আজ থেকেই বাড়ির ধারে রাস্তায় এবং পাড়ার চারপাশে শুনতে পাচ্ছেন ফটকার আওয়াজ। এই আওয়াজ যেমন আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছে পুজো আপনার দোরগোড়ায় চলে এসেছে। আর তারই সূচনা হতে চলেছে মহালয়ার মাহেন্দ্রক্ষণ এর মাধ্যমে। আজ তাই সমগ্র ভারতবাসী বিশেষ করে হিন্দুরা বিশেষভাবে অপেক্ষা করছেন এই দিনকে ।কারণ এই দিন তাদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে নিয়ে আসে ।কারণ এই দিন পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয় তর্পণ।
তর্পণ এর পৌরাণিক ব্যাখ্যা
তর্পণ এর ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, পৌরাণিক যুগে শ্রীরাম যখন দেবী দুর্গার অকালবোধন করেছিলেন তার আগে তিনিও তার পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্য এই তিথিতে তর্পণ করেছিলেন। এছাড়াও মহাভারতে শোনা যায় কর্নের পৌরাণিক কথা। তিনি যেমন এক দানবীর ছিলেন তেমনি ছিলেন অনেক বড় মাপের যোদ্ধা ।তার মৃত্যুর পর তিনি যখন স্বর্গলোকে যান তখন তাকে খাদ্য হিসেবে দেওয়া হয় স্বর্ণ। এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানতে পারেন তিনি মর্তলোকে যখন ছিলেন তখন তিনি সারা জীবনই তার পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে
কোন খাদ্য প্রদান করেননি। তাই স্বর্গে তাকে স্বর্ণই খাদ্য হিসেবে দেওয়া হয়েছে। কর্ণ তখন জানান তিনি তার পূর্বপুরুষ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না এবং তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে তা করেননি। তার এই কথা শুনে কর্ণকে ১৬ দিনের জন্য মর্তলোকে পাঠানো হয় এবং তাকে তার পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে খাদ্য এবং অন্যান্য সকল জিনিস প্রদান করার অনুমতি দেওয়া হয়। এই পক্ষই পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত। আর তাই এই দিন পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে করা হয় তর্পণ। সাধারণত পিতৃমাতৃহীন ব্যাক্তিগন তাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে তাদের উদ্দেশ্যে অঞ্জলি, অন্ন এবং জল প্রদান করেন। সনাতন হিন্দু ধর্ম মত অনুযায়ী এই দিন সকল পূর্ব পুরুষদের আত্মাকে মর্তলোকে পাঠিয়ে দেয়া হয় অঞ্জলি এবং তর্পণ প্রদান গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে।
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী ব্যাখ্যা
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোকে বাস করেন। পিতৃলোক হলো স্বর্গ এবং মর্ত্যের মাঝামাঝি এক লোক ।এই লোকের অধীশ্বর হলেন স্বয়ং যমরাজ, যিনি মর্ত্যের যদি কেউ মারা যান তাকে পিতৃলোকে নিয়ে আসেন। নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী প্রজন্মের একজন যদি পিতৃ লোকে আসে তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গলোকের উদ্দেশ্যে গমন করে এবং তিনি পরমাত্মায় বিলীন হয়ে যান। এইভাবে তিনি শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের ঊর্ধ্বে উঠে যান ।আর এই জন্যই জীবিত ব্যক্তির পূর্ববর্তী প্রজন্মের তিন প্রজন্মের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়ে থাকে। সূর্য কন্যা রাশিতে প্রবেশ করলে পিতৃপক্ষের সূচনা হয়। এই সময় পূর্বপুরুষগণ পিতৃলোক ত্যাগ করে উত্তর পুরুষ লোকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন আবার সূর্য যখন বৃশ্চিক রাশিতে প্রবেশ করে তখন পূর্বপুরুষগণ পুনরায় পিতৃ লোকে ফিরে আসেন। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী এই দিন প্রেতকর্ম এবং শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান অর্থাৎ মৃত কর্ম সম্বন্ধীয় যাবতীয় কাজ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
মহালয়া অমাবস্যায় যা যা করণীয়
আজকের অমাবস্যা মহালায়া অমাবস্য নামে পরিচিত। এই অমাবস্যা শ্রাদ্ধ অন্যান্য মৃত কর্মজনিত সকল কাজ করার জন্য উপযুক্ত । আজকের দিন হল সেদিন যেদিন আপনার পূর্বপুরুষরা মর্তলোকে ফিরে আসেন আপনার কাছে তর্পণ গ্রহণ করার জন্য ।আর যদি আপনি আপনার পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে এমন কিছু করেন যা তারা সাদরে গ্রহণ করবেন এবং যা গ্রহণ করলে তারা মানসিকভাবে শান্তি পাবেন তাহলে আপনার ভবিষ্যৎ জীবন অনেক উন্নত তথা সকল প্রকার বাধা বিপত্তি মুক্ত হবে ।
মহালয়ার বিশেষ টোটকা
আজকে আপনাকে যা করতে হবে তা হলো খুবই একটি সহজ উপায়। আর এই সহজ উপায় অবলম্বন করলে আপনার জীবন থেকে দুঃখ যেমন দূরে সরে যাবে তেমনি আপনার জীবনে ফিরে আসবে সকল প্রকার সুখ-শান্তি। আপনার অর্থকষ্ট যেমন কমে যাবে তেমনি আপনার সকল রকম বিপদ থেকে আপনি পাবেন মুক্তি। এ জন্য আপনাকে প্রথমে যা করতে হবে তা হল আপনাকে বানাতে হবে একটি বড় আকারে রুটি ।এই রুটি বানানোর পর সেই রুটিটি সমান চারটি টুকরো করে নেবেন এবং প্রতিটি টুকরোতে দেবেন একটি করে লাড্ডু বা মিষ্টি এরপর আপনাকে যা করতে হবে তা হল।
প্রথম টুকরোটি আপনি আপনার বাড়িতে থাকা গরু বা গো মাতা কে খাওয়াবেন যদি আপনার বাড়িতে কোনো গরু না থাকে তাহলে নিকটবর্তী জায়গায় থাকা কোন গরুকে তা খাইয়ে আসবেন। গরুকে খাওয়ানোর সময় আপনার মনের যাবতীয় ইচ্ছা গরুর উদ্দেশ্যে জানান এবং আপনার সকল বাঁধা বিপত্তি সম্বন্ধেও জানাবেন। হিন্দু শাস্ত্রে গরুকে দেবীর বা মাতার সমতুল্য স্থান দেওয়া হয় ।তাই গরুর সেবার মাধ্যমে আপনি আপনার পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ লাভ করতে পারবেন । এটা করলে আপনার জীবনে কোনদিন অর্থের অভাব হবে না
দ্বিতীয় টুকরোটি আপনাকে কালো কুকুরকে খাওয়াতে হবে ।কালো কুকুরকে খাওয়ানোর মাধ্যমে আপনি যেমন যমরাজ বা ধর্মরাজকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন, তেমনি আপনার পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ লাভ করতে পারবেন। এই ভাবে আপনার জীবনে ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হবে এবং আপনি সকল প্রকার অসৎ কর্ম থেকে দূরে থাকবেন এছাড়াও আপনার দীর্ঘায়ু হবে বা আয়ু বৃদ্ধি পাবে। কালো কুকুর না পেলে যেকোনো কুকুরকে খাওয়াতে পারেন।
তৃতীয় টুকরোটি খাওয়াতে হবে কালো কাককে ।কালো কাককে উদ্দেশ্যে করে এই দ্বিতীয় টুকরোটি আপনাকে দিতে হবে তাহলেই আপনার জীবন থেকে সকল রকম বাধা-বিপত্তি দূরে সরে যাবে।
আরও পড়ুন : বাস্তুমতে গৃহে সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য শুভ আর অশুভ গাছ কোনগুলি
চতুর্থ টুকরোটি আপনার বাড়িতে আগত বা রাস্তায় বা যদি পাড়ার মোড়ে কোন ভিখারি থাকে তাকে দিয়ে আসতে হবে। ভিখারিকে দিয়ে আসার পর মনে রাখবেন সে যেন নিজে তা ভক্ষণ করে। বা যদি কোন অভুক্ত মানুষ কেউ তা দান করে থাকেন তাহলে আপনি সমান পুণ্য অর্জন করবেন। এক্ষেত্রে আপনার কাজে কোন বাধা আসবে না যদি আপনি এই কাজটি করে থাকতে পারেন।
উপরের বর্ণিত টোটকাটি করার সময় লক্ষ্য রাখবেন আপনার টোটকা করার সময় অর্থাৎ রুটি করা থেকে সকল বর্ণিত প্রাণীকে রুটি খাওয়ানোর সময় যেন কেউ এই বিষয়ে ভ্রুনাক্ষরেও কোন কিছু টের না পায় অর্থাৎ এটি যদি কেউ জানতে পারে তাহলে তা কিন্তু কার্যকরী হবে না।