দ্বিতীয় দফার করোনা স্ট্রেইন গত বছরের তুলনায় আরও বেশি সংক্রামক এবং মারাত্মক। বর্তমানে দেশে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লক্ষের গন্ডি পেরিয়ে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থাও ভয়াবহ। ক্রমেই করোনার হটস্পট হয়ে উঠছে পশ্চিমবঙ্গ। বর্তমান পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের করোনা হাসপাতালগুলিতেও বেডের অভাব দেখা দিয়েছে। বেড না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহু রোগীকে বাড়ি ফিরিয়ে দিচ্ছে।
করোনার সবথেকে ভয়াবহ উপসর্গ হলো শ্বাসকষ্ট। চূড়ান্ত পর্যায়ের করোনা সংক্রমণ হলে রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। শ্বাসকষ্ট না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতেই চিকিৎসা সম্ভব বলে জানিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাই যতক্ষণ না পর্যন্ত এই উপসর্গ দেখা দিচ্ছে ততক্ষণ রোগীকে বাড়িতেই রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। এখন বাড়িতে যদি হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং সংগ্রহে অক্সিজেন সিলিন্ডার না থাকে তাহলে কি করবেন?
প্রোনিং কী? What is Proning?
বাড়িতে শ্বাসকষ্টের উপসর্গ দেখা দিলে পরিবারের সদস্যরা “প্রোনিং” পদ্ধতিতে রোগীর শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারেন। এই পদ্ধতিতে রোগীকে উপুড় হয়ে পেটের ওপর ভর দিয়ে শুতে হয়। রোগীর নিঃস্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দিলে হাসপাতালের চিকিৎসকরাও এই পদ্ধতি অনুসরণ করেন। বাড়িতেও এই পদ্ধতি আপনি অনুসরণ করতে পারেন।
প্রোনিং কখন করতে হয়?
রোগীর শ্বাস নিতে সমস্যা হলে এই পদ্ধতিতেই তার শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ বজায় রাখতে হয়। করোনা রোগীর শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা সর্বদা অক্সিমিটারের চেক করা উচিত। যদি দেখা যায় যে অক্সিজেনের সম্পৃক্ততা ৯৪ এর নিচে নেমে গিয়েছে তাহলে অবিলম্বে প্রোনিং করা যেতে পারে।
কীভাবে প্রোনিং করবেন?
প্রথমে বেডের উপর চার-পাঁচটা বালিশ রাখুন। বালিশ গুলি এমনভাবে সাজাবেন যাতে একটি বালিশ মুখ এবং গলার মাঝামাঝি স্থানে থাকে। ২-৩ টি বালিশ বুকের নিচ থেকে পেটের কাছ অব্দি থাকবে। আরেকটা বালিশ থাকবে পায়ের তলায়। প্রথমে রোগীকে এই বালিশের উপরেই উপুড় হয়ে শোয়াতে হবে।
আধঘন্টা থেকে এক ঘন্টা এইভাবে উপুড় হয়ে থাকার পর ধীরে ধীরে ডান দিকে ঘুরে যান। এইভাবে ডান কাত হয়ে শুয়ে নিজের ইচ্ছে মত আধঘন্টা থেকে ২ ঘন্টা পর্যন্ত থাকতে পারেন। এরপর পিঠের কাছে বালিশ রেখে আরও আধ ঘন্টা থেকে ২ ঘন্টা পর্যন্ত বসে থাকুন। তারপর ওই বালিশের উপরে আগের মতই বাঁ দিকে কাত হয়ে শুয়ে পড়তে হবে। এইভাবে ঘন্টা দুই থাকার পর আবার আগের মতো বালিশের উপর উপুড় হয়ে শুতে হবে।
আরও পড়ুন : আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন, মিলিয়ে নিন ৫ লক্ষণ দেখে
অন্যদের প্রোনিং করানোর সময় যা করবেন
পরিবারের কোনও সদস্যের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে রোগীর শরীরের নিচে একটি চাদর পেতে দিন। আরেকটি চাদর তার হাতের নিচ দিয়ে মুড়ে দিন। রোগী যখন চাদর ধরে টানবে তখন তাকে অন্যপাশে ফিরিয়ে দিতে হবে। এইভাবে বারংবার বিছানায় রোগীর স্থান পরিবর্তন করতে থাকুন।
আরও পড়ুন : করোনা ভাইরাস নিয়ে কয়েকটি গুজব যেগুলো সত্যি মনে হলেও সত্যি নয়
প্রোনিং কারা করতে পারবেন না?
গর্ভবতী মায়েরা, কঠিন হৃদরোগের সমস্যা যাদের রয়েছে এবং যাদের শিরদাঁড়ায় কোনও সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে প্রোনিং পদ্ধতি অনুসরণ নৈব নৈব চ। চিকিৎসকেরা বলছেন আধঘন্টা অন্তর অন্তর পাশ ফেরার চেষ্টা করুন। খাওয়ার আধ ঘন্টা পর থেকেই এই পদ্ধতি শুরু করা যেতে পারে। শরীরে কোনও আঘাত থাকলে সেইদিকে খেয়াল রেখে পাশ ফিরতে হবে।