করোনা ভাইরাসের ভয়ে এখন গোটা বিশ্ব আতঙ্কিত। শুধুমাত্র চীন নয় করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক চীনের সীমা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। প্রতিবেশী দেশ চীনে মৃতের সংখ্যা যখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তখন ভারতের কেরলে তিনজনের শরীরে ধরা পড়ে করোনা ভাইরাস। তবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হওয়ায় সেই সংক্রমণ আর ছড়ায়নি। আক্রান্তদের একজন সুস্থও হয়ে উঠেছিলেন।
তবে হঠাৎ করেই কাল ফের করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ে ভারতে। দিল্লি, তেলেঙ্গানা, বেঙ্গালুরু সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই সংক্রমণে আক্রান্ত বেশ কয়েকজন। দেশে এখনও পর্যন্ত ১১ জন আক্রান্ত হবার খবর পাওয়া গেছ। উত্তরপ্রদেশের নয়ডায় বন্ধ হয়েছে স্কুল, পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে পরীক্ষা। এই অবস্থায় করোনা ভাইরাস যাতে আর না ছড়ায় সেজন্য সরকার তৎপরতা নিচ্ছে।
কলকাতার দোকানগুলিতে স্যানিটাইজার ও মাস্কের আকাল দেখা গিয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে মানুষ আগাম সতর্কতার আশ্রয় নিচ্ছেন। এই সুযোগে একদল মানুষ এই ভাইরাসের আতঙ্ককে কাজে লাগিয়ে ব্যাবসায় নেমে পড়েছে। মানুষ এই ভাইরাস সম্পর্কে বাঁচাতে অনলাইনে নানান রকম সার্চ করা শুরু করে দিয়েছেন। আর সেখানেই রয়েছে গলদ। করোনা ভাইরাসে আতঙ্কিত হয়ে এই ১০টি জিনিস ভুলেও করবেন না।
১) মাস্কের বিজ্ঞাপনঃ
করোনা ভাইরাস থেকে আপনাকে বাঁচানোর জন্য কোনো বিশেষ মাস্ক তৈরী হয়নি। তাই অনলাইনে যদি কেও দাবি করেন করোনা ভাইরাসের জন্য বিশেষ মাস্ক তৈরী হয়েছে তাহলে সেই প্ররোচনায় ভুলেও পা দেবেন না।
২) N95 মাস্ক ও সার্জিকাল মাস্কের দ্বন্দঃ
বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট করেই বলেছেন মাস্ক পড়লেই যে আপনি পুরোপুরি করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারবেন তা নয়। এটা বুঝতে হবে যে SARS-CoV-2 ভাইরাস আকারে খুবই ছোটো । এবং এই SARS-CoV-2 ভাইরাস সহজেই N95 মাস্কের ছিদ্র দিয়ে গলে যেতে পারে। তাই N95 মাস্ক ভালো নাকি সার্জিকাল মাস্ক ভালো এই বিতর্ক একেবারেই পা বাড়াবেন না।
৩) অনলাইনে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত ওষুধঃ
এখনও পর্যন্ত করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো ওষুধের আবিষ্কার হয়নি। কিন্তু কিছু অসাধু মানুষ করোনা ভাইরাসের ওষুধের নামে অনলাইনে বিভিন্ন রকমের ওষুধ ও তেল বিক্রি করা শুরু করছেন। এই প্ররোচনায় পা দেবেন না ভুলেও।
৪) অনলাইন করোনা ভাইরাসের তথ্যঃ
বর্তমানে সারা দেশের মানুষ আতঙ্কিত। তাই করোনা ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচার জন্য অনলাইনে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় জানার জন্য সার্চ করছেন। কিন্তু কিছু অসাধু মানুষ করোনা ভাইরাসকে হাতিয়ার করে আপনার ফোনের সব ব্যাক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে।
৫) করোনা ভাইরাস টেস্ট কিটঃ
এখনও পর্যন্ত করোনা ভাইরাস হয়েছে কিনা তা জানার জন্য কোনো রকম টেস্ট কিট তৈরী হয়নি। কিছু অসাধু ব্যাবসায়ী এই সুযোগ নিয়ে অনলাইনে করোনা ভাইরাসের টেস্ট কিটের নামে ব্যাবসা শুরু করেছেন। তাই এই ধরনের কোনো টেস্ট কিট কিনবেন না।
৬) করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজঃ
করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিভিন্ন অসত্য তথ্য দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ এ মেসেজ ছড়াচ্ছে। আতঙ্ক ছড়াবেন না ও ফেক নিউজে কান দেবেন না।
৭) ইউটিউবারদের মতামত
ইউটিউব বর্তমানে প্রচুর প্রভাবকের সৃষ্টি হয়েছে। নানান ইউটিউব চ্যানেলে এই ভাইরাস সংক্রান্ত অনেক ভিডিও আপলোড হতে দেখা যাচ্ছে। এই ইউটিউব ইনফ্লুয়েন্সারদের কথায় কান দেবেন না। মনে রাখবেন করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সঠিক তথ্য একমাত্র বিশেষজ্ঞরাই দিতে পারবেন।
৮) করোনা ভাইরাসের লক্ষন নিয়ে অনলাইন সার্চঃ
করোনা ভাইরাস নিয়ে মানুষ আতঙ্কিত ফলেই অনলাইনে করোনা ভাইরাসের লক্ষন সংক্রান্ত প্রচুর পরিমাণ সার্চ করা হচ্ছে। অযথা ভয় পাবেন না। যদি কোনো অস্বাভাবিক লক্ষন পর্যবেক্ষন করেন তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৯) আতঙ্ক ছড়ানো থেকে বিরত থাকুনঃ
সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন অনেক মেসেজ বা তথ্য আসছে যা থেকে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক আরও বাড়ছে। তাই অযথা আতঙ্ক ছড়াবেন না। ও অন্য মানুষকেও আতঙ্ক ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে বলুন।
আরও পড়ুন :- ভারতে ১১ জনের শরীরে মিলল করোনা ভাইরাস, জানুন লক্ষণ ও প্রতিকার
১০) করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত ইমেইলঃ
অসাধু ব্যবসায়ীরা ইমেইলের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে আপনার ব্যাক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। এমনকি WHO এর নাম করেও বিভিন্ন ম্যালওয়ার পাঠানো হচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যাক্তি ইতিমধ্যেই করোনা ভাইরাসের বিভিন্ন খবরের লিঙ্ক পাঠানো শুরু করেছেন আর তার সাথেই পাঠানো হচ্ছে একটি ম্যালিশিয়াস কোড। স্বাভাবিকভাবেই সেই লিঙ্কে ক্লিক করছেন মানুষ। আর হ্যাকারদের কাছে আপনাদের ফোন বা কম্পিউটারে থাকা তথ্য চুরি করার দরজা খুলে যাচ্ছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন হ্যাকাররা এই অসাধু কাজের জন্য PDF ও MP4 ফরম্যাট ব্যাবহার করছে। এখনও পর্যন্ত বিশেষজ্ঞরা মোট ১০টি ফাইল পেয়েছেন যেখানে করোনা ভাইরাস কে হাতিয়ার করে হ্যাকাররা তথ্য চুরি করার চেষ্টা করেছেন। তাই সাবধান থাকুন, সতর্ক থাকুন।