জল ও খাবার ছাড়া বাঁচা অসম্ভব, খাবার ছাড়া যদিও কয়েকদিন বাঁচা যায় জল ছাড়া অসম্ভব। কারণ, জলই জীবন। বিজ্ঞানের কথায়, সাধারণভাবে খাবার ছাড়া কোনও মানুষের পক্ষে মাস দু’য়েকের বেশি আর জল ছাড়া খুব বেশি হলে চার-পাঁচ দিনের বেশি জীবনধারণ করা সম্ভব নয়। তবে হিন্দু সন্ন্যাসী প্রহ্লাদ জানি ওরফে মাতাজি বিগত সাতাত্তর বছর জল ও খাবার কিছুই খাননি। কিন্তু তাতেও এখও অবধি দিব্যি সুস্থ রয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয় এখনও সকালে উঠে সারাদিন ধ্যান,পূজা অর্চনা সব কিছুই করেন। মৃত্যু তো দূরস্থান, দুর্বলতা পর্যন্ত স্পর্শ করতে পারেনি তাঁকে।
১৯২৯ সালে গুজরাটে জন্মগ্রহণ করেন প্রহ্লাদ জানি। মাত্র সাত বছর বয়সেই আধ্যাত্মিক অনুসন্ধিত্সা র তাগিদে বাড়ি ছেড়ে তিনি জঙ্গলে গিয়ে থাকতে শুরু করেন। মাত্র এগারো বছর বয়সে দেবী অমবার কৃপা লাভ করে লাল শাড়ি আর অলংকারে নিজেকে সজ্জিত করেন। তাঁর কথায়, দেবী অম্বার কৃপাতেই জল ও খাবার ছাড়া এতদিন জীবিত থেকে শক্তি প্রদান করেন। স্বয়ং দেবীই তাঁর শিরস্থ ব্রহ্মরন্ধ্র দ্বারা এমন কিছুো তাঁর শরীরে প্রবিষ্ট করিয়ে দেন যে খাবার তাঁর শরীরের জন্য উপযুক্ত নয়। সবসময় লাল কাপড় পরেন আম্বাজির ভক্ত জানি। শিষ্যরা ডাকেন ‘মাতাজি’। দূর দূরান্ত থেকে এসে পরামর্শ নেন তাঁরা। বিনিময়ে টাকা নেন না তিনি। মেহসানার এই ‘মাতাজি’র কাছে আশীর্বাদ নিতে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।
আরও পড়ুন : ডান চোখ নাচা শুভ না বাম চোখ? জানুন বিজ্ঞান কি বলছে
তবে সত্যিই কি প্রহ্লাদ এতদিন অভুক্ত রয়েছেন সাতাত্তর বছর ধরে? তা কি আদৌ সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চে্ষ্টা করেছিল বিজ্ঞান। ডাক্তার সুধীর শাহের নেতৃত্বে ডিফেন্স ইন্সটিটিউট অফ ফিজিওলজি অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস এবং অন্যান্য ডাক্তারি সংস্থার সদস্যরা ২০১০ সালে পনের দিন যাবত তাঁকে পর্যবেক্ষনে রাখেন, তাঁর গতিবিধিও নজর রাখেন। পনের দিন পরে সেই গোপন ক্যামেরার মাধ্যমে দেখা যায় সত্যি সেই ১৫ দিন নাকি প্রহ্লাদ কিছুই খাননি বা পান করেননি। এমনকী টয়লেটেও জাননি। তারপরেও তিনি সুস্থ স্বাভাবিক রয়েছেন, সুস্থ হয়ে ধ্যানও করেছেন। তবে কি করে সম্ভব, ডাক্তারদের একাংশের মতে, দীর্ঘদিন ধরে ধ্যানের মাধ্যমেই শক্তি লাভ করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন : বাড়িতে টিকটিকি থাকা কি শুভ ? না অশুভ ?
কিন্তু সুধীর শাহদের দাবিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন ডাক্তারদেরই একটি বড় অংশ। পৃথিবীর কোনও মানুষের পক্ষেই একটানা পনের দিন খাবার ও জল ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছেন হার্ভার্ড হিউম্যানিটারিয়ান ইনিশিয়েটিভ-এর ডাক্তার মাইকেল ভ্যান রুয়েন, শুধু তাই নয় ওই সিসিটিভি ফুটেজেরও সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা,ওই সময় বেশ কিছু ভক্ত তাঁর সঙ্গে দেখা করে কিছু প্রদান করেননি তারও কোনও মানে নেই বলেই জানাচ্ছেন
তবে সত্যিই কি প্রহ্লাদ এত দিন ধরে অভুক্ত রয়েছেন, খাননি কিছুই? স্পর্শ করেননি জলও? নাকি কিছু খেয়েছেন? তা অলক্ষ্যে? তার উত্তরের কোনও যুক্তিই নেই, এই বিতর্ক আজও মেটেনি। তবে বৈজ্ঞানিক যুক্তি যাই হোক এখনও কিন্তু ভক্তদের মনে ভক্তির সঙ্গে স্থান দখল করে আছেন সন্ন্যাসী প্রহ্লাদ ওরফে মাতাজি। সবে শেষে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছন যে, জানির খিদে এবং তৃষ্ণা প্রতিরোধ করার অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে। খিদের সঙ্কেত পাঠায় যে লেপটিন আর ঘ্রেলিন হরমোন, সেগুলো পরীক্ষা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। তার ছেকে বেশি কিছু জানা যায়নি।
আরও পড়ুন : বাস্তুমতে গৃহে সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য শুভ আর অশুভ গাছ কোনগুলি
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই ঘটনা একেবারে অসম্ভবও বটে। কিন্তু যুক্তি যেখানে স্তব্ধ হয়ে যায়, সেখান থেকেই তো শুরু হয় ভক্তির সাম্রাজ্য। এই ৮৮ বছর বয়সেও তাই ভক্তদের কাছে আধ্যাত্মিকতার পরাকাঠামো রূপে পূজিত হন প্রহ্লাদ জানি, ওরফে মাতাজি।