বেশি করে মাছ খান, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমান

‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে…’ এই আকুলতা শুধু কবিগুরুর নয় প্রতিটি মানুষেরই। অথচ বয়স বাড়লেই স্ট্রোকের প্রবণতা। কারও কারও ক্ষেত্রে স্ট্রোক ডেকে আনে মৃত্যু।
আন্তর্জাতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে, বেশী মাছ খেলে স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমে। তাই বলে সবসময় খাবারে মাছ থাকতেই হবে – তা নয়৷ বরং বিজ্ঞানীরা বলছেন, সপ্তাহে অন্তত একবেলা খাবার টেবিলে মাছ রাখলেই এই লাভের আশা করা যায়৷ সুইডেনের ক্যারোলিন্সকা ইন্সটিটিউটের গবেষক সুজানা লারসন এবং নিকোলা অরসিনি ‘স্ট্রোক’ নামের বৈজ্ঞানিক সাময়িকীতে লিখেছেন মাছ খাওয়ার সাথে স্ট্রোকের সম্পর্কের কথা৷

Source

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাছের দেহে থাকা ওমেগা-৩ নামক ফ্যাটি অ্যাসিড মানুষের দেহের রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের উপর ইতিবাচক ক্রিয়া করে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান এবং ইউরোপের ১৫টি বৈজ্ঞানিক গবেষণা বিশ্লেষণ করে এমন ফল পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ এসব গবেষণায় ৩০ থেকে ১০৩ বছর বয়সি প্রায় চার লাখ মানুষ অংশ নেন৷ এই গবেষণাগুলোতে অংশগ্রহণকারীদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তারা কী হারে মাছ খেয়ে থাকেন৷ এরপর চার থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত তাদের পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে যে তাদের মধ্যে কারা স্ট্রোকের শিকার হচ্ছেন৷

আরো পড়ুন : হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ, ভুলেও অবহেলা করবেন না


এই গবেষণাগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘হার্ভার্ড স্কুল পাবলিক হেলথ’-এর বিজ্ঞানী ডারিউশ মোজাফফারিয়ানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা৷ তিনি তাঁর পরীক্ষার ফলাফলে বলেন, ‘মাছ থেকে সার্বিকভাবে ভালো পুষ্টি পাওয়া যায়৷ আর বিশেষ করে ওমেগা-৩ স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে ভূমিকা রাখে৷’ তিনি জানান, ‘অনেকগুলো পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, সপ্তাহে দুই থেকে তিন বেলা মাছ খেলেই এই উপকার পাওয়া সম্ভব।’ ‘স্যামন’ এবং ‘হেরিং’ জাতীয় সামুদ্রিক মাছ-সহ চর্বিযুক্ত মাছগুলোতে এই উপকার বেশি মাত্রায় পাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

আরো পড়ুন : কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ও হার্ট অ্যাটাক এক নয় ! পার্থ্যক্য টা জেনে নিন


মাছের দেহে থাকা ভিটামিন ডি, সেলেনিয়াম এবং বেশ কিছু আমিষও এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে বলে উল্লেখ করেন মোজাফফারিয়ান৷ বিজ্ঞানীদের মতে, প্রত্যেক সপ্তাহে তিন বেলা মাছ খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৬ শতাংশ কমে যায়৷ তাঁদের মতে, সারাজীবন বেশ ভালো পরিমাণে মাছ খায় এমন একশ’ জন মানুষের মধ্যে হয়তো কোনো একজনের হালকা স্ট্রোক হতে পারে৷ তবে বিজ্ঞানী মোজাফফারিয়ান বিষয়টিকে আরো খানিকটা স্পষ্ট করে বলছেন, যারা শুধুমাত্র ভাজা মাছ কিংবা মাছের তৈরি স্যান্ডউইচ খান তারা স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাসে মাছের যে উপকার তা খুব একটা পান না৷ অবশ্য তিনি স্ট্রোক থেকে বাঁচার জন্য বেশি করে মাছ খাওয়ার পাশাপাশি সুষম খাদ্য, নিয়মিত শরীর চর্চা, স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার ব্যাপারেও সুপারিশ করেন৷

আরো পড়ুন : ভারতের সেরা ১৩ টি হাসপাতাল – সুখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য

মাছের দেহে থাকা কয়েক ধরণের ফ্যাটি অ্যাসিড মানুষের দেহে বিদ্যমান ক্ষতিকর অ্যাসিডগুলোকে কমিয়ে দেয়৷ এছাড়া একটি ভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, মাছের ফ্যাটি অ্যাসিড মানুষের দেহের প্লাটিলেট অ্যাগ্রেগেশন হ্রাস করে৷ ফলে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া সহজতর হয়, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করে।
সুতরাং আর দেরি নয়৷ স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে মাছ খাওয়া বাড়াতে হবে এখন থেকেই৷