত্বও সামলাবেন তিনি।

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক : রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি শিবিরে যোগদান করার পর থেকেই খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বন দপ্তরের দায়িত্ব পান। আগামী পাঁচ বছরের জন্য তিনি বন দপ্তরের দায়িত্ব সামলাবেন। পাশাপাশি পুনর্ব্যবহাযোগ্য শক্তি দফতরের দায়িত্বও পেয়েছেন তিনি।

সুব্রত মুখোপাধ্যায় : পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব ও তার সঙ্গে রাষ্ট্রায়াত্ত এবং শিল্প পুনর্গঠন বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছেন বালিগঞ্জের বিধায়ক।

সাধন পান্ডে : ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের দায়িত্ব এবং স্বনির্ভর ও স্বনিযুক্তি দফতরের দায়িত্ব পেয়েছেন মানিকতলার তৃণমূল বিধায়ক।

বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা : সুন্দরবন উন্নয়ন বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছেন সাগরের তৃণমূল বিধায়ক।

মানস রঞ্জন ভূইয়া : জলসম্পদ বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছেন সবংয়ের নবনির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক।

সৌমেন মহাপাত্র : সেচ ও জল পরিবহণ মন্ত্রকের দায়িত্ব পেলেন সৌমেন মহাপাত্র।

মলয় ঘটক : আইন, বিচার বিভাগ এবং পূর্ত দফতরের দায়িত্ব পেলেন রাজ্যের প্রাক্তন আইন এবং শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক।

অরূপ বিশ্বাস : যুবকল্যাণ এবং ক্রীড়া বিভাগের দায়িত্ব পেলেন অরূপ বিশ্বাস।

উজ্জ্বল বিশ্বাস : কারামন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন কৃষ্ণনগর দক্ষিণে তৃণমূলের বিধায়ক।

অরূপ রায় : নিজের পুরনো সমবায় দপ্তরের দায়িত্ব আগামী পাঁচ বছরের জন্যেও পালন করবেন অরূপ রায়।

রথীন ঘোষ : জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে সরিয়ে খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলেন রথীন ঘোষ।

চন্দ্রনাথ সিংহ : ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি শিল্প ও বস্ত্র দফতরের দায়িত্ব পেলেন তিনি।

শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় : রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী হলেন শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়।

মন্ত্রী পুলক রায় : জনস্বাস্থ্য এবং কারিগরি বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি।

শশী পাঁজা : নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের দায়িত্ব পেলেন শশী পাঁজা।

গোলাম রব্বানি : সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের দায়িত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের কাঁধ থেকে রব্বানির উপর তুলে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিপ্লব মিত্র : কৃষি বিপণন বিভাগের দায়িত্ব পেলেন হরিরামপুরের তৃণমূল বিধায়ক বিপ্লব মিত্র।

জাভেদ আহমেদ খান : রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের দায়িত্ব সামলাবেন তিনি।

স্বপন দেবনাথ : প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব পেলেন তিনি।

সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী : জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগার দফতরের দায়িত্ব পেলেন তিনি।

স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না : শ্রম দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী মনোনীত হয়েছেন তিনি।

স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী সুব্রত সাহা : খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হলেন তিনি।

স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হুমায়ুন কবীর : কারিগরি শিক্ষা দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হলেন।

স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী অখিল গিরি : মৎস্য দফতর স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হলেন অখিল গিরি।

স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য :  স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, আইন ও বিচার, আবাসন, ভূমি সংস্কার, উদ্বাস্তু ও পুনর্বাসন, পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন বিভাগের প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী এবার থেকে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার সামলাবেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ , ভূমি ও ভূমি সংস্কার, উদ্বাস্তু এবং পুনর্বাসন দফতরের প্রতিমন্ত্রীও রয়েছেন তিনি।

স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী রত্না দে নাগ : পরিবেশ ও বিজ্ঞান দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হলেন হুগলির পান্ডুয়া বিধানসভা কেন্দ্রের বিজয়ী তৃণমূল প্রার্থী।

স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যারানী টুডু : পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হলেন মানবাজারের বিজয়িনী।

স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী বুলুচিক বরাইক : অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হলেন তিনি।

স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী সুজিত বসু : দমকল বিভাগের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।

স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন : পর্যটন দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হলেন চন্দননগরের বিজয়ী বিধায়ক।

প্রতিমন্ত্রী দিলীপ মণ্ডল : পরিবহণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী হলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরের বিধায়ক দিলীপ মণ্ডল।

প্রতিমন্ত্রী আক্রুজ্জামান : বিদ্যুৎ দফতরের প্রতিমন্ত্রী হলেন রঘুনাথগঞ্জের বিধায়ক আক্রুজ্জামান।

প্রতিমন্ত্রী শিউলি সাহা : পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী হলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহা।

প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো : ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতরের প্রতিমন্ত্রী হলেন শালবনির তৃণমূল বিধায়ক।

প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন : সেচ ও জল পরিবহণ এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা : বন দফতরের প্রতিমন্ত্রী হলেন ঝাড়গ্রামের বিধায়ক।

প্রতিমন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি : খাদ্য এবং সরবরাহ দফতরের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হলেন।

প্রতিমন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারী : শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী হলেন পরেশচন্দ্র অধিকারী।

প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি : যুব কল্যাণ এবং ক্রীড়া দফতেরর প্রতিমন্ত্রী হলেন রাজনীতির নবাগত সদস্য মনোজ তিওয়ারি।