বাবা স্বপ্ন দেখেছিলেন মেয়েকে ক্রিকেটার বানাবেন। আর সেই স্বপ্ন সফল করার জন্য নিজের শেষ সম্বল বিক্রি করে তৈরি করে দিয়েছিলেন ক্রিকেট মাঠ। আশা ছিল, তাঁর কষ্টার্জিত পরিশ্রমের টাকায় তৈরি মাঠে অনুশীলন করে একদিন জাতীয় দলে ঠিকই সুযোগ পাবে মেয়ে। হতাশ করেননি ২২ বছরের তরুণী।
এখন তাকে একনামে সবাই চেনেন। ক্রিকেট মহলে পুরো বিশ্বজুড়ে রয়েছেন তার ভক্তরা। তার জীবনের কিছু কথা জেনে নাওয়া যাক। বাবা সুরেন্দ্র পুনিয়া ছিলেন ভারতীয় সার্ভে ডিপার্টমেন্টে হেড ক্লার্ক। অন্যদিকে মা সাধারণ গৃহবধূ যার জীবন ছিল তার সংসার এবং ছেলে মেয়ে নিয়েই। এইখান থেকেই তিনি এখন বিশ্ব মহিলা ক্রিকেট বোলার দের ত্রাস হয়ে উঠেছেন।তবে কি ছোট থেকেই এই স্বপ্ন নিয়েই বড় হন তিনি? ছোট থেকেই কি চাইতেন ২২ গজ দাপিয়ে বেড়াতে?
না, ছোটবেলায় প্রিয়ার বাবা সুরেন্দ্র চেয়েছিলেন মেয়ে ব্যাডমিন্টন খেলুক। কিন্তু একটু বড় হতেই তিনি বুঝতে পারেন প্রিয়ার ব্যাডমিন্টনে কোনও আগ্রহ নেই, তাঁর ধ্যানজ্ঞান সব ক্রিকেট। তারপর বয়স যখন ৯, তখনই তিনি ভর্তি হন রাজস্থানের সুরানা অ্যাকাডেমিতে। তখন বাবা সদ্য বদলি হয়ে আসেন জয়পুর। তিনিই প্রথম লক্ষ্য করেন মেয়ের মধ্যে সুপ্ত ক্রিকেট আগ্রহকে। তারপরই মেয়েকে ক্রিকেট শেখানোর কথা স্থির করেন তিনি। কিন্তু সমাজের কিছু বস্তাপচা ধারণার জন্য এই স্বপ্ন নিয়েই অনেক হেনস্থা হতে হয় তাকে।তার কোচ তাকে দেখে ব্যঙ্গ করে বলে, “মেয়ে হয়ে ক্রিকেটের স্বপ্ন?!”
সমাজের থেকে এমন বিদ্রূপ যেন আশানুরূপ। কিন্তু এই কথায় ভেঙে না পড়ে আরও জেদ চেপে যায় প্রিয়ার। তার বাবাও ঠিক করে নেন উত্তর দিতেই হবে এই কথার। তিনি নিজেও চাইতেন ক্রিকেট খেলতে কিন্তু পরিস্থিতির জন্য পারেননি। মেয়েকে নিজেই প্রশিক্ষন দাওয়া শুরু করলেন তিনি। মেয়েকে যোগ্য করে তোলার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নিজেই ২২ লাখ টাকা দিয়ে কিনে ফেললেন একটি আস্ত দেড় বিঘা জমি।
মেয়ের ওপর বাবার এই দৃঢ় বিশ্বাস সত্যিই ছিল অসামান্য, এবং তার যথার্থ ফল দিয়েছে প্রিয়া। সেই জমিতেই তৈরি হয় তার ক্রিকেট পিচ যা তৈরির জন্য ১৫ হাজার টাকা খরচ করেন তার বাবা। এখান থেকেই শুরু তার ক্রিকেট জীবনের পথ।তারপর পরবর্তী জীবনে রাজস্থান ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন তিনি।পরবর্তী জীবনের প্রশিক্ষন সম্পন্ন হয় রাজকুমার শর্মার কাছে যিনি একসময় বিরাট কোহলিকে প্রশিক্ষন দিয়েছিলেন। অন্যদিকে ২৪ বছর বয়সে দিল্লির জেসাস অ্যান্ড মেরি কলেজ থেকে পড়াশোনাও শেষ করেন তিনি।
আরও পড়ুন :- ক্রিকেটের এই ১০টি রেকর্ড কোনদিন কারোর পক্ষে ভাঙা সম্ভব নয়
তার প্রথম ঘরোয়া ক্রিকেট ম্যাচ ছিল ২০১৬ সালে বেঙ্গালুরুতে, সেখানে হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে দিল্লি মহিলা দলের হয়ে খেলেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার আগমন অনেক পরে হলেও তার অনেক আগেই বিসিসিআইয়ের উচ্চ পদস্থ কর্তারা তাকে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কারোর সুপারিশে নয় বরং নিজের যোগ্যতায় স্থান করে নেবেন জাতীয় দলে, সেই কারণেই তিনি ফিরিয়ে দেন সেই প্রস্তাব।
আরও পড়ুন :- ৩ ভারতীয় ক্রিকেটার যাদের নামে গিনিস রেকর্ড আছে
কিন্তু বেশীদিন অপেক্ষা করতে হয় না তাকে, ২০১৮ সালেই জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে পেরেছেন তিনি। ২০১৯ সালে ওম্যান’স ইন্টারন্যাশনাল স্কোয়াডেও জায়গা করে নেন তিনি। দিনটা হলো ৬ই ফেব্রুয়ারি। প্রথম খেলা নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-২০ ম্যাচ। তারপর একদিনের ক্রিকেট প্রথম খেলেন ৯ই অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। এখনো পর্যন্ত ৫ টি একদিনের ম্যাচ খেলেছেন যাতে ৪৩.৭৫ গড়ে মোট রান সংখ্যা ১৭৫। সর্বোচ্চ রান ৭৫ অপরাজিত। টি-২০ তে ৩ টি ম্যাচে মোট রান সংখ্যা ৯।