এমনিতেই বাঙালি মাছে ভাতে। অর্থাৎ একটা দিনও দিনের দুপুরের খাবারের পাতে মাছ না থাকলে সেই খাবার মুখে রোচে না। আর তাই প্রতিদিন মাছ ভাজা বা মাছের নানা পদ দিয়ে ভুরিভোজ খেতে বাঙালি অভ্যস্ত। আর বর্ষাকাল এলে তো কোন কথা নেই। বাজার জুড়েই তখন মাছের রাজা ইলিশের ছড়াছড়ি। হোক না দামে অনেক বেশি কিন্তু তবুও সপ্তাহে একবার বিশেষ করে রবিবারের দুপুরের পাতে ইলিশ থাকলে আর কোন কথা হবে না।
মরা মাছকে অনেকদিন ধরে সতেজ ও টাটকা রাখার জন্য আজকাল হামেশাই কিছু বড় বড় অসাধু মাছ ব্যবসায়ীরা ফরমালিন মিশিয়ে দিচ্ছেন। ফরমালিন যুক্ত মাছ আমাদের শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক।আমাদের অন্ত্রে নানান জটিল রোগের সম্ভাবনা কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয় এই ফরমালিন। আর তাছাড়া এই ক্ষতিকর রাসায়নিকে ক্যানসার সৃষ্টিকারী আলডিহাইড থাকে। সাধারণত মৃত প্রাণীর দেহ অনেকদিন ধরে পরীক্ষাগারে সংরক্ষণ করে রাখার জন্য ফরমালিন ব্যবহার করে থাকে জীব বিজ্ঞানীরা বা গবেষনার কাজে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা।আর সেই ফরমালিন এখন অসাধু লোকের হাত ধরে আপনার চেনা মাছে। আর এই অসৎ উপায়ের ব্যবহার সারা দেশ জুড়েই ছড়িয়ে পড়েছে। তাই বর্তমানে বাজারের মাছ কিনে নেওয়ার আগে ভালো করে আমাদের জেনে নিতে হবে সেই নিরীহ মাছটি ফরমালিন মেশানো নয় তো? কিন্তু কীভাবে? সাধারণত এইসব রাসায়নিকের উপস্থিতির পরীক্ষার জন্য যা কিছু দরকার তা সাধারণ মানুষের কাছে থাকে না। তাই সাধারণের পক্ষে তা বুঝে নেওয়া খুব একটা সহজ হয় না।আর তাই সাধারণ মানুষ বারবার প্রতারিত হয়ে থাকে এসব অসৎ মাছ ব্যবসায়ীদের দ্বারা।আর তাই এবার আসরে নেমেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
সারা দেশ জুড়ে মাছে ফরমালিন মেশানোর ঘটনায় রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি বিভাগের অন্তর্গত কেন্দ্রীয় মৎস প্রযুক্তি সংস্থা বিভাগ যার পোশাকি নাম CIFT বা The Central Institute of Fisheries Technology.আর তাই তারা এই ধরনের রাসায়নিক উপস্থিতি খুঁজে বের করার জন্য তৈরি করেছে এক ধরনের কিট যা মাছে ফরমালিন বা আমোনিয়ার উপস্থিতি জানিয়ে দেবে সহজেই। আর তাই এই কিট তারা বাজারে আনতে চলেছে খুব শীগ্রই। এই কিট যা সহজেই আপনাকে মাছে ফরমালিন বা আমোনিয়ার উপস্থিতি জানিয়ে দিয়ে আপনাকে এই ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক সংক্রমণ যুক্ত মাছ কেনা থেকে বাঁচিয়ে দেবে।এই কিটে থাকবে কিছু বিশেষ কাগজ এবং একটি রাসায়নিক তরলের শিশি।মাছে ফরমালিন আছে কি না জানতে প্রথমে এই বিশেষ কাগজ মাছে ঘষে নেবেন তারপর ওই তরল ওই ঘষা কাগজে এক বা দুই ফোঁটা মিশিয়ে নেবেন। দুই মিনিটের মধ্যে যদি কাগজের রং এক বিশেষ রঙে পরিবর্তন হয়ে যায় তাহলেই বুঝতে পারবেন আপনার ঘষা মাছে ফরমালিন বা আমোনিয়া আছে।
CIFT এর ডিরেক্টর সি. এন. রবিশঙ্কর মিডিয়াকে জানান যে এই কিট গত ছয় মাস ধরে চেষ্টা করে গবেষণাগারে প্রস্তুত করেছেন তাদের বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীরা।।এই গবেষনার কাজে যুক্ত থাকা বিজ্ঞানী এস. জে. লাহি এবং ই. আর. প্রিয়া জানান যে এই কিট গুলি বাজারে খুব কম মূল্যেই ছাড়া হবে যাতে সাধারণ মানুষ খুব সহজেই কিনতে পারেন এবং তা ব্যবহার করতে পারেন।তাই যখন বাজারে বিপুল পরিমান এই কিট নিয়ে আসা হবে তখন এর দাম কিট প্রতি ৫ টাকার মতো রাখা হবে।
প্রসঙ্গত জেনে রেখা দরকার মাছে যদি আমোনিয়া সংক্রমণ থাকে তাহলে সেই মাছ খেলে মিউকাস পর্দা ,গলা ,খাদ্যনালী এবং পাকস্থলী দারুন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।তাই এরকম একটি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ কোন ভাবেই মাছে না থাকায় কাম্য।এবার শুধু অপেক্ষা কখন এই কিট বাজারে আসে আর তা দিয়ে সহজেই সাধারণ মানুষ মাছে ফরমালিন ও আমোনিয়া সংক্রমণ ধরতে পারবে।