বড়ই অদ্ভুত এই পৃথ্বী। অজানাকে জানার অনেক জিনিস রয়েছে বিশ্বব্রহ্মান্ডে। কিন্তু সব কিছু জানাটাও আমাদের পক্ষে সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। বিশ্বের এমন কয়েকটি জিনিস আছে যার হদিশ দিতে পারেননি বিশ্বের গুণীজনেরাও। তেমনই চিনের পাতাল গ্রাম। অনেকদিন আগে মাটির নীচে বাড়ির কথা শোনা সেগুলো ইতিহাসেরই সাক্ষ্যপ্রমান রেখে গেছে। তেমনি চিনের পাতাল গ্রামের কথা হয়তো কেউ শোনেননি। শুনতে অবাক লাগলেও এমনই একটি গ্রাম রয়েছে এই বিশ্ব-ব্রহ্মান্ডে।
আমরা মাটির নিচে দুএকটা বাড়ি করি বা বাঙ্কার খুঁড়ে বসবাসের কথা শুনেছি। কিন্তু পুরো গ্রামের মানুষ প্রায় ২শ বছর ধরে মাটির নীচে বাড়ি করে সেখানে বসবাস করছে এটা কিন্তু আশ্চর্য হওয়ার মতোই ঘটনা।
ড্রোন ফুটেজে ধরা পড়ল চীনের এক রহস্যময় গ্রাম। যেখানে সব বাড়িই রয়েছে মাটির তলায়। প্রায় ২০০ বছর ধরে ওই বাসিন্দারা মাটির তলাতেই বাড়ি তৈরি করে থাকে।
কয়েক হাজার বছর আগেই বাড়িগুলি তৈরি হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। গ্রামটির জনপ্রিয়তা এতটাই বেড়েছে যে প্রতিদিনই শয়ে শয়ে পর্যটক সেখানে যাচ্ছেন। সত্যিই তো পাতাল রেল বা পাতাল বাড়ি তো দেখেছি। কিন্তু মাটির নীচে এধরনের গ্রামের জীবনযাত্রা কার না ভালো লাগে?
সম্পূর্ণ মাটির নিচে অবস্থিত এই রহস্যময় অদ্ভুত গ্রামটি চীনের হেনান প্রদেশের সানমেনশিয়ায় অবস্থিত। এখানকার ঘরগুলোকে ‘ইয়ায়োডং’ বলা হয়। এই চিনা শব্দের অর্থ হলো ‘গুহার ঘর’।
চারিদিক জনমানব শূন্য। স্থানে স্থানে গুহা। সেই গুহাগুলি থেকে নেমে গিয়েছে সুড়ঙ্গের মতো সিঁড়ি। সেই সিঁড়ি চলে গিয়েছে গভীরে। সিঁড়ি ধরে নীচে নামলেই রূপকথা! অত্যাধুনিক বাসস্থান। উচ্চপ্রযুক্তির সরঞ্জাম।
ঘরগুলো মাটি থেকে ২২-২৩ ফুট গভীর তৈরি। এগুলি লম্বায় ৩৩ থেকে ৩৯ ফুট পর্যন্ত হয়। মাটির তলায় এই ঘরগুলির তাপমাত্রা শীতকালে ১০ ডিগ্রী ও গ্রীষ্মে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকে না।
ইতিহাসবিদদের মতে, ‘হেনান প্রদেশের এই ঘরগুলো ২০০ বছর আগে তৈরি হলেও ব্রোঞ্জ যুগে চিনের পার্বত্য এলাকায় ৪০০০ বছর আগে এ ধরণের বাড়ি তৈরি হতো।
এই অজানা গ্রামটিতে প্রায় দুশো বছর ধরে বংশ পরম্পরায় বাস করছেন অনেক পরিবারই। এখন সেখানে জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজারেরও বেশি।
আরও পড়ুন : বউ-এর জ্বালায় জঙ্গলে দশ বছর কাটালেন ইনি
চিনের হেনান প্রদেশে কাছে অবস্থিত পাতাল গ্রামটি। সেখানে রয়েছে চারকোনা ঘর, শৌচালয়, জল সরবরাহের নালা, নর্দমা, কুয়ো এবং আরো কতকি। এমনকি বিদ্যুতের ব্যবস্থাও রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে মানুষের জীবিকা নির্বাহের জন্য বন্দোবস্তও।
বর্তমানে চীনের এই গ্রামটিতে বিদ্যুতের সকল সুযোগ সুবিধাসহ সব আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ‘ভূমিকম্পেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না এই ঘরগুলো। ২০১১ সাল থেকে সরকার এই গ্রামটিকে সংরক্ষণ করছে।
আরও পড়ুন : সুইসাইড ফরেস্ট -এই জঙ্গলে বছরে ১০০জন আত্মহত্যা করেন ; কিন্তু কেন ?
সম্প্রতি এই ঘরগুলো পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, নির্ধারিত খরচে গ্রামটির ঘড় ভাড়া বা ক্রয়ও করতে পারে যে কেউ। একমাসের জন্য এখানকার একটি ঘর ভাড়া পাওয়া যায় মাত্র ২ ইউরোতে। আর ৩২ হাজার ইউরোতে কেনা যাবে এই ঘরগুলো।
অন্তত ছয়টি প্রজন্ম এ রকম বাড়িতে বসবাস করেছে বলে জানা যায়। চারকোনা বাড়িগুলো রয়েছে মাটির তলায়। ওই এলাকার তাপমাত্রা শীতকালে থাকে ১০ ডিগ্রি আর গরমে ২০ ডিগ্রি। চীনের পার্বত্য এলাকায় ৪০০০ বছর আগে থেকে এ ধরনের বাড়ি তৈরি হতো বলে জানা যায়।