আপনি কি ভারতীয়? তাহলে জেনে নিন আপনার ২০ অধিকার

আড়ে-বহরে ভারতীয় সংবিধান দীর্ঘ এবং জটিল। দীর্ঘতার কারণে সংবিধান পড়ার ধৈর্য আমাদের নেই। জটিল হওয়ায় আইন সম্পর্কে কিছুই জানি না আমরা। অথচ সারাক্ষণ মৌলিক অধিকারের বড়াই করে চলেছি। বাক স্বাধীনতার পক্ষে যে কেউ জ্ঞান দিয়ে যায়। কিন্তু নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ওয়াকিবহাল নই আমরা। হওয়া সম্ভবও নয়।
এখানে ভারতীয় সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত নাগরিকের নুন্যতম অধিকারের একটি তালিকা তৈরি করেছি আমরা।

১) ১৯৫৫ সালের হিন্দু বিবাহ আইনের ১৪ ধারায়, কোনও দম্পতি বিয়ের একবছরের মধ্যে বিছেদের আবেদন করতে পারেন না। যদি আদালত মনে করে প্রচুর সমস্যা দেখা দিচ্ছে তখন বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে।

২) ২০০০ তথ্য প্রযুক্তি আইনের অধীনে, বার্তা এবং টেপ কিংবা ফোনে রেকর্ড করা বার্তা আদালতে প্রমাণ হিসাবে গ্রাহ্য। নির্দিষ্ট শর্তে রেকর্ড করা কথোপকথন থেকে বৈধ এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ সংগ্রহ করা যেতে পারে।

৩) ১৮৬৭ স্যারাইস অ্যাক্ট অনুযায়ী, যে কোনও ব্যক্তি নিজের এবং তাঁর পোষ্যের জন্য যে কোনও সময় যে কোনও হোটেল থেকে জল পান করতে পারেন নিখরচায়। ব্যবহার করতে পারেন শৌচাগার। কারও আটকাবার অধিকার নেই।

৪) সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, সূর্যোদয়ের আগে এবং সুর্যাস্তের পরে পুলিশ কোনও মহিলাকে গ্রেপ্তার করতে পারে না। একান্ত গ্রেপ্তার করতে হলে লিখিত নির্দেশ থাকতে হবে।

৫) ২০১৩ সালে দিল্লি পুলিশ ঘোষণা করে, কোনও মহিলা ঠিক যেমন চান সেভাবেই যে কোনও পুলিস স্টেশনে এফআইআর দাখিল করতে পারেন। এও বলা হয়েছে, পুলিশকে সেই অনুযায়ী তদন্ত শুরু করতে হবে।

৬) দিল্লি পুলিসের ঘোষণা অনুযায়ী, কোনও মহিলা থানায় উপস্থিত হতে না পারলে ডাক মারফত বা ইমেইলে অভিযোগ জানাতে পারেন। সেই অনুযায়ী কর্তব্যরত পুলিশকর্মী তদন্ত করে দেখবেন।

৭) সংবিধানের ২২ (১) এবং ২২ (২) ধারা অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তিকে আটক করে ২৪ ঘণ্টা ফেলে রাখা যাবে না। একদিনের মধ্যে আটক ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করতে হবে।

৮) তথ্যের অধিকার আইনের ২৩ ধারায়, কেন তাঁকে আটক করা হয়েছে বা প্রশ্ন করা হচ্ছে তা জানার অধিকার সেই ব্যক্তির আছে। ওয়ারেন্টে গলদ থাকলে গ্রেপ্তারের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন করা যায়।

৯) ২০০৭ এ সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী, কোনও পুলিস কর্মী অভিযোগ নিতে অস্বীকার করলে সাসপেন্ড এমনকি জেলও হতে পারে।

১০) যে পুলিসের অধীনে গ্রেপ্তার বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে সেই কর্মীর নাম এবং বিবরণও রেজিস্ট্রারে নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক।

১১) ১৯৮৮ মোটর ভেহিকেল অ্যাক্টের ১৮৫ ধারায়, চালকের রক্তে ১০০ মিলিলিটার অ্যালকোহল পাওয়া গেলে মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর অপরাধে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারে পুলিশ।

১২) ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮ ধারায় কোনও বিবাহিত ব্যক্তি অন্য অবিবাহিত বা বিধবা মহিলার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে তার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনা যাবে।

১৩) ধর্ষিতাকে বক্তব্য জানানোর জন্য থানায় যাওয়া বাধ্যতামূলক নয়। পরিবারকে হুমকি দিলে ধর্ষিতাকে থানায় যাওয়ার জন্য জোর করতে পারে না পুলিসও।

১৪) ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৪ ধারায়, প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ফৌজদারি অপরাধ। তবে সর্বসমক্ষে জড়িয়ে ধরা কিংবা চুম্বন অপরাধ নয়।

১৫) ২০০৫ হিন্দু উত্তরাধিকার (সংশোধনী) আইনে, পিতার সম্পত্তিতে ছেলে এবং মেয়ে উভয়েরই সমান অধিকার আছে।

১৬) ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬০ ধারায়, কোনও মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় মহিলা কনস্টেবলের উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক, মহিলার বাড়িতে হলেও।

১৭) ভারতীয় ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী, ধর্ষিতা চিকিৎসকের কাছে এলে ডাক্তারকে মেডিকেল পরীক্ষা করতেই হবে।

১৮) ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ‘ধর্ষণ’-কে মেডিকেল শব্দ হিসাবে ব্যবহার না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে এটিকে আইনি শব্দ হিসাবে ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়েছে।

১৯) ১৯৫৬ হিন্দু দত্তক এবং রক্ষণাবেক্ষণ আইন অনুযায়ী, বিবাহিত দম্পতি একই লিঙ্গের ২ শিশুকে দত্তক নিতে পারে না।

২০) দ্যা হোটেল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া অনুযায়ী, অবিবাহিত দম্পতি ভারতের যে কোনও হোটেলে ঘর ভাড়া নিতে পারেন। বিবাহিত না হলেও হোটেল কর্তৃপক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষকে ঘর ভাড়া দিতে বাধ্য।