চিনের ভাইরোলোজিস্ট লি-মেং ইয়ান আগেই চিনের সরকারের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগে সরব হয়েছেন। এমনও অভিযোগ ছিল যে মুখ খোলার জন্য তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে চিনা প্রশাসন। এবার ব্রিটিশ টক শো তে এসে তিনি দাবি করেন রাসায়নিক উপায় উহানের ল্যাবেই কোরোনা ভাইরাসের জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে তৈরি করা হয়েছে সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেন। তার দাবি এর পেছনে হাত আছে চিনা সেনারও। তার সব কথার প্রমাণও আছে তার কাছে, এমনই দাবি করেন লি।
চিন থেকে পালিয়ে আসা একজন ভাইরোলজিস্ট দাবি করেছেন, তাঁর কাছে প্রমাণ রয়েছে যে সার্স-কোভ-২ ভাইরাস আসলে মানুষের তৈরি, ইউহানের এক ল্যাবে। আইটিভির এক অনুষ্ঠানে এই বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন ডাঃ লি-মেঙ্গ ইয়ান।
তিনি বর্ণনা করেছেন যে “তিনি একজন বিজ্ঞানী যিনি হংকং স্কুল অফ পাবলিক হেলথ-এ কাজ করার সময়ই চিনা সরকারের বিরুদ্ধে একজন হুইসেলব্লোয়ার হন। তাঁর অভিযোগ, চিনা সরকার প্রকাশ্যে মহামারীর বিষয়টা স্বীকার করার আগে থেকেই তাঁরা করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি জানেন।
ওই বিজ্ঞানী আরও বলেন, তাঁর নিজের সুরক্ষার জন্য তাঁকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যেতে হয়েছিল। এখন তিনি তাঁর অনুসন্ধান বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। ডাঃ লি বলেন যে হংকংয়ের জনস্বাস্থ্য বিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় তাঁর সহকারী তাঁকে ৩১ ডিসেম্বর প্রথমবার ইউহানের নতুন ‘সার্স-জাতীয়’ ভাইরাসের তদন্ত করতে বলেছিলেন – তবে তাঁর এই প্রচেষ্টা পরে থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
গত ১১ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ টক শো তে এসে তিনি বলেন গত বছর ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত দুটি বিষয় গবেষণা করেছিলেন তিনি। ১) চিনের কিছু প্রদেশে নতুন ধরনের নিউমোনিয়া সংক্রমন ২) অজানা ভাইরাসের প্রকোপ।
তিনি জানান গত ডিসেম্বরের আগেই সার্সের মতোই এক আরএনএ (রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) ভাইরাল স্ট্রেন অনেক মানুষকে সংক্রমিত করা শুরু করে।তিনি সরকারি আধিকারিক ও স্বাস্থ্য দফতরের বিজ্ঞানীদের জানান যে এই ভাইরাসের রিসেপটর বাইন্ডিং ডোমেন মানব দেহকোষের রিসেপটর প্রোটিনকে চিহ্নিত করতে পারে ফলে খুব দ্রুত এই ভাইরাসের সংক্রমন ছড়াতে পারে।কিন্তু তার কথা শোনেননি কেউই।
তিনি রিপোর্ট করেছিলেন, যে মামলাগুলি গুরুতরভাবে বাড়ছে বলে তাঁর মনে হয়। তবে তাঁকে বলা হয়েছিল চুপ থাকতে এবং সাবধানতা অবলম্বন করতে। প্রত্যুত্তরে তাকে এও বলা হয় যে ” আমরা সমস্যায় পড়ব এবং আমাদের অদৃশ্য করে দেওয়া হবে।” তিনি আরও বলেছেন যে তার কাছে প্রমাণ রয়েছে যে ভাইরাসটি ভিজে-খাবারের বাজার থেকে নয়, শহরের একটি ভাইরোলজি ল্যাব থেকে এসেছে। ইউটিউবে প্রকাশিত এক ভিডিওতে তিনি বলেছেন, “জিনোম সিকোয়েন্সটি হল মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্টের মতো। এর ভিত্তিতে আপনি এই জিনিসগুলি সনাক্ত করতে পারবেন।”
তিনি বলেন যে কিছু বিষয় তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, প্রথমত চিনের সরকার ভাইরাস সংক্রান্ত বিষয়টি লুকোতে চায়, দ্বিতীয়ত এই ভাইরাস সাধারণ কোরনা ভাইরাসের মতন নয়, এই ভাইরাসে হিউম্যান ট্রান্সমিশনের সব বৈশিষ্ট্য আছে।এই ভাইরাসের জিনের গঠন এমনই যে খুব দ্রুত বিভাজিত হতে পারে এই ভাইরাস।তিনি এও বলেন
CC45 ও ZXC41 করোনাভাইরাসের সাথে এই ভাইরাসের মিল থাকলেও তাকে রাসায়নিক উপায় আরও মিউট্যানট করে তোলা হয়েছে। তিনি এও বলেন চিনের মিলিটারি ইনস্টিটিউটে এই ভাইরাস নিয়ে গবেষনা চলেছে এবং পড়ে উহানের বায়োসেফটি লেভেল-৩ ল্যাবরেটরিতে এই ভাইরাসের জিনোম বদলানো হয়।
আরও পড়ুন : এশিয়ার বৃহত্তম ভাইরাস ব্যাঙ্ক চিনের কাছে কত ভাইরাস আছে জানেন
এই ভাইরাসকে মোকাবিলা করার উপায় খুঁজতে যখন তিনি গবেষণা শুরু করে তখন তার কাছে হুমকি ফোন আসতে শুরু করে এবং তার কম্পিউটার হ্যাক করা হয় বলেও অভিযোগ করেন লি।লি এর অভিযোগ, এটি যে নতুন রকম ভাইরাস তা চীন জেনেও হ্ন কে চিনের সরকারি আধিকারিকরা জানায় এটি ইনফ্লুয়েঞ্জার মতন ভাইরাস। এমনকি বিজ্ঞানীদের গবেষণা করতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ তার।