সাফল্যের হার দিয়ে অভিজ্ঞতা বিচার হয় উকিলের। আর অভিজ্ঞতা বিচার করে ধার্য হয় উকিলের পারিশ্রমিক। যে উকিল যত বেশী মামলা জিতেছে সেই উকিলের ফি তত বেশী।
এমনিতেই ভারতে ন্যায়বিচারের খোঁজ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সময়ও লাগে অনেক। ভালো উকিল ধরতেই অর্ধেক পকেট খালি। মিথ্যেকে সত্যি প্রমাণেই উকিলের মুন্সিয়ানা। মিথ্যের ভাগ যত বেশী তত বেশী টাকা নিয়ে উকিল সাফল্য এনে দেবে ক্লায়েন্টকে। এখানে আমরা সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া দেশের ১০ উকিলের তালিকা তৈরি করেছি।
১০) অশোক দেশাই
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অশোক দেশাই। ১৯৮৯ এবনহ ১৯৯০ এবং ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত যথাক্রমে ভারতের সলিসিটর জেনারেল এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছেন। পদ্মভূষণে সম্মানিত এই আইনজীবী পারিশ্রমিক নেন ২ লক্ষ টাকা।
৯) আর এফ নরিম্যান
হার্ভাড থেকে আইনে স্নাতক। ৪৫ বছরের বাধ্যতামূলক বয়সের পরিবর্তে ৩৭ বছর বয়সেই সুপ্রীম কোর্টে সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে নিয়োগ হয়েছিলেন। ভারতের ভারপ্রাপ্ত সলিসিটর জেনারেল ছাড়াও সিনিয়র পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করেছেন। আদালতে একবার দাঁড়ানোর জন্য মক্কেলের থেকে ২ লক্ষ টাকার বেশি পারিশ্রমিক নেন নরিম্যান।
৮) কে কে বেনুগোপাল
সুপ্রিম কোর্টের বরিষ্ঠ আইনজীবী। পদ্মভূষণ এবং পদ্মবিভূষণ সম্মানে সম্মানিত। ভুটানের সংবিধানের খসড়া চূড়ান্ত করার সময় ভারত বেনুগোপালকে পরামর্শদাতা হিসাবে নিয়োগ করেছিল। রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকারের হয়ে অনেক মামলা লড়েছেন। আদালতে উপস্থিত হতে ৩ লাখ টাকার বেশী পারিশ্রমিক নেন বেণুগোপাল।
৭) মুকুল রোহতগী
এই মুহূর্তে দেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছেন। একসময় অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেলের দায়িত্ব সামলেছেন। ২০০২ সালের গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং ভুয়ো এনকাউন্টার মামলায় গুজরাটের হয়ে লড়েছিলেন মুকুল। জনপ্রিয় বেস্ট বেকারি মামলাতেও সরকারি আইনজীবী ভূমিকায় ছিলেন। প্রতি শুনানিতে ৫ লাখ টাকা পারিশ্রমিক রোহতগীর।
আরো পড়ুন : ভারতের ৮টি মজাদার আইন যেগুলি শুধু হাস্যকর নয় রীতিমতো অর্থহীন
৬) অভিষেক সিঙ্ঘভি
মাত্র ৩৭ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ হিসাবে দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ছিলেন। জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য সিঙ্ঘভি রাজ্যসভায় রাজস্থান কংগ্রেসের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁর পারিশ্রমিক ৬ লক্ষ টাকা।
আরো পড়ুন : ভারতের সবথেকে নিরাপদ ১০টি শহর
৫) কে পরাশরণ
ইন্দিরা গান্ধীর আমলে তামিলনাড়ুর অ্যাডভোকেট জেনারেল এবং রাজীব গান্ধীর আমলে দেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব সামলেছেন। ২০০৩ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০১১ সালে পদ্মভূবিষণে সম্মানিত করা হয় পরাশরণকে। আইন বিষয়ে প্রাজ্ঞ হিসাবে গণ্য করা হয় তাঁকে। প্রতি শুনানিতে ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নেন।
আরো পড়ুন : ১৫০ টাকার মজুরিতে খেটে, আজ WBCS A গ্রেড অফিসার
৪) সোলি সোরাবজি
১৯৭৭ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সলিসিটর জেনারেলের পদে ছিলেন। সোরাবজি একইসঙ্গে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের সহ-সভাপতি এবং ইউনাইটেড আইনজীবী সমিতির সভাপতি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান এবং সংখ্যালঘু অধিকার গ্রুপের আহ্বায়ক। অর্ডার অফ অস্ট্রেলিয়ার সম্মানিত সদস্য। ২০০২ সালে পদ্মভূবিষণ উপাধিতে ভূষিত হন। সাফল্যের হার ৮০ শতাংশ।
১.২৫ থেকে ২ লাখ টাকা দিয়ে শুধু অ্যাডমিশন করাতে হয়। একবার আদালতে দাড়াবার জন্য নেন ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা।
আরো পড়ুন : আইপিএলে যেভাবে আয় করে টিম মালিকেরা
৩) ফালি এস নরিম্যান
সংবিধানে গভীর জ্ঞান। ধারালো প্রশ্ন এবং দৃঢ় আর্গুমেন্ট উপস্থাপনের জন্য বিখ্যাত ফালি এস নরিম্যান এই ৮৭ বছর বয়সেও সমান কর্মক্ষম। ১৯৯১ থেকে সুপ্রিম কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সর্বোচ্চ পদে আছেন। পদ্মভূষণ,পদ্মভূবিষণ ছাড়াও ন্যায়ক্ষেত্রে গ্রুবার পুরস্কার পেয়েছেন। একদিনের পারিশ্রমিক হিসাবে নেন ২৫ লাখ টাকা। একবার শুনানির জন্য দিতে হয় ৮ থেকে ১৫ লাখ টাকা।
২) হরিশ সালভে
মক্কেলের তালিকায় আছে রিলায়েন্স, আইটিসি লিমিটেড, ভোডাফোন, টাটা গ্রুপের মতো বড় নাম। ১৯৯৩ থেকে ২০০২ পর্যন্ত দেশের সলিসিটর জেনারেল পদে ছিলেন। বিশ্বের সেরা ১০ আইনজীবীর তালিকায় আছে সালভের নাম। দেশের শক্তিশালী ব্যক্তি তালিকায় তাঁর স্থান ১৮ নাম্বারে। প্রতি শুনানির জন্য সালভেকে দিতে হয় ১৫ লক্ষ টাকা। একদিনের পারিশ্রমিক হিসাবে নেন ৩০ লাখ।
আরো পড়ুন : বিশ্বের বিখ্যাত ৯ রাষ্ট্রনেতার বেতন ও অন্যান্য সুবিধা
১) রাম জেঠমালানি
আইনের দুনিয়ায় রাম জেঠমালানি বড় নাম। বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন। এনডিএ জামানায় আটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর পদে ছিলেন। প্রতি শুনানিতে উপস্থিত থাকতে ২৫ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নেন। ভারতে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া আইনজীবীর তালিকায় প্রত্ম জেঠমালানি।
এই তালিকা থেকে বোঝা যায় ন্যায়বিচার পেতে কী পরিমাণ টাকা খরচ করতে হয় সাধারণ জনগণকে!
আমাদের প্রতিটি পোস্ট WhatsApp-এ সুনিশ্চিত করতে ⇒ এখানে ক্লিক করুন