ভালবাসা কখনো জাতি বা ধর্ম দেখে হয় না। আর গল্পটা যদি হয় বলিউডের তাহলে তো কথায় নেই। বলিউডে অনেক এমন সেলিব্রিটি আছেন যারা অন্য জাতি তে বিয়ে করেছেন। তারা বিয়ে করার সময় কোনো জাতি ধর্ম দেখেননি। আমাদের দেশে এখনো অন্য ধর্মে বিয়ে করাটা কে ভালো চোখে দেখা হয় না। তাও আবার বিয়েটা যদি হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে হয় তাহলে তো কথায় নেই। হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে বিয়ে চিরকালই সমস্যার। আগেকার দিনে অনেক প্রেমিক প্রেমিকা তাদের ভালোবাসা নিজের মনের মধ্যে পুষে রেখে দিত কারণ তারা জানত একজন মুসলিমের সাথে বিয়ে হওয়া কখনই সম্ভব নয়। কিন্তু বলিউডে এসব নিয়ে বরাবরই মাতামাতি একটু কম। বলিউডে এমন অনেকে আছেন যারা নিজে মুসলিম হয়ে কোনো হিন্দুকে বিয়ে করেছেন। এই সমস্ত সেলিব্রিটিরা প্রমান করে দিয়েছেন যে জাতিভেদ প্রথা কিছুই হয় না ভালোবাসার সামনে।
নার্গিস-সুনীল দত্ত
সিনেমায় অভিনয় করতে করতে একে অপরের প্রতি ভালোবাসার কথা তো অনেক শুনেছেন। কিন্তু ‘মাদার ইন্ডিয়া’র মতন সিনেমায় মা এর রোলে নার্গিস এবং ছেলের রোলে সুনীল দত্ত অভিনয় করেছিলেন। তা সত্বেও তারা একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হন। আসলে এই সিনেমার শ্যুটিং চলাকালীন একটি বীভৎস আগুনে সুনীল দত্ত নার্গিসকে বাঁচিছিলেন এবং তার ফলে এনাদের একে অপরের মন এক হয়ে যায়। আর তারা বিয়েও করেন কিন্তু এই বিয়েকে সমাজ অনেক পরে স্বীকার করেছিল।
সঞ্জয় দত্ত-দিলনাওয়াজ শেখ
ইটা অনেকেই জানেন না যে মান্যতার আগের নাম দিলনাওয়াজ শেখ ছিল। সঞ্জয় দত্ত নিজের বাবার মতই একজন মুসলিমের প্রেমে পড়েছিলেন। মান্যতা সঞ্জয়ের থেকে কুড়ি বছরের ছোট। ২০০৮ এ তারা একে অপরের সাথে বিবাহ বন্ধনে জরিত হন।

দিয়া মির্জা-সাহিল সংঘা
বলিউডের মিষ্টি অভিনেত্রী দিয়া মির্জা এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা সাহিল সংঘা অক্টোবর ২০১৪ সালে বিয়ে করেছিলেন। এমনিতেই সাহিল দিয়াকে ২০০৯ থেকেই জানত। কিন্তু ২০১৪ সালে তিনি দিয়াকে প্রপোজ করেন। এই প্রপোজালটাও খুব মজাদার ছিল। সাহিল নিউ ইয়র্কের ব্রিজে নিজের হাঁটু গেড়ে বসে দিয়া কে প্রপোজ করেছিল। আর দিয়া যখন বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলেছিল তখন সেখানকার আশপাশের সমস্ত পর্যটকরা করতালি বাজিয়েছিল।

সুনীল শেট্টি-মানা শেট্টি
সুনীল শেট্টি এবং মানা শেট্টির লাভ স্টোরি খুব রোমাঞ্চকর। একটি পার্টিতে তাদের আলাপ। কিন্তু তাদের প্রথম নজরেই একে অপরের প্রতি ভালোবাসা হয়নি। এই ভালোবাসা দিনের পর দিন বন্ধুত্বের সাথে বেড়েছে। কিন্তু এরা কোনোদিনই ধর্মকে নিজেদের মাঝে আসতে দেয়নি। তবে তাদের অভিভাবকদের মন জয় করতে ৯ বছর লেগেছিল।

মনোজ বাজপেয়ি-শাবানা রাজ
বলিউডের খুব জনপ্রিয় অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ি অভিনেত্রী শাবানা রাজকে ২০০৩ সালে বিয়ে করেন। তারা কোনোদিন নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনকে ক্যামেরার সামনে আসতে দেননি। তারা একে অপরের সাথে পাঁচ বছর ধরে প্রেম করেন, কিন্তু তার খবর কেউ পায়নি আগে।

বহীদা রহমান-কমলজিৎ সিং
অভিনেতা কলমজিৎ সবুজ সিনেমা চলাকালীন বহীদা রহমানের প্রেমে পড়ে যান কিন্তু তখন বহীদা গুরু দত্ত কে ভালোবাসতেন। যাইহোক, সিনেমার ১০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর তারা একে অপরের সাথে বিয়ে করেন। বলিউডে হিন্দু-মুসলিম অনেক আছে এবং তারা একে অপরের সাথে খুব ভালোভাবেই সংসার করছেন। তারা সমাজের সত্যিই একটি দৃষ্টান্ত।
ফারাহ খান-শিরীষ কুন্দর
ফারাহ আর শিরীষের প্রেমের গল্প তো মে হুনা চলাকালীন শুরু হয়েছিল। এরা একে অপরের সাথে প্রেম করছেন এই খবরটি কোনদিনই জানা যায়নি। কিন্তু সবাই তখন অবাক হয়ে গিয়েছিল যখন তারা নিজেদের বিয়ের ঘোষণা সবার সামনে করেন।

অতুল অগ্নিহোত্রী-আলবিরা খান
প্রযোজক পরিচালক-অভিনেতা অতুল অগ্নিহোত্রী এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক, ফ্যাশন ডিজাইনার আলবিরার প্রেমের গল্প বন্ধুত্ব থেকেই শুরু হয়। এনাদের একে অপরের সাথে একটি শুটিংয়ের সময় আলাপ হয়। কথা বলতে বলতেই এনাদের মধ্যে প্রেম হয়ে যায়। পরে তারা একে অপরের সাথেই বিয়ে করেন। আপনাকে বলে রাখি যে আলবিরা সুপারস্টার সালমান খানের বোন।

আদিত্য পাঞ্চোলি-জরিনা বহাব
আদিত্য পাঞ্চোলি বলিউডের এমন একজন ভিলেন যে নিজের ব্যক্তিগত জীবনেও অনেকবারই বিভিন্ন বিবাদে পড়েছেন। আদিত্য পাঞ্চোলি এবং জারিনার ভালোবাসা শুরু হয় ১৯৮৬ সালের ‘কালং কাছে টিকা’ নামের সিনেমা থেকে। তারা তাড়াতাড়ি বিয়ে করেও নেন। পাঞ্চোলির নাম প্রায়ই কোনও মডেল বা অভিনেত্রীর সাথে জড়িত থাকতে দেখা গেছে, কিন্তু জরিনা কোনদিনই তাদের বিবাহ সম্পর্কে সেগুলোর আগুন আসতে দেয়নি। ২০১৫ তে এনাদের বিবাহ বিচ্ছেদের কথা মিডিয়াতে এসেছিল, কিন্তু জারিনা নিজের সম্পর্ককে খুব দৃঢ় ভাবে ধরে রেখেছেন।

রাজ বব্বর-নাদিরা বব্বর
রাজ এবং নাদিরারো লাভ ম্যারেজ ছিল। কিন্তু বিয়ের পরও এনাদের জীবনে অনেক ওঠাপড়া এসেছিল। রাজ এবং নাদিরা থিয়েটারের সময় থেকে একে অপরকে ভালোবাসতো এবং তারা বিয়েও করে নিয়েছিল। কিন্তু রাজ সিনেমায় নামার পর একজন সফল অভিনেতা হওয়ার পর স্মিতা পাটেলের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং তাকে বিয়ে করেন। এতে নাদিরা খুবই দুঃখিত হয়েছিল কিন্তু তা সত্বেও তিনি তার স্বামীকে ছাড়েননি। স্মিতা তাঁর প্রথম ছেলে প্রতীক বব্বরকে জন্ম দেয়ার পরই মারা যান, পরে রাজ তার প্রথম স্ত্রীর কাছে ফিরে যায়।