রবীন্দ্র সঙ্গীতে ‘কন্যাদানহীন’ বিয়ে দেন মহিলা পুরোহিত নন্দিনী

ফুল, মালা, রজনীগন্ধা। নারীকন্ঠে উচ্চারণ, ‘যদিদং হৃদয়ং তব…’ তারপর ইংরেজি অনুবাদ। কী মন্ত্র এটা? কেন পড়লেন, বুঝিয়ে দিচ্ছেন তাও। পেছনে একদঙ্গল মেয়ে গাইছে, ‘প্রাণ চায় চক্ষু না চায়…’ এভাবেই নতুন জীবনের গাঁটছড়া বেঁধে দিচ্ছেন এক নারী। কন্যাদান নেই, কনকাঞ্জলি নেই, আছে মর্যাদার সঙ্গে মিলতে চাওয়া। সেটাতেই প্রাণের পরশ বুলিয়ে দিচ্ছেন রাজ্যের প্রথম মহিলা পুরোহিত নন্দিনী ভৌমিক। রবীন্দ্র সঙ্গীতে ‘কন্যাদানহীন’ বিয়ে দেন মহিলা পুরোহিত নন্দিনী

Photo : Your Story

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতের অধ্যাপিকা নন্দিনী। পুরুষশাসিত সমাজের কাছে তিনি চ্যালেঞ্জ। এতদিনের চলে আসা প্রথা ভেঙে তিনি তৈরি করছেন নতুন রীতি। বলা হয় ঋক বেদে যে বিবাহসূত্র আছে সেই মন্ত্র রচনা করেছিলেন কোনও পুরুষ নয়। বরং সূর্যা নামে এক নারী। অথচ কালের নিয়মে এখন পৌরহিত্যে ব্রাত্য মহিলারা। এই প্রথাকে ভাঙতেই এগিয়ে এসেছেন নন্দিতা। সঙ্গে ‘কন্যাদান’, কঙ্কাঙজলি-র মতো প্রথাকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে চান তিনি।

Photo : Indian Express

চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি নতুন জীবন শুরু করলেন অন্বিতা জনার্দন এবং অর্ক ভট্টাচার্য। তাঁদের চারহাত এক করতে পুরোহিতের আসনে বসেন নন্দিনী। বিয়ের সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণ বাংলা বা ইংরেজিতে অনুবাদ করে বলেন তিনি। তাঁর বলা সেই মন্ত্র উচ্চারণ করে বিয়ের পিড়িতে বসা বর-কনে। পিছনে রবীন্দ্র সঙ্গীত গায় তাঁর গানের দল। বিয়ে দিতে সময় লাগে মাত্র এক ঘণ্টা। কারণ, তিনি কন্যাদান প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে দিয়েছেন। নন্দিনীর কথায়, ‘আমি কন্যাদানের মতো সমাজের পিছিয়ে থাকা নিয়ম মানতে চায় না। ওই নিয়ম মেনে চলার অর্থ মেয়েদের পণ্য হিসেবে তুলে ধরা।’

Photo : Indian Express

নিজেকে সংস্কারক বলে দাবি করেন দুই কন্যার জননী নন্দিনী ভৌমিক। যদিও প্রথাগত ব্রাহ্মণ বা চিরাচরিত হিন্দু ধর্ম নিয়ে তাঁর কোনও সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন। নন্দিনী দেবী। তিনি বলেন, ‘আমি প্রথাগত ব্রাহ্মণদের বা হিন্দু ধর্মকে সম্মান করি। তাঁদের সঙ্গে আমার কোনও বিরোধ নেই। যদিও বর্তমানে উগ্রবাদী হিন্দুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় আমার স্বামীকে অনেকে হুমকি দিয়েছে। কিন্তু, এখনও আমায় কেউ কোনও হুমকি দেয়নি।’

গত দশ বছরে কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৪০টি বিয়ে দিয়েছেন নন্দিনী। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভিন্ন ধর্ম বা ভিন্ন জাতের পাত্র-পাত্রীদের চার হাত এক করেছেন তিনি। পুরোহিত হিসেবে নিজের মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন। এতদিনের চলে আসা প্রথা ভেঙে নতুন রীতি যে একটু একটু করে নবীন প্রজন্ম গ্রহণ করছে তাতেই খুশী নন্দিনী। তরুণ-তরুণীদের থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও অনেকে যোগাযোগ করছে তাঁর সঙ্গে।

নন্দিনীকে সমর্থণ করছেন অনেক শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতও। ঋক-বৈদিক যুগে পুরুষদের পাশাপাশি সমান তালে পৌরহিত্য করেছেন গার্গী, অপালা, মৈত্রেয়ী, লোপামুদ্রার মতো বিদুষীরা। তাঁদেরই যোগ্য উত্তরসূরি নন্দিনী।