দীর্ঘ প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনা। করোনার দরুণ বিপর্যস্ত সাধারণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক অবস্থা। করোনা সমাজের সর্বস্তরের মানুষকেই কম বেশি প্রভাবিত করেছে। তবে সাধারণ মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের উপরেই করোনার সবথেকে ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়েছে। এই দেড় বছরে লড়াই শুধু করোনার বিরুদ্ধে নয়, বেকারত্ব সমস্যার বিরুদ্ধেও লড়তে হচ্ছে তাদের।
করোনাকালে চাকরি হারিয়েছেন বহু মানুষ। এমতাবস্থায় সংসার চালাতে অনেকেই নতুন পেশা বেছে নিয়েছেন। কেউ হোম-ডেলিভারি খুলেছেন তো কেউ আবার স্ট্রীট ফুডের দোকান খুলেছেন। ফুচকা স্ট্রিটফুড হলেও ফুচকাপ্রেমীরা আপাতত বাড়িতে বসেই ফুচকার স্বাদ নিতে পছন্দ করছেন। আর ফুচকাপ্রেমীদের সেই সাধ পূরণ করছেন ব্যারাকপুরের রাজেশ দেবনাথ।
ব্যারাকপুরের বাসিন্দা রাজেশ দেবনাথের বাবা সমীর দেবনাথও একজন ফুচকা বিক্রেতা। স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে নিয়ে চারজনের সংসার তার। তিনি নিজে সারা জীবন কষ্ট করে ছেলেদের সুশিক্ষিত করেছেন, বড় করে তুলেছেন। তার স্বপ্ন ছিল, ছেলেরাও একদিন স্বাবলম্বী হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে। উপার্জন করে সংসারের অর্থ-কষ্ট দূর করবে। তবে লকডাউন তার সেই স্বপ্নকে তছনছ করে দিয়ে গেল।
মাধ্যমিকে ৬৬ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিকে ৭০ শতাংশ এবং কলা বিভাগে গ্র্যাজুয়েশনে ৫২ শতাংশ নম্বর পেয়ে পড়াশোনা শেষ করে তার বড় ছেলে রাজেশ ইছাপুরের একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পান। তবে লকডাউনে তার চাকরিটিও গেল। তবে খিদে তো আর লকডাউনের বেড়াজাল বোঝে না! অতএব সংসারের হাল ধরতে বাবার সেই পুরনো ফুচকার ব্যবসাকেই নতুনভাবে চালু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করলেন রাজেশ।
বাবার পরিত্যক্ত ফুচকার ব্যবসা অন্য মোড়কে শুরু করল। এই নতুন স্টার্ট আপের নাম শ্রী ভেঙ্কটেশ কাজল। অন লাইনে অর্ডার এল বহু চেষ্টার পর। নিজের সাইকেলে বাড়ি বাড়ি ফুচকা ডেলিভারি। সারা সকাল জুড়ে টিউশনি এবং সন্ধ্যে হতে না হতেই টক জল ফুচকা, দই ফুচকা, চাটনি ফুচকা, চিকেন ফুচকার সম্ভার নিয়ে একেবারে তৈরি রাজেশ। ফোনে অর্ডার পেলেই প্যাকেটবন্দি ফুচকা নিয়ে তিনি পৌঁছে যান গ্রাহকের দুয়ারে।
ধীরে ধীরে কিছুটা হাল ফিরল সংসারের। এখনও অনেক অনেক পথ চলা বাকি। চারজনের সংসারে এখনও মাঝেমাঝেই বকেয়া থাকে বাড়িভাড়া। তবু দাঁতে দাঁত চেপে নিজের স্টার্ট আপ মজবুত করার মরীয়া যুদ্ধে আপোসহীন রাজেশ। পলতা ও ব্যারাকপুর জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে রাজেশের ফুচকার খ্যাতি। লোকলজ্জা দূর করে এগোতে পেরেছিলেন রাজেশ।
কোন কাজকেই ছোট করে দেখেনি সে। তার মত উদ্যমী যুবকেরাই বলতে পারে, “হেরে যেতে নয় আমি দৌড়াতে এসেছি”। তবে রাজেশও স্বপ দেখে একদিন সে সরকারি চাকরি পাবে। তাই সারাদিনের কঠোর পরিশ্রমের পর দিনান্তে বাড়ি ফিরে এসে চলে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি।