গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি চান? জেনে নিন ২১টি ঘরোয়া উপায়

অ্যাসিডিটির সমস্যায় কম বেশী আমাদের সবাইকে ভুগতে হয়। অ্যাসিডিটি একটা এমন সমস্যা যা ৮ থেকে ৮০ সবাইকে ভোগায়। সাধারনত বেশী ঝাল খাবার খাওয়া, দুশ্চিন্তা, রাতজাগা, কম পরিমানে জল খাওয়া, অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া…এইসবই অ্যাসিডিটির প্রধান কারন। শরীরচর্চার অভাবেও হতে পারে অ্যাসিডিটি। আর অ্যাসিডিটির জন্য মুখে দুর্গন্ধ, পেটব্যাথা, বমিবমি ভাব, চুল পড়া, চুল পেকে যাওয়া ইত্যাদি অনেক সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্ত মদ্যপান ও অ্যাসিডিটির কারন হতে পারে। এই অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তির জন্য অনেকেই অনেক ওষুধ খান। কিন্তু ওষুধ ছাড়াও ঘোরোয়া পদ্ধতিতেও এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আসুন দেখা যাক অ্যাসিডিটির কবল থেকে বাঁচার ২১ টি অসাধারন ঘরোয়া টোটকা :-

Source

১.জল পান : প্রতিদিন সকালে উঠে খালিপেটে ২ গ্লাস  সাধারন পানীয় জল খাওয়া অ্যাসিডিটির এক মহা ওষুধ।এতে পাকস্থলিতে অ্যাসিডের মাত্রা ঠিক থাকে এবং হজম হয় সহজে।

Source

২.ঠান্ডা দুধ : গরম না…শুধুমাত্র এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ দিয়েই আপনি অ্যাসিডিটি থেকে আরাম পেতে পারবেন।বুকজ্বালা কমাতে ঠান্ডা দুধ,দোকান থেকে কিনে আনা যে কোনো দামি ওষুধ কে পলকে হার মানাবে।দুধের মূল উপাদান ক্যালসিয়াম পাকস্থলিতে অ্যাসিড তৈরীতে বাধা দেয়।বুকে,পেটে জ্বালা জ্বালা ভাব কমাতে এটা দ্রুত কাজ দেয়।

Source

৩.সতেজ বেসিল পাতা : বেসিল পাতা,যা আমাদের সবার কাছে তুলসি পাতা বলে পরিচিত,আপনার অ্যাসিডিটি কমাতে সাহায্য করে।প্রতিদিন সকালে ৩-৪ টে সদ্য গাছ থেকে তোলা তুলসি পাতা যদি খেতে পারেন,এটা আপনার দীর্ঘদিনের অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।পাকস্থলিতে গ্যাষ্ট্রিক অ্যাসিডের পরিমান নিয়ন্ত্রনে রাখে এই তুলসি।অতিরিক্ত অ্যাসিড জমতে দেয় না।এটা বায়ুনিরধক।

Source

৪.গুড় : গুড়!! নামটা শুনলেই আমরা অনেকে নাক শিটকোই। বাড়ির বয়স্করা প্রায়ই আমাদের নাক শিটকানো দেখে বলেন- ‘ওরে খা একটু গুড়,পেট ঠান্ডা থাকবে।’কিন্তু তাও আমরা খাই না।কিন্তু সত্যিই জানেন কী যে গুড় অ্যাসিডিটির এক বিশাল ওষুধ।হজম হতে সাহায্য করে,পাকস্থলিতে অ্যাসিড  জমতে দেয় না।তাই সুস্থ থাকতে প্রত্যেকবার খাবার পর,বেশী না পারলে একটু করেই খেতে শুরু করে দিন।বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে গুড় শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখে।তবে যাদের  সুগার,ডাইবেটিক্স আছে,তারা এটা এড়িয়ে চলুন।

Source

৫. আদা : অ্যাসিডিটি তে আদা একটা খুব উপকারি ঘরোয়া টোটকা।আদা পাকস্থলিতে অ্যাসিডের পরিমান প্রশমিত করে,দেহের P.H মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখে।অ্যাসিডিটির সময়ে এক টুকরো আদা মুখে দিলে উপশম মেলে। জল ফুটিয়ে তাতে টুকরো করা আদা দিয়ে খেতে পারেন।আবার শুধু আদার রস করে সেটা খাওয়া খুব উপকারি। ভালো ফল পেতে এর সঙ্গে কয়েকফোটা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে খান।

Source

৬.পুদিনা পাতা: পুদিনা পাতা অ্যাসিডিটির এক মহা ঔষধ। এমনকি অ্যাসিডিটির জন্য কিনতে পাওয়া যায় যে ওষুধ গুলো তাতেও পুতিনার সত্ত্ব ব্যবহার করা হয়।লক্ষন দেখা দিলে কয়েকটি পুদিনা পাতা চিবিয়ে বা চা বানিয়ে খেলেও আরাম পাওয়া যায়। এককাপ ঈষদুষ্ণ জলে ৩-৪টে পুদিনা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে মধুসহযোগে খেলে উপকার হয়।এটাও বায়ুনিরধক এবং প্রশান্তিদাতা।

Source

৭.অ্যালোভেরা :  অ্যালোভেরা একটি দারুন ঘরোয়া ওষুধ।অ্যালোভেরা অ্যাসিডিটির জ্বালা ভাব দূর  করে আর হজম প্রকৃয়াকে সহজ করে।বুক, পেটের জ্বালা কমাতে এটা খুব কাদের।সকালে উঠে খালিপেটে অ্যালোভেরার জেলটা  বের করে খেলে খুব উপকার পাবেন।

Source

৮.বাটারমিল্ক : পাকস্থলির অ্যাসিড ক্ষরন বাটারমিল্ক অপ্রতিরোধ্য।বেশী ঝাল,রিচ খাবার খাওয়ার পর ১ গ্লাস ঠান্ডা বাটারমিল্ক আপনাকে অ্যাসিডিটি থেকে শত হাত দূরে রাখবে।এর ঠান্ডা অাশ্বাস শরীর ভিতর থেকে ঠান্ডা রাখে যার ফলে খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়।এর উপর একটু কালো জলের গুড়ো ছড়িয়ে খেতে পারেন তাতে করে এর স্বাদ-ও বাড়বে সঙ্গে গুণ-ও।

Source

৯.নারকেলের দুধ : নারকেলের দুধ পাকস্থলিতে অ্যাসিড ক্ষরণের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে।এতে আছে হাই ফাইবারের ম্যাজিক যা সুষ্ঠভাবে খাবারকে হজম করায়।পেটফাঁপা,বমি ভাব দূর করে।নারকেলের দুধ স্বাদে অমৃত আর এর গুনও অসাধারন।

১০.মৌরী : সব বাড়িতেই খাবার পর মৌরীর ডিব্বার খোঁজ পরেই থাকে।আচ্ছা মৌরী কি শুধুই মুখশুদ্ধি? না না…একদম-ই না। মৌরী যেকোনো রকমের পেটের সমস্যার মুশকিল আসান।এতে আছে প্রচুর পরিমানে মিনারেল,ভিটামিন আর ফাইবার যা আপনার হজম ক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্য করবে।মৌরী জলে ভিজিয়ে সেই জলটাও খেতে পারেন।এটাও খুব উপকারি।

Source

১১.আনারসের সরবত : আনারসের সরবত একটি অসাধারন এবং 100 % ন্যাচারাল,ঘরোয়া ওষুধ যা স্বাদেও লাজাবাব।এর এমন গুন যা পেটের মধ্যে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের মাত্রা ঠিক রাখে যার ফলে অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি পাবেন।এই সরবতে সামান্য নুন দিয়ে খান এতে এর গুণ দ্বিগুন বাড়বে।

Source

১২. জিরে : হজমের সমস্যা দূর করতে জিরের জুড়ি নেই। জিরে মুখে লালা ক্ষরন বাড়ায় যার ফলে খাবার হজম হয়ে যায় তাড়াতাড়ি এবং পেট ফাঁপা,বমি ভাব কেটে যায়।দুকাপ মত জলে  এক চা চামচ করে জিরে, ধনে মৌরী গুঁড়ো.চিনি মিশিয়ে খালি পেটে খান।আবার এক গ্লাস জলে জিরে গুঁড়ো মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন,সেটা ঠান্ডা করে প্রতিবার খাবার পর খেতে পারেন।

Source

১৩.আমলা : আমলা এক বহুগুণ সম্পন্ন আয়ুর্বদিক খাবার। এর গুণের কথা কম বেশী সবাই জানে।আমলা পারে দ্রুত অ্যাসিডিটি দূর করে এক শীতলতা আভাস।প্রতিদিন এক চামচ আমলা খেলে অ্যাসিডিটির ফলে হওয়া মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।

Source

১৪.সবজির রায়তা : বিভিন্ন রকম সবজী যেমন শসা,টমেটো,সামান্য পেঁয়াজ….এইধরনের সবজী টক দই এর সাথে মিশিয়ে রায়তা বানান হয়।এটা পাকস্থলিতে অ্যাসিডকে জমা হতে দেয়না।অ্যাসিডিটির কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে এটা খুব উপকারি।দুপুরে কিছু বেশী ঝাল,রিচ খাবার খাওয়া হলে এই রায়তাকে  অনেকই ডেসার্ট হিসাবে ব্যবহার করে যা খুবই স্বাস্থ্যসম্যত।

Source

১৫.জোয়ান : বাড়িতে মৌরীর যেমন ডিমান্ড অাছে তেমন-ই ডিমান্ড রয়েছে জোয়ানের-ও।জোয়ানে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা হজমক্ষমতা কে বাড়তে সাহায্য করে।জোয়ানের সাথে গরম জল,বিটনুন মিশিয়ে এক টানা ৭ দিন খান….দীর্ঘদিনের অ্যাসিডিটির সমস্যা কেটে যাবে।তাছাড়া জোয়ান জলে ফুটিয়ে সেই জল ঠান্ডা করে ছেঁকে নিয়ে খান।এতেও উপকার হবে।

Source

১৬.দারুচিনি : দারুচিনি সাধারনত খাবারের সুগন্ধ তৈরী করে।কিন্তু সুগন্ধ তৈরী করা ছাড়াও দারুচিনির অনেক গুণ আছে।দারুচিনি অ্যান্টাসিড সমৃদ্ধ যা বিপাক ক্রিয়াকে সচল রাখে।গ্যাষ্ট্রিক অালসার থেকে হওয়া ইনফেকসনে বাধা দেয় এই দারুচিনি।

আরও পড়ুন : বেগুনের গুনাগুন ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

Source

১৭.কলা : পেটের গলোযোগ দূর করতে কলা দারুন কাজের।কলাগাছকে তো খুব একটা যত্নও করতে হয় না।প্রকৃতিতেই বেড়ে ওঠে।অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করতে আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কলা যোগ করুন।লান্চের পর একটা করে কলা খাওয়া গেলে খুব উপকার পাবেন।

১৮.রসুন : রসুন একটি চমকপ্রদ ঘরোয়া ওষুধ। রসুন হজমের সমস্যার সমাধান করে।এতে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে যা অতিরিক্ত অ্যাসিড ক্ষরণে সাহায্য বাধা দেয়।রসুন কুঁচে তাতে ধনেপাতা আর জিরা মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন।ঠান্ডা করে খান,উপকার পাবেন।তাছাড়া ঈষদুষ্ণ গরম দুধে থেঁতো করা রসুন দিয়ে খেতে পারেন।

আরও পড়ুন : বেশি করে মাছ খান, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমান

Source

১৯. কাঁচা বাদাম : কাঁচা বাদাম অ্যাসিডিটি ভাগাবার এক দারুন ঘরোয়া ওষুধ।কিন্তু বাদামকে জলে ভেজাবেন না বা গরম করবেন না,এতে এর গুণাগুণ নষ্ট হয়।কাঁচা বাদামে আছে ন্যাচারাল ওয়েল,হাই ফাইবার যা অ্যাসিডিটির মোক্ষম ওষুধ।

Source

২০. লেবুজল : গরম জল যে অ্যাসিডিটিতে কেমন কাজ করে তা সবার-ই জানা কিন্ত গরম জলে যদি লেবুর রস মেশানো হয় তাহলে এর থেকে বড় ওষুধ আর থাকেনা।পেট ফাঁপা,বমি ভাব,দীর্ঘদিনের অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তির বড় উপায়।প্রতিদিন সকালে উঠে ব্রাশ করেই ১গ্লাস গরম জলে একটা লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে নিন…তারপর সারাদিন যা খুশি খান,কোনো অসুবিধা-ই হবেনা।

আরও পড়ুন : পোস্ত খেতে ভালবাসেন? জেনে নিন রোজ পোস্ত খেলে কী কী উপকার পাবেন

Source

২১.পেঁপে : আপনি কি প্রতিদিন ডায়েট চার্ট ফলো করে খাবার খান?তাহলে আজ-ই আপনার চার্টে পেঁপে কে যোগ করুন।এটা হজমে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত অ্যাসিড জমা হতে দেয় না।

উপরের নিয়মগুলো মেনে চলুন আর বেশী করে জল খান,৭-৮ঘন্টা ঘুম নিশ্চত করুন,দুশ্চিন্তা কমান আর প্রতিদিন একটু করে শরীর চর্চা করুন।নিজে সুস্থ থাকুন…অপরকে সুস্থ রাখুন।আর সুস্থ থাকার আসল চাবিকাঠি মনের শান্তি।