সুশান্ত সিং রাজপুত মৃত্যু কাণ্ডের তদন্ত ভার বর্তমানে সিবিআই কে দেওয়া হয়েছে এবং গত শনিবার সুশান্তের ঘনিষ্ট ব্যাক্তিদের জেরাও করে সিবিআই। শুক্রবার আবার চার প্রত্যক্ষ দর্শিকে জিজ্ঞেস করে সিবিআই। এদের মধ্যে ছিলেন বন্ধু সিদ্ধার্থ পিঠানি, পরিচারক নীরজ ও দীপেশ সাওয়ান্ত এবং পাচক কেশব।
সুশান্তের মৃতদেহ পাওয়ার আগে কি কি ঘটনা ঘটেছে সেই বিষয় চলেছে জিজ্ঞাসাবাদ। তদন্তকারী অফিসারদের মতে এই চারজন সুশান্তকে মৃত অবস্থায় দেখেন।চারজনের বয়ানেই একটা কথা জানা যায় যে মৃত্যুর আগে অর্থাৎ ১৩ জুন রাতে অধিকাংশ সময়ই নিজের ঘরেই ছিলেন সুশান্ত। দেখে নেওয়া যাক তারা কে আর কি কি বলেছেন।
সুশান্তের পরিচারক দীপেশ সাওয়ান্ত : তিনি জানান ১৩ জুন নিজের ঘর থেকে বাইরে বেরোননি সুশান্ত এমনকি খাবারও খাননি। সিবিআইকে তিনি বলেন যে, তিনি সুশান্তকে খাবারের জন্য ডাকতে গেলে তিনি বলেন যে তিনি কিছু খাবেন না এমন তাদের খেয়ে শুয়ে পড়তে বলেন। তিনি সেদিন রাতে শুধুমাত্র ম্যাংগো শেক চেয়েছিলেন
তিনি আরও জানান যে সেদিন রাতে সাড়ে ১০ টা নাগাদ তিনি নিজের খাবার খেয়ে সিনেমা দেখতে বসেছিলেন এবং তখন সুশান্ত কিছু খাবেন নাকি তা জিজ্ঞেস করার জন্য তাকে ফোন করেছিলেন কিন্তু ফোন তোলেননি সুশান্ত।
তার কথায় তিনি ভেবেছিলেন সুশান্ত ঘুমিয়ে পড়েছে তাই তিনি বিরক্ত করেননি এবং সকালে তিনিই প্রথম সাড়ে পাঁচটার সময় সুশান্তের ঘরে যান। ঘরে গিয়ে তিনি দেখেন সুশান্ত আগেই উঠে খাটের ওপর বসে ছিলেন এবং ঘরের দরজাও খোলা ছিল। তিনি সুশান্তকে চায়ের কথা জিজ্ঞেস করায় বারণ করে দেন সুশান্ত। দিপেশের কথায় সুশান্তের আচরণে কোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষ করেননি তিনি।
সিবিআই অফিসাররা জানিয়েছেন, বয়ানে চারজনই জানিয়েছেন, মৃত্যুর আগের দিন অর্থাৎ ১৩ জুন রাতে বেশিরভাগ সময়টাই নিজের ঘরে ছিলেন অভিনেতা। পরিচারক দীপেশ সাওয়ান্তের বক্তব্য, ১৩ জুন রাতে নিজের ঘর থেকে বাইরে বের হননি সুশান্ত। রাতের খাবার দিতেও বারণ করেছিলেন। শুধু এক গ্লাস ম্যাঙ্গো শেক চেয়েছিলেন তার কাছে।
পরিচারক নীরজ ও দীপেশ সাওয়ান্ত : তাদের কথায়,সকাল ৭ টা নাগাদ তাদের ঘুম ভাঙ্গে এবং সকাল ৮ টা কি তার পর পর সুশান্ত নীচে নেমে এসে ঠান্ডা জল চান। তারপরে সকাল ৯ টা নাগাদ কেশব ডালিম জুস এবং নারকেলের জল নিয়ে সুশান্তের ঘরে যান এবং সেটাই সুশান্তের সাথে শেষ দেখা ছিল তার।
কেশবের কথায় দুপুরে তাকে খাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করতে গেলে তিনি দেখেন সুশান্তের ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। তিনি এও বলেন যে এর আগে এমন কখনও হয়নি। কেশব জানায় সুশান্তের সবথেকে কাছের বন্ধু ছিলেন সিদ্ধার্থ পাঠানি। রিয়া ফ্ল্যাটে না থাকলে সিদ্ধার্থ সুশান্তের ঘরের উল্টোদিকের ঘরেই থাকতেন। সিদ্ধার্থ সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ তাদের জানান যে সুশান্ত ঘরের দরজা বন্ধ করে আছে। তবে চিন্তা হলেও তারা তখন ভেবেছিলেন রাত জাগার কারণেই দরজা বন্ধ করে ছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন :- আত্মহত্যা নয়, সুশান্তের মৃত্যুতে উঠে আসছে যে ১০টি প্রশ্ন
বন্ধু সিদ্ধার্থ পিঠানি : তার কথায় সেই সময় সুশান্তের দিদি মিতুর ফোন আসে এবং তিনি তাদের দরজা ধাক্কাতে বলেন। বারবার দরজায় ধাক্কা দিয়েও কোনো সাড়া না মেলায় বেলা ১১ টা নাগাদ সুশান্তের ঘরের ডুপ্লিকেট চাবি খোঁজা শুরু হলো। চাবির খোঁজে সুশান্ত এর ম্যানেজার স্যামুয়েল মিরান্ডাকেও ফোন করা হয়। ঘণ্টা খানেক পর গুগল থেকে দরজার লক খোলার লোক ডেকে অনা হয় যিনি দরজার লক তৈরি করেন।
তিনি সেই লক ভাঙতে দু হাজার টাকা চান।লক খুলে যাওয়ার পর টাকা দিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়ার পড়ে ডিপেশ এবং সিদ্ধার্থ ঘরে ঢুকে আলো জ্বালিয়ে দেখেন গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছেন সুশান্ত!তার কথায় সুশান্তের দিদি মিতুকে প্রথম খুন করা হয় এবং তারপর ডাক্তার ও অ্যাম্বুল্যান্সে খবর দেন।তবে তখনও পর্যন্ত বলা হয়নি যে ব্যাক্তি সুশান্ত সিং রাজপুত।
আরও পড়ুন :- সুশান্তের মৃত্যুকাণ্ডে নতুন মোড়, রিয়ার বিরুদ্ধে উঠে আসছে এই ১৬টি প্রশ্ন
চারজন এও জানান যে তখন তারা সুশান্তের বড় দিদিকে ফোন করেন এবং সুশান্তের জামাইবাবু ফোন তুলে তাদের পরীক্ষা করতে বলেন সুশান্তের শ্বাস চলছে নাকি তবে চারজনই বলেন ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে এবং দেহ নিথর হয়ে গিয়েছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক্তার এসে তাকে মৃত ঘোষণা করে।