গত শুক্রবার রাতে কেরলের কোজিকোড বিমানবন্দরে এয়ার ইন্ডিয়া যাত্রীবাহী বিমান ‘আইএক্স-১৩৪৪’ দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। দুর্ঘটনার সময় দুবাই থেকে আসা এই যাত্রীবাহী বিমানটিতে ১৯১ জন যাত্রী ছিলেন। যাদের মধ্যে ১৯ জনের প্রাণহানি হয়, প্রাণহানি হয় বিমানের দুই পাইলট ক্যাপ্টেন দীপক বসন্ত সাথে এবং ক্যাপ্টেন অক্ষয় কুমারের।
ম্যাঙ্গালোরের টেবিল টপ বিমানবন্দরের রানওয়েতে ঠিক ১০ বছর আগে এমন দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিল আরও একটি যাত্রীবাহী বিমান। তবে এই কেরলের কোঝিকোড় এবং কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোরের টেবিল টপ বিমানবন্দর ছাড়াও ভারতে আরও তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ টেবিল টপ বিমানবন্দর রয়েছে।
সাধারণভাবে কোনও উঁচু পাহাড় অথবা মালভূমির সমতল অংশে যে রানওয়ে তৈরি করা হয়, তাইই টেবিল টপ রানওয়ে। কোনও পাহাড়ের মাথা কেটে এক কিলোমিটারের বেশি একটানা লম্বা যে রানওয়ে বানানো হয়, তারই এই নাম। রানওয়েটি উঁচু জায়গায় হওয়ায় তাকে ঘিরে থাকে গিরিখাদ। এর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ সীমিত। সংকীর্ণ জায়গা হওয়ায় এখানে বিমান অবতরণ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করতে হয় পাইলটকে। কারণ, অবতরণ স্থলের একচুল এদিক-ওদিক হলে, বিমান খাদে গিয়ে পড়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। তাই টেবিল টপ রানওয়েতে বিমান নামাতে অত্যন্ত দক্ষ, অভিজ্ঞ চালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
১) সিমলা বিমানবন্দর : হিমাচল প্রদেশের যুব্বারহাত্তিতে এই বিমানবন্দরটি রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২১৯৬ মিটার উঁচুতে পাহাড়ে ঘেরা এই টেবিল টপ বিমানবন্দর। দেশের অন্যান্য টেবিল টপ বিমানবন্দরগুলির মত এই বিমানবন্দরটি বিমান ওঠা নামার ক্ষেত্রে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।
এই বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১২৩০ মিটার। বিমান ওঠানামা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বর্তমানে এই বিমানবন্দরে কোন বিমান ওঠানামা করে না। বিমানবন্দরটির রানওয়ে সম্প্রসারণের চেষ্টা দীর্ঘদিন ধরে চললেও জমি জটের কারণে এখনও তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
২) পাকইয়ং বিমানবন্দর : সিকিমের পাকইয়ং এলাকায় থাকা এই বিমানবন্দরটি টেবিল টপ বিমানবন্দর এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১৭০০ মিটার। ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত এই বিমান বন্দরে ১৮ হাজার ৯৬৩ জন যাত্রী ৩২৮ টি যাত্রীবাহী বিমানের মাধ্যমে ওঠানামা করেছেন।
৩) ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দর : ১৯৫১ সালের ২৫ শে ডিসেম্বর কর্ণাটকের বাজপেতে এই বিমান বন্দরের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু। কর্নাটকের দুটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মধ্যে একটি হলো এই বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দরটি টেবিল টপ বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দরে প্রতিদিন দক্ষিণ ভারত, পশ্চিম ভারত এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি থেকে বিমান ওঠানামা করে। এই বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১৬১৫ মিটার।
এখনো পর্যন্ত এই বিমানবন্দরে দুটি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রথম বিমান দুর্ঘটনাটি হলো ১৯৮১ সালের ১৯শে আগস্ট। আর দ্বিতীয় দুর্ঘটনাটি হল ২০১০ সালের ২২শে মে। যে দুর্ঘটনায় বিমানের কর্মীরা সহ ১৫৮ জনের প্রাণহানি হয়।
৪) কোজিকোড বিমানবন্দর : সম্প্রতি গত শুক্রবার কেরলের এই বিমানবন্দরেই দুবাই থেকে আসা এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ১৯৮৮ সালের ১৩ এপ্রিল এই বিমান বন্দরের উদ্বোধন হয় এবং এই বিমানবন্দরটি ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তকমা পায়। এই বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ২৮৬০ মিটার।
এই বিমানবন্দরে একাধিক বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। প্রথম বিমান দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৬৯ সালের ১৭ জানুয়ারি, দ্বিতীয় দুর্ঘটনা ২০০৮ সালের ৭ ই নভেম্বর, তৃতীয় দুর্ঘটনা ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল। এরপর যথাক্রমে ১০ জুন ২০১৫, ২৫ এপ্রিল ২০১৭, ৪ আগস্ট ২০১৭ আর সম্প্রতি ৭ ই আগস্ট ২০২০।
আরও পড়ুন :- বিমান দুর্ঘটনায় জীবন দিয়ে অজস্র প্রাণ বাঁচিয়ে গেলেন বায়ুসেনার এই কম্যান্ডার
৫) লেংপুই বিমানবন্দর : মিজোরামের লেংপুই এলাকায় রয়েছে এই বিমানবন্দরটি। এই বিমানবন্দরটি একটি টেবিল টপ বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ২৫০০ মিটার। এই বিমান বন্দরে গত এক বছরে ২৩০৮৬ যাত্রী ২৫৮ টি বিমানের মাধ্যমে উঠানামা করেছেন। ২০১১ সালের মে মাসের ৪ তারিখ এই বিমানবন্দরে একটি বিমান দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়।