শ্রীময়ী-রোহিত (Sreemoyee) বিবাহ প্রকৃত অর্থেই সমাজের উপর বেশ প্রভাব ফেলেছে। ইদানিং নেট মাধ্যমে চোখ রাখলেই তা বেশ ভালোমতোই টের পাওয়া যায়। গল্পকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায় (Leena Gangopadhyay) ধারাবাহিকের নতুন মোড় মারফত কার্যত সমাজে নতুন বার্তা দিতে চেয়েছেন। মহিলারাও যে সুখে থাকার অধিকারী, তারাও যে জীবনের থেকে কিছু পাওয়ার দাবি রাখেন, সেই বার্তাই তিনি দিতে চেয়েছেন শ্রীময়ী ধারাবাহিকে। তবে এই নিয়ে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক। ধারাবাহিকের এই নতুন টুইস্ট সমাজ মাধ্যমে কী প্রভাব ফেলবে? চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে মহিলারাই শ্রীময়ীর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। এই বয়সে এসে একজন মহিলার নতুন প্রেম, নতুন বিয়ে, বাঁচার জন্য নতুন স্বপ্ন দেখার ইচ্ছেটাকে যেন একদল মহিলাই গলা টিপে মেরে ফেলতে চাইছেন! এর কারণ কী? একজন মহিলার দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে মহিলাদের রে রে করে ওঠার পেছনে কোন মানসিকতা কাজ করে? চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায় আনন্দবাজার পত্রিকার কাছে তুলে ধরলেন তার মতামত।
লেখিকা মনে করেন মহিলাদের পরনির্ভরশীলতাই এর পেছনে দায়ী। ৭৫ তম স্বাধীনতা উদযাপন করছে দেশ। অথচ আজও বহু মহিলার মধ্যেই স্বাধীনতার বোধটাই জাগরিত হয়নি। তার কথায়, “বেশির ভাগ মহিলা স্বাধীন নয়। কোথাও না কোথাও সে অদৃশ্য গণ্ডিতে বাঁধা থাকে। সেটা কখনও সামাজিক অনুশাসন, কখনও পারিবারিক অনুশাসন বা স্বামীর ইচ্ছে, সন্তানের ইচ্ছে”।
তিনি আরও বলেছেন, “আর সব অস্বীকার করলেও মেয়েরা সন্তানের ইচ্ছেকে অস্বীকার করতে পারে না। তা মেনে নিয়েই দাসত্ব স্বীকার করে। সেই সন্তান যদি পুত্রসন্তান হয় তা হলে বিষয়টা অন্য রকম হয়। সেই অর্থে বেশির ভাগ মহিলারা পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে না। আর সত্যি কথা বলতে, অনেক মহিলার স্বাধীনতা বোধটাই থাকে না।”
শ্রীময়ী ধারাবাহিকটিকে নিয়ে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “খেয়াল করে দেখেছি, বেশির ভাগ মহিলারাই এ কথা বলছেন। যাঁরা বলছেন তাঁদের কোথাও অনুশোচনা আছে। তাই তাঁরা বলছেন। আমি মনে করি, যে কোনও সময় নতুন করে জীবন শুরু করা যায়। কেউ নীতিপুলিশ হতে পারে না। আমার জীবনের সিদ্ধান্ত আমি নেব।”
“যে মহিলা স্বামীর সঙ্গে এত বছর ঘর করল, সন্তানদের মানুষ করল, সেই মহিলা তার পরে যদি অন্য জীবন বেছে নিতে চায়, আর ছেলেমেয়েরা তা সমর্থন না করে, তা হলে আমি বলব ছেলেমেয়েরাই প্রকৃত শিক্ষিত হয়নি। মাঝবয়সে বিয়ে শুধু সেক্সের জন্য হয় না। মানুষ একাকিত্ব দূর করার জন্য বিয়ে করে। বন্ধুত্বের জন্য বিয়ে করে। যে ছেলেমেয়েরা মায়ের এই বিয়েকে মেনে নিতে পারে না, তারা স্বার্থপর!”, মন্তব্য চিত্রনাট্য লেখিকার।
ধারাবাহিকের এই নতুন মোড় সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “টেলিভিশন খুব শক্তিশালী মাধ্যম। এখানে দেখানো কোনও ঘটনা মানুষের ওপর প্রভাব ফেলে। মধ্যবয়সে শ্রীময়ীর বিয়ের ঘটনা শুধু দেখানোর জন্যই কিন্তু ছোটপর্দায় দেখানো হয়নি। গল্পের গতিই তাকে সে দিকে নিয়ে গিয়েছে। শ্রীময়ী রোহিতকে বিয়ে প্রসঙ্গে অনেক দিন ধরে এড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ভালবাসত।”
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “এর বদলে শ্রীময়ী কী পেল? স্বামীর অন্য প্রেম, বিবাহবিচ্ছেদ। শ্বশুর বাড়ির লাথি-ঝাঁটা। অসম্মান-অপমান। তার একজন সন্তানের থেকেও উপেক্ষা। এটাই কি তার প্রাপ্তি? তা তো নয়! এ বার একজন মানুষ আসে, যে তার যৌবনকাল থেকে তাকে ভালবাসে। তার জন্য অপেক্ষা করে আছে। সে যদি তাকে বিয়ে করে। তাতে সমাজের ক্ষতি হয়ে গেল বা এই বিয়ে বিরাট কোনও দৃষ্টান্ত তৈরি করল, এমন আমার মনে হয়নি। বরং মনে হয়েছে একটা শ্রীময়ী এই বিয়ে করতে পারলে অনেক শ্রীময়ী এখান থেকে অনুপ্রেরণা পাবে।”