বিয়ে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। অন্য ধর্ম বা জাতের মানুষকেও কেউ জীবনসঙ্গী হিসাবে পছন্দ করতেই পারেন। সম্প্রতি কেরালার এক তরুণী মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করার জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। এই নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। এমনকি কেরালা আদালতও হাদিয়া (পূর্বনাম অখিলা) ও সাফিন জাহানের বিয়েকে অবৈধ ঘোষণা করে।
তরুণীর বাবা কেরালা আদালতে একটি পিটিশান দাখিল করেন। তাঁর দাবি, মেয়েকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা হয়েছিল যাতে সিরিয়ায় পাচার করা যায়। এরপরেই হাদিয়াকে মা-বাবার হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ‘নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা সন্তুষ্ট নই।’
ধর্ম বিশ্বাস যে কোনও মানুষের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আদালত এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করলে সেই মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়। যা সংবিধান বিরোধী।

ভারতে ১৮ বছর বয়সের একজন মহিলা প্রাপ্তবয়স্ক। সে ভোট দেওয়া, বিয়ে করা, শিশুর জন্ম দেওয়া, চাকরি করা এবং গাড়ি চালানোর অধিকার অর্জন করে। তাহলে একজন হিন্দু স্বইচ্ছায় মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করতে চাইলে এত হইচই কেন? ‘লাভ জিহাদ’-এর আড়াল টেনে এত বিতর্ক কেন? হাদিয়াকে অস্বীকার করার অর্থ প্রাপ্তবয়স্কের ধারণাকে অস্বীকার করা। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ভারতের সর্বোচ্চ আদালত হাদিয়ার কথা শুনেছে। সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চকে হাদিয়া জানিয়েছে, সে নিজের স্বাধীনতা চায়। সে মা-বাবার কাছে নয়, স্বামীর সঙ্গে থাকতে চায়।
ভারতের বৈচিত্রপূর্ণ সংস্কৃতি। ধর্ম এবং বর্ণ আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অসঃবর্ন বিবাহের ক্ষেত্রে এখনও সমাজের ভ্রুকুটি নিক্ষেপ হয়। জাতি ব্যবস্থার প্রাচীন কাঠামো মেনে চলে এই দেশ। অন্য জাত বা নীচু জাতের কাউকে বিয়ে করা এখনও অপমানজনক। এই জন্য ‘অনার কিলিং’-এর ঘটনাও ঘটছে অনেক। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যানের সর্বশেষ অপরাধের তথ্য অনুযায়ী ২০১৪-১৫ সালের তুলনায় ভারতে অনার কিলিং বেড়েছে প্রায় ৭৬ শতাংশ।
জীবনসঙ্গী হিসাবে অন্য ধর্ম-বর্ণের মানুষকে পছন্দ করলে হয় ধর্ম পরিবর্তণ করতে হবে নয়তো স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টের অধীনে বিয়ে করতে হবে। তবেই নিজের ধর্মে থেকেই অন্য ধর্মের কাউকে বিয়ে করা যাবে।
এর বিশেষ কয়েকটি নিয়ম আছে।
১) পুরুষের ক্ষেত্রে বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ এবং নারীর ১৮ বছর।
২) দুজনকে অবিবাহিত থাকতে হবে অন্তত ওই সময় জীবিত স্ত্রী বা স্বামী থাকলে বিয়ে গ্রাহ্য হবে না।
৩) সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো পরিণত হতে হবে।
৪) রক্তের সম্পর্ক থাকলে বিয়ে হবে না।
ভারতে পছন্দের মানুষকে বিয়ে করার অধিকার সংবিধানের অধীন প্রদত্ত। মেয়ের বয়স ১৮ বছরের কম এবং ছেলের বয়স ২১ বছরের নীচে হলে তারা ভারতে বিয়ে করতে পারবে না। নয়তো জাত-ধর্ম নির্বিশেষে তাঁরা একে অপরকে পছন্দ করতে পারেন। দিল্লি হাইকোর্ট এক রায়ে বলেছে, পতি বা পত্নী নির্বাচন মানুষের মৌলিক অধিকার। জীবনসঙ্গী বাছার ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ স্বাধীন।
সংবিধান ধর্ম বাছার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দেয়। ইচ্ছামতো ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া যায়। একটি গণতান্ত্রিক দেশে, স্বতন্ত্রভাবে পছন্দ অনুযায়ী মানুষকে বিয়ে করার অধিকার অবাধে পালন করা অপরিহার্য।