সাধারণত সরকারি বা বেসরকারি ক্ষেত্রে আপনি চাকুরী করার পর যখন আপনি অবসর গ্রহণ করেন তখন আপনি পেয়ে থাকেন প্রভিডেন্ট ফান্ডের জমানো টাকা এবং তার সাথে একটা নির্দিষ্ট হারে পেনশন। তবে রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষেত্রে তা আবার আলাদা। বিশেষ করে বিধায়ক থেকে শুরু করে সাংসদদের এবং পরবর্তী স্তরে রাজ্য মন্ত্রীসভার সদস্য,মুখ্যমন্ত্রী এবং সর্বোচ্চ স্তরে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতিরা তাদের কর্মজীবন শেষ করার পরও ভোগ করতে থাকেন বেশ কিছু আর্থিক এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। যদিও আজ আমাদের আলোচনার বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির রাষ্ট্র কতৃক প্রদত্ত বিভিন্ন আর্থিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে আলোচনা করবো।
ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা
ভারতের রাষ্ট্রপতিকে দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসক হিসেবে অভিহিত করা হয়। সংবিধান অনুযায়ী তিনি ভারতের সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক। তিনি রাষ্ট্রের প্রধান নাগরিক। তিনি দেশের একতা, অখণ্ডতা এবং উন্নতির প্রতীক। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী তিনি প্রশাসনিক প্রধান। তিনি তার ক্ষমতার প্রয়োগের জন্য অন্য কোনো ব্যক্তির উপর বাধ্য থাকবে না। যদিও প্রশাসনিক স্তরের সকল ক্ষমতা নির্বাহ করেন প্রধানমন্ত্রী এবং তার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা।
রাষ্ট্রপতির বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা
বর্তমানে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রতিমাসে ভারতীয় টাকায় ৫০০০০০ টাকা ভাতা পান। এছাড়াও তিনি তার সাথে মেডিক্যাল, আবাসন এবং অন্যান্য সকল সুযোগসুবিধা ভোগ করেন। এছাড়াও ভারত সরকার রাষ্ট্রপতি ভবন এবং তার কর্মচারীদের বেতন এবং খাওয়া দাওয়া ও অতিথি আপ্যায়নে প্রতি বছর প্রায় ২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকার মতো খরচ করে।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা
ভারত সরকার তার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করে থাকে। এইসব সুযোগ সুবিধা একজন বর্তমান কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার মন্ত্রীর মতো। যার মধ্যে আছে:-
- সারাজীবনের জন্য আবাসনের সুবিধাযুক্ত ন্যুনতম ৮ কামরার একটি বাড়ি।
- স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় চিকিৎসার সুবিধা
- মাসিক ১.৫লক্ষ টাকার পেনশন ভাতা দেওয়া হয় সপ্তম বেতন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী।
- এছাড়াও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তার সচিব এবং অন্যান্য কাজের লোকের জন্য মাসিক ৬০,০০০ টাকার মতো খরচ করতে পারবেন।
- বিনামূল্যে ২টি ল্যান্ডলাইন, ১ টি মোবাইল ফোন এবং ব্রডব্যান্ডের সুবিধাযুক্ত ইনটারনেট পরিষেবা দেওয়া হয়। এইসব ক্ষেত্রে যে মাসিক বিল হয় তা কেন্দ্রীয় সরকার মিটিয়ে দেয়।
- বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ এবং বাৎসরিক বিল কেন্দ্রীয় সরকার মিটিয়ে দেয়।
- এছাড়াও গাড়ি ও গাড়ি চালকের সুবিধা।
- ভারতের যেকোন জায়গায় যাওয়ার জন্য ট্রেন এবং প্লেন ব্যবহারের সুবিধা। এক্ষেত্রে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এবং তার সাথে থাকা একজন ব্যক্তি এই সুবিধা পেয়ে থাকেন।
- পাঁচজনের মতো ব্যক্তিগত কর্মচারী রাখতে পারবেন।তাদের খরচ যোগাবে কেন্দ্রীয় সরকার।
এই প্রসঙ্গে জেনে রাখা দরকার ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর বর্তমান আবাসন হল ১০ রাজাজি মার্গ লুটয়েন্স, নিউ দিল্লী যা একটি দ্বিতল ভিলা এই ভিলায় আছে ৮ টি কক্ষ। এই ভিলার মোট ক্ষেত্রফল হল ১১,৭৭৬ বর্গ ফুট। তার থাকার পূর্বে এই ভিলায় প্রাপ্তন রাষ্ট্রপতি ডাঃ এ পি জে আব্দুল কালাম মহাশয় থাকতেন সেখানে।
তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দিল্লী পুলিশের হাতে। কিন্তু তিনি যখন দেশের অন্য কোন প্রান্তে ভ্রমণ করবেন তখন সেই রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা
ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রে সংবিধান দেশ চালানোর যাবতীয় ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর উপর আরোপিত করেছেন। তবে তিনি সময়ে অসময়ে রাষ্ট্রপতির উপদেশ নিতে পারেন। তবে তিনি তা নিতে বাধ্য নয়। তিনিই রাষ্ট্রের প্রধান কার্যনির্বাহী ব্যক্তি। তিনি তার পছন্দ মতো নির্বাচনে বিজয়ী প্রাথীদের উপযুক্ত মন্ত্রিত্ব দিতে পারেন। সকল মন্ত্রী তাদের কাজের হিসাব সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন। তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার প্রধান এবং লোকসভায় সরকার পক্ষের নেতা।
বর্তমানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মাসিক ভাতা পান ১,৬০,০০০ টাকা।তার সাথে তিনি আরও অনেক অনেক সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। যার মধ্যে আছে আবাসন, চিকিৎসা এবং ভ্রমণের সুবিধা তা দেশীয় বা বিদেশে যেখানেই যাক না কেন।এছাড়াও তিনি সকল রকম আরও যাবতীয় সুযোগ সুবিধা যেমন Z+ ক্যাটাগরির নিরাপত্তা। আরও অনেক কিছু পেয়ে থাকেন।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ সুবিধা
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিদের যেমন একগুচ্ছ সরকারি সুযোগ সুবিধা এবং মোটা টাকার পেনশন দেওয়া হয় । ঠিক তেমনই প্রাপ্তন প্রধানমন্ত্রীকেও দেওয়া হয় একগুচ্ছ সুযোগ সুবিধা। বর্তমানে সকল প্রাপ্তন প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সমমর্যাদার সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়। যেমন :
আরও পড়ুন : অটল বিহারী বাজপেয়ীর বাঙালি কন্যা ও পরিবার সম্পর্কে জানেন কি?
- সারাজীবনের জন্য আবাসনের সুবিধা। অর্থাৎ দেশের প্রতিষ্ঠিত কোন জায়গায় ন্যূনতম আট কক্ষের কোন বাড়ি তিনি বিনামূল্যে পাবেন। যেখানে থাকবে বিদ্যুৎ এবং জল, টেলিফোন এবং বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা।
- বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা। ভারতের যেকোন সরকারি বা বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় সকল চিকিৎসার বিনামূল্যে সুযোগ পাবেন তিনি।
- নিজের সুবিধার জন্য ১৪ জনের মতো কর্মচারী নিয়োগ করার ক্ষমতা তার আছে। আর এইসব কর্মচারীর মাসিক বেতন থেকে অন্যান্য সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করবে কেন্দ্রীয় সরকার। এই পরিমান কর্মচারী রাখার অধিকার প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত পাবেন তিনি।
- এছাড়াও অন্তর্দেশিয় বিমানে ৬টি এক্সেকিউটিভ শ্রেণীর বিমান টিকিটের সুবিধা পাবেন প্রতি বছর। এবং সারা দেশে সকল জায়গা বিনামূল্যে ট্রেনে যাওয়ার সুবিধাও পাবেন তিনি।
- এছাড়াও আগামী পাঁচ বছরের জন্য তিনি তার ব্যক্তিগত সচিব থেকে শুরু করে যাবতীয় যত অফিস খরচ পাবেন।
- নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ইস্তফা দেওয়ার পর পরবর্তী একবছর তিনি স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রূপের দায়িত্বে থাকবেন।
- পাঁচ বছর ইস্তফার পর তিনি একজন ব্যক্তিগত সহকারী ও একটি পিওন এবং অফিস খরচ চালানোর জন্য বাৎসরিক ৬,০০০ টাকা করে পাবেন।
প্রসঙ্গত জেনে রাখা ভালো সময়ে সময়ে এইসব সুযোগ সুবিধা পরিবর্তন হয়।