গুগল কে কাজে লাগিয়ে মাত্র ২১ বছরেই লাখপতি কেরালার যুবক

আজ টিএনএম সলিউশন কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাভেদ। কোটি টাকার এই আইটি প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স, ওয়েব ডিজাইনিং, অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের কাজ করে। এই কোম্পানির গ্রাহকেরা ছড়িয়ে আছেন বিশ্ব জুড়ে। গুগলের সহযোগিতায় এখন জাভেদ সাফল্যের শীর্ষে। কেরালার প্রত্যন্ত কান্নুড় এলাকার বাসিন্দা জাভেদ। মাত্র ২১ বছর বয়স। যখন ব্যবসা শুরু করেছিলেন তখন ঝুলি ছিল শূন্য। আজ তিনি লক্ষপতি। তাঁর হাতে গড়া কোম্পানি বছরে ২ কোটি টাকা ব্যবসা করে। এখন জাভেদের নিজস্ব বাড়ি তো আছেই সঙ্গে কিনেছেন একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সাফল্যের চূড়ায় ওঠা এক তরুণের গল্প এটি। যার কঠোর পরিশ্রম এবং কর্মদক্ষতার গল্প সাধারণ মানুষকে অনুপ্রেরণা যোগায়। মাত্র ১০ বছর বয়সে বাবার কাছ থেকে একটি সেকেন্ড হ্যান্ড কম্পিউটার উপহার পেয়েছিলেন জাভেদ। নেট কানেকশন-সহ। আশ্চর্যের বিষয় জাভেদের পুরো নাম মহম্মদ জাভেদ টিএন। কম্পিউটার এনে জাভেদকে জি-মেইল আইডি খুলে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা। যাকে আঁকড়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দশ বছরের কিশোর।

‘সেই সময় আমার নামে মেল আইডি পাওয়া যাচ্ছিল না। গুগল ‘টিএনএম জাভেদ’ নামের সাজেশন দেয়। সেটাই নামের সঙ্গে রয়ে গেছে।; জানালেন ২১ বছরের তরুণ জাভেদ। সেই সময় অর্কুটের মতো কিছু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ছিল। জাভেদ বলেন, ‘আমি ইন্টারনেটের সব কিছু শিখতে চাইতাম। কীভাবে ওয়েবসাইট তৈরি হয়, কীভাবে সেগুলো কাজ করে-সেসব বুঝতে বুঝতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যেত। স্কুল থেকে ফিরেই বসে যেতাম ক্মপিউটারের সামনে। বলতে পারেন আমার কম্পিউটারের নেশা হয়ে গিয়েছিল।’ হাসতে হাসতে বললেন টিএন জাভেদ।

কিছুদিনের মধ্যেই ব্লগিং, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েবসাইট তৈরির খুঁটিনাটি শিখে যান জাভেদ। নিজে ব্লগ তৈরি করতেও শিখে যান। সেই সময় তিনি দশম শ্রেণীর ছাত্র। এরপরেই বন্ধু সিরাজের সঙ্গে জাভেদ তৈরি করেন একটি ওয়েবসাইট। তবে পড়াশোনা ছাড়েননি। ওই বয়সেই বুঝে গিয়েছিলেন লেখাপড়া ছাড়া বেশী দূর এগোনো যাবে না। তাই রেজাল্ট আসত ‘এ ওয়ান’।
কম্পিউটারের নেশা জাভেদের বেড়েই চলেছে। তাঁর মনে হয়েছিল ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টে কাজ করার সুযোগ আছে। এই সময়েই নিজের প্রথম ডোমেন রেজিস্ট্রার করেন জাভেদ। নাম – টিএনএম অনলাইন সলিউশন। শুরু করলেন তাঁর ভার্চুয়াল কোম্পানি। বলে ফেসবুকে ঘোষণা করে দেন ১০০০ টাকায় ওয়েবসাইট ডিজাইন করবেন।

লোকজন ফেসবুকে খোঁজ নিতে শুরু করলেন। কাজ আসতে লাগল জাভেদের কাছে। এই সময় তাঁর মনে হয়, ওয়েব ডিজাইন করতে হলে টেকনিক্যাল জ্ঞান ধারালো হতে হবে। তাঁর কথায়, ‘কীভাবে কাজ হয় বুঝতে আমি কান্নুড়ের বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট ডিজাইন কোম্পানি ঘুরে দেখেছি।’
কিন্তু এরপরে আর এগোতে পারছিলেন না জাভেদ। তখনই দেখতে পেলেন সাফল্যের রুপোলী রেখা। তাঁর উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষকের নজরে আসে জাভেদের ফেসবুক পোস্ট। জাভেদ জানালেন, ‘স্যারের ভাই ইন্টিরিয়ার ডিজাইনার ছিলেন। একটি ওয়েবসাইট তৈরির কথা ভাবছিলেন। ফেসবুকে পোস্ট দেখে ওয়েবসাইট তৈরির জন্য তাঁরা আমার কাছে আসেন। বলেছিলেন, ঠিক মতো করতে পারলে পুরো টাকা দেবেন।’

এরপর শুধু কাজ আর কাজ। টিএনএম অনলাইন সলিউশনের জন্য জাভেদ প্রথম দোকান ঘর ভাড়া নিলেন সাউথ বাজারে। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৭ বছর। স্কুল শেষে বসে যান নিজের কাজে। এইসব দিনে জাভেদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর মা। জাভেদ বলেন, তাঁর মেরুদণ্ড।
ব্যবসায় যেন গতি আসছিল না। মাসে ২ থেকে ১ টা প্রোজেক্ট আসায় কর্মচারীদের সময়ে টাকা দিতেও সমস্যা হচ্ছিল। এইসময় এগিয়ে আসেন জাভেদের মা। ছেলের কোম্পানির জন্য হাতের সোনার বালা খুলে দেন তিনি। সঙ্গে জানিয়ে দেন, কর্মীদের সময়ে বেতন দিতে হবে।

এইসময়ে বেশ কিছু কাজ করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ব্যবসায় আসল গতি আসে ‘ইয়েস কেরালা’ সামিটে অংশগ্রহণ করার পর। এখানেই পায়ের তলার জমি পান জাভেদ। তরুণ উদ্যক্তাদের জন্য এই সামিট একটা মাইলফলক। সেই সময়েও তাঁর পরিবার ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তখন জাভেদের বয়স মাত্র ১৯ বছর। বাকিটা ইতিহাস।
এখন জাভেদের বয়স ২১ বছর। ১৮ টি ভিন্ন দেশে তাঁর কোম্পানির শাখা ছড়িয়ে আছে। তরুণ বয়সে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরশাহি পুরস্কৃত করেছে জাভেদকে।
এখন জাভেদের হাতে হাজার-এক প্রকল্প। সম্প্রতি তরুণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওয়েব ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মতো বিষয় শেখাতে দেশের মাটিতে খুলেছেন টিএনএম অ্যাকাডেমি। যে কোনও বয়সের পড়ুয়ার জন্য জাভেদের অ্যাকাডেমির দরজা সবসময় খোলা।