

গত ৪ ঠা মে থেকে দেশ জুড়ে শুরু হয় তৃতীয় দফার লকডাউন যা শেষ হবে আগামী ১৭ মে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরিযায়ী শ্রমিক, ছাত্রছাত্রী সহ অনেক মানুষই আটকে আছেন যারা হঠাৎ জারি হওয়া লক ডাউনের কারণে বাড়িতে ফিরতে পারেননি। লক ডাউনের দিন যত এগোচ্ছে ততই তাদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্নের সন্মুখীন হচ্ছে কেন্দ্র। তাই ১২ মে থেকে প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় সরকার।
এতদিন, অর্থাৎ ২২ শে মার্চ মধ্য রাতের পর আগামীকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকে চালু হতে চলেছে প্যাসেঞ্জার ট্রেন। কাল থেকে প্রাথমিক ভাবে রাজধানী দিল্লি থেকে ভারতের ১৫ টি শহরে প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল মন্ত্রক। তবে এর জন্য শ্রমিক ট্রেন বাতিল করা হবেনা। শ্রমিক ট্রেনের পাশাপাশি চলবে এই ট্রেন। কেন্দ্র চাইছে আগামী কিছু দিনে যত বেশী সম্ভব ভিন রাজ্যে আটকে পড়া ব্যাক্তিদের বাড়ি ফেরাতে, এবং সেই কারণেই এই উদ্যোগ।
কোথায় কোথায় চলবে এই ট্রেন?
দিল্লি থেকে দেশের ১৫ টি শহরে এই ট্রেন চলবে যার মধ্যে আছে হাওড়া, ডিব্রুগড়, আগরতলা, পটনা, বিলাসপুর, রাঁচী, ভুবনেশ্বর, সেকেন্দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, তিরুঅনন্তপুরম, মডগাঁও, মুম্বই সেন্ট্রাল, আমদাবাদ ও জম্মু-তাওয়াই। এই যাত্রাপথে পূর্বের সব স্টেশন গুলিতে দাড়াতে পারবে না ট্রেন। মাত্র কিছু গুরুত্বপুর্ন স্টেশনেই ট্রেন থামবে।
কিভাবে কাটবেন এই ট্রেনের টিকিট?
ট্রেন চললেও বন্ধ থাকবে রেলের রিজার্ভেশন কাউন্টার। কালকে থেকে যে ট্রেন গুলি চলবে সেই ট্রেনগুলোর টিকিট রেলের রিজার্ভেশন কাউন্টার থেকে কাটা যাবেনা। তার বদলে অনলাইনে আইআরসিটিসির ওয়েবসাইট থেকে ট্রেনের টিকিট বুক করা যাবে। যাত্রীরা নিজের প্রোফাইল থেকেই এই ই-টিকিট বুক করতে পারবেন। বৈধ ই টিকিট কেনার থাকলে তবেই যাত্রীকে ট্রেনে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। আইআরসিটিসি-র ওয়েবসাইট https://www.irctc.co.in থেকে সোমবার বিকেল থেকেই এই ই টিকিটের বুকিং শুরু হবে। ট্রেন ছাড়ার নির্দিষ্ট সময়ের ২৪ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত ব্যাক্তি অনলাইনেই টিকিট বাতিল করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ক্যানসেলেশন চার্জ হিসেবে ভাড়ার ৫০ শতাংশ কাটা হবে।
প্যাসেঞ্জার ট্রেনে যাত্রা করার ক্ষেত্রে কি কি নিয়ম মানতে হবে?
- ট্রেনের মধ্যেও বজায় রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব। এই নিয়ম যাতে মানা যায় সেই কারণে থ্রি-টিয়ার কামরাগুলির মাঝের আসনটি খোলা হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল।
- যাত্রা করার সময় যাত্রীদের ফেস কভার থাকা বাধ্যতামূলক।
- ট্রেনে যাত্রা করার আগে প্রত্যেক যাত্রীর স্ক্রিনিং হবে। যাত্রীর মধ্যে যদি কোনরকম অসুস্থ্যতার লক্ষন দেখা যায় তবে সেই যাত্রী ট্রেনে যাত্রা করতে পারবেন না। কেবল সুস্থ্য যাত্রীরাই যাত্রা করতে পারবেন।
- যাত্রীদের মোবাইলে কেন্দ্র সরকার দ্বারা জারি করা আরোগ্য সেতু অ্যাপলিকেশন থাকতে হবে।
- বৈধ টিকিট ছাড়া কেউ স্টেশন চত্বরে প্রবেশ করতে পারবেন না।
- ট্রেন ছাড়ার নির্দিষ্ট সময়ের এক ঘন্টা আগে পৌঁছাতে হবে স্টেশনে।
এই ট্রেন গুলির ভাড়া কিরকম হবে?
এই ট্রেনগুলো সম্পূর্ণ এসি কামরার হওয়ায় এই ট্রেন গুলির ভাড়া রাজধানী এক্সপ্রেস এর মতনই প্রিমিয়াম ক্যাটাগরির হবে। তৃতীয়ত দফার লক ডাউন এর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই যেহেতু এই বিশেষ ট্রেন পরিষেবা চালু করা হয়েছে তাই ভাড়ার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দাওয়া হবেনা। তবে যেহেতু আগে থেকে খাবার বুক করার পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে তাই যাত্রীদের কাছ থেকে ক্যাটারিং চার্জ নাওয়া হবেনা। রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, সপ্তাহের প্রতিদিনই চলবে। ট্রেনটিতে এসি থ্রি টায়ার, টু টায়ার ও ফার্স্ট ক্লাস শ্রেণির আসন থাকবে। এসি থ্রি টায়ারে ৫৩৪ টি আসন থাকবে। ভাড়া ১৯০০ টাকা। টু টায়ারে থাকবে ১৭৮ টি আসন। তার ভাড়া ২৭০০ টাকা। এস ফার্স্ট ক্লাসে থাকছে ৩০ টি আসন। ভাড়া ৪৫৯৫ টাকা।
কি কি পরিষেবা পাওয়া যাবে না এই ট্রেনে?
ক্যাটারিং পরিষেবা পাওয়া যাবেনা এই ট্রেনে তবে যাত্রীদের নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময় খাবার ও প্যাকেট জল দাওয়া হবে। এছাড়া ট্রেনের যাত্রীদের দাওয়া হবেনা কম্বল।
শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের ক্ষেত্রে কি কোনও পরিবর্তন আসবে?
হ্যা। শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়মের পরিবর্তনের কথা বলেছে কেন্দ্র। মূলত দুটি নিয়ম পরিবর্তন হবে।
- আগে এই ‘শ্রমিক স্পেশাল’ ট্রেনগুলিতে ১,২০০ জন যাত্রী যাতায়াত করতে পারতেন। এখন একই ট্রেনে ১,৭০০ জন যাত্রী যেতে পারবেন।
- আগে গন্তব্য স্থলে যাওয়ার আগে মাত্র ১ টি স্টেশনে থামত এই ট্রেন, এখন মাঝে ৩ টি স্টেশনে থামবে ট্রেনগুলো।