ভারত ভক্তদের দেশ, ভারত সাধুদের দেশ।এখানে হিন্দু ধর্মকে আধার করে, ঈশ্বরের খোঁজে পরিবার পরিজন ছেড়ে বহু মানুষ হিমালয় গিয়ে তপস্যা করে সাধু হন। তাদের না থাকে ধন দৌলাতের উপর কোন মায়া, বা কোন মোহ। তারা গৈরিক বসন পরিধান করে, সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয়। বাঁচার জন্য তারা অর্থের চেয়ে সাধনাকেই বেশি গুরুত্ব দেন। নানা “নাগা সাধুরা “আবার একপ্রকার কৃচ্ছসাধন করে কাটায় তাদের সারাটা জীবন। তাদের জীবনের সারাটা জীবন কাটে তাদের আখাড়াই।গঙ্গাসাগর মেলা বা কুম্ভ মেলায় হাজার হাজার এইরকম সাধুদের দেখা যায়।যাদের পরনে পোশাক বলতে কিছু দেখা যায় না।ছাই ভস্ম মেখে আর রুদ্রাক্ষের মালা গলায় ধারণ করে তারা কাটিয়ে দেয় তাদের বেশিরভাগ সময়।
তবে আজ আমরা যে সাধুর কথা জানবো তিনি কিন্তু সম্পূর্ন ১৮০ ডিগ্রি আলাদা আমাদের তথাকথিত সাধু বা বাবাদের তুলনায়।তিনি বাবা আক্কা মকর। তবে তাকে আমরা জানি “গোল্ডেন বাবা”নামে। কেন তার এরকম নাম? আসলে তিনি সোনার গয়না পরতে একটু বেশি পছন্দ করেন। একটু বেশি বলতে ২০ কেজির মতো, যার বর্তমানে বাজার দাম প্রায় ৬কোটি ভারতীয় টাকা। শুনে মাথা খারাপ হয়ে গেল। মাথা খারাপ হওয়ারই কথা। আর এই পরিমান সোনার মালা বা অন্যান্য অলঙ্কার সারা শরীরে পরে তিনি আবার যাত্রায় বের হন। গতবছর ২০১৭ সালে তিনি প্রায় ১৪ কেজি ওজনের সোনার অলঙ্কার তার সারা শরীরে পরিধান করে কানোয়ার যাত্রার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। এবছর তিনি তার সোনার অলঙ্কারের পরিমান বাড়িয়ে ২০ কেজি করেছেন।আর তার এই বছর ২৫ তম কানোয়ার যাত্রায় তিনি ২০০ কিমি পথ যাত্রা করবেন হরিদ্বার থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে।তার এই যাত্রাপথে থাকবে নানা গাড়ির মিছিল।আর সঙ্গে থাকবে পুলিশি পাহারা।
তবে এই গোল্ডেন বাবার যে শুধু আছে সোনার অলঙ্কার তা কিন্তু নয়। বাবার ভাণ্ডারে দুর্মূল্য বস্তুর অভাব কিছু নেই। তার ভাঁড়ারে আছে ২৭লক্ষ টাকা দামের রোলেক্স ঘড়ি। আর আছে একটি বি এম ডব্লিউ,তিনটি ফারচুনার্স, দুটি অডি,এবং দুটি ইনোভা গাড়ি।এছাড়াও বিভিন্ন যাত্রার সময় তিনি তার যাত্রায় হামার,জাগুয়ার ,ল্যান্ড রোভারের মতো গাড়ি ভাড়াতেও নিয়ে আসেন।
বাবাকে তার এইরূপ সোনা প্রীতির সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বাবা জানান ,”আমার বরাবরই সোনার প্রতি একটু বেশি মোহ ছিল। আমার মনে পড়ে যখন ১৯৭২-৭৩ সালে ১০ গ্রাম সোনার দাম তখনকার বাজরের হিসাবে ২০০ টাকা ছিল তখন থেকেই আমি সোনা পরতে শুরু করি।তখন আমার কাছে ৪ ভরির মতো সোনা ছিল। পরে তা বছরের পর বছর বাড়তেই থাকে।আর গত বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে তা বেড়ে ১৪.৫কেজির মতো হয়েছে।যেখানে আছে ২১ টির মতো সোনার চেন,২১ টি বিভিন্ন দেব দেবীর লকেট এছাড়াও আছে সোনার বাহুবন্ধ, এবং সোনার জ্যাকেট।এবছর একটি নতুন চেন কারিয়েছি যার ওজন প্রায় ২কেজির মতো এবং এতে আছে ভগবান শিবের লকেট।এবছর আমার শরীর এত সোনার ওজন নিতে পারছে না আর।তাই আমার গলার স্নায়ুতে নাটি সমস্যা দেখা যাচ্ছে। আর আমি আমার এক চোখেও দৃষ্টি জনিত সমস্যায় ভুগছি।”এমনই বাবা জানিয়েছেন “হিন্দুস্থান টাইমস “নামের সংবাদপত্রের সাংবাদিককে।
আরও পড়ুন ঃ ফাঁস হলো অমিতাভ বচ্চনের সম্পত্তির হিসাব
বাবার এরূপ “গোল্ডেন বাবা”তে রূপান্তরিত হওয়ার পূর্বে তিনি দিল্লির গান্ধীনগর অঞ্চলে কাপড়ের এবং রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিলেন ।তিনি আরও জানান,”আমি ছয় বছর বয়সেই গুরুকুল যায় আমার শিক্ষা গ্রহণের জন্য এবং পরে হরিদ্বারে এসে আমি বেঁচে থাকার জন্য জীবিকা খুঁজতে থাকি।এইসময় আমি জপমালা ও কাপড় বেচতে শুরু করি রাস্তায় বসে।পরে ভগবান শিবের আশীর্বাদে আমার ব্যবসা লাভ দেখতে শুরু করে।আমি আমার কাপড়ের দোকানে জামা,জিন্স ও জ্যাকেট বিক্রি করতে থাকি এসব পোশাকের ব্র্যান্ড নাম “বিট্টু”দিয়ে।এছাড়াও জমিজমা সংক্রান্ত ব্যবসাও আমার ছড়িয়ে পড়ে ভগবান শিবের কৃপায়।”
বাবার এত সব সোনার অলঙ্কার ও অন্যান্য জিনিসের ভবিষ্যৎ কী হবে জানতে চাইলে বাবা বলেন তিনি তার সবচেয়ে প্রিয় শিষ্যকে এইসব কিছু উত্তরাধিকার দিয়ে যাবেন।বাবার এইরূপ বাৎসরিক যাত্রা উপলক্ষ করে ভক্তদের মধ্যে এক উন্মাদনা তৈরি হয়।
আরও পড়ুন ঃ “মেডিসিন বাবা”ওঙ্কার নাথ শর্মা; ওষুধ ভিক্ষা করে গরীবের জীবনদান এনার উদ্দেশ্য
তিনি তার যাত্রার সময় গাড়ির ভিতরে না থেকে গাড়ির উপরে বসে ভক্তদের উদ্দেশ্যে তার আশীর্বাদ বর্ষণ করেন এবং তার সোনার গয়নার প্রদর্শন করেন।ভক্তরা বাবার সাথে সুযোগ পেলে সেলফি বা ছবি তুলে তাদের ভালোবাসা ব্যক্ত করেন এবং গোল্ডেন বাবার সাথে নিজেদের উপস্থিতিকে স্মরণীয় করে রাখেন।