পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে খতম হায়দরাবাদের ২৬ বছর বয়সী পশু চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার চার অভিযুক্ত। শুক্রবার ভোররাতে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষে এই ঘটনা ঘটে। সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের তরফ থেকে এমনটাই জানানো হয়েছে।
Telangana Police: All four people accused in the rape and murder of woman veterinarian in Telangana have been killed in an encounter with the police. More details awaited. pic.twitter.com/AxmfQSWJFK
— ANI (@ANI) December 6, 2019
গত ২৭শে নভেম্বর শামসেরাবাদের টোলপ্লাজার কাছে ২৭ বছর বয়সী ওই তরুণী, পেশায় পশু চিকিৎসককে ধর্ষণ করে পুড়িয়ে মারা হয়। ঘটনার পরই অভিযুক্ত চার জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় তেলেঙ্গানা পুলিশ। শুক্রবার ভোররাতে অভিযুক্তদের নিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় সেই দিন রাতে ঠিক কি হয়েছিল তার পুনর্নির্মাণ করতে।
পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, পুনর্নির্মাণের সময় অভিযুক্ত ওই চার যুবক পালানোর চেষ্টা করে। সেসময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। সেই সংঘর্ষেই মৃত্যু হয় হায়দরাবাদে পশু চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত চারজনের।
ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত মহম্মদ আরিফ, জল্লু শিবা, জল্লু নবীন ও চিন্তাকুন্তা চেন্নাকেশাভুলু নামে চার যুবককে গত শনিবার ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেন তেলঙ্গানার শাদনগরের ম্যাজিস্ট্রেট। তাদের রাখা হয় তেলঙ্গানার চেরাপল্লীর সেন্ট্রাল জেলে। ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্টে তাদের বিচার হবে বলে সিদ্ধান্তও হয়েছিল।
সাইবারাবাদ পুলিশের দাবি, ওদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল৷ সেই সময়ই পালাতে চেষ্টা করে৷ সাইবারাবাদ পুলিশের কমিশনার ভি সি সজ্জানারের কথায়, ‘ওদের কে আমরা জেরা করছিলাম৷ কী ভাবে ঘটনাটি ঘটায় ওরা৷ হঠাত্ ওরা আমাদের উপর হামলা চালায়৷ তারপর পালাতে শুরু করে৷ আমরা ওদের আত্মসমর্পণ করতে বলি৷ ওরা শোনেনি৷ কোনও উপায় না দেখে আমরা গুলি চালাই৷ ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ৪ জনের৷’
Hyderabad: Senior Police officials arrive at the site of the encounter. All four accused in the rape and murder of woman veterinarian in Telangana were killed in an encounter with the police when the accused tried to escape while being taken to the crime spot. https://t.co/TB4R8EuPyr pic.twitter.com/7fuG87MP0m
— ANI (@ANI) December 6, 2019
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মহিলা পশু চিকিৎসকে প্রথমে অপহরণ করে ধর্ষণ করে এই চার অভিযুক্ত। পরে শ্বাসরোধ করে খুন করে চিকিৎসকের দেহ পুড়িয়ে দেয় তারা। রীতিমত পরিকল্পনা করেই ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছিল মহিলা পশু চিকিৎসককে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ মহিলা পশু চিকিৎসককে সামসাবাদ টোল প্লাজায় স্কুটি পার্কিং করতে দেখেন ওই চার যুবক। তারা তখনই তরুণীকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে। রাত ৯টার পর নিজের কাজ সেরে আবার টোল প্লাজায় ফেরেন যুবতী চিকিৎসক। তিনি দেখেন স্কুটির চাকা ফুটো হয়ে গিয়েছে। কীভাবে বাড়ি ফিরবেন, কিছুই বুঝতে পারছিলেন না তিনি। সেই সময় দুই অভিযুক্ত তাঁর কাছে আসে। স্কুটি সারিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয় তারা। দু’জনে গ্যারেজ খোঁজার অছিলায় স্কুটি নিয়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ পর তারা স্কুটি নিয়ে ফিরে আসে। দোকান বন্ধ বলে চিকিৎসককে জানানো হয়। তারপরই চলে পাশবিক অত্যাচার।
ঘটনার পর ক্ষোভে ফেটে পরে গোটা দেশ। দেশের হেন কোনো প্রান্ত নাই যেখানে মানুষ এই ঘটনার প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠেনি। সব জায়গাতেই অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবি তোলা হয়। অবশেষে আজ তেলেঙ্গানা পুলিশ জানায়, সেদিন রাতের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে যাওয়ার সময় ওই চার অভিযুক্ত পুলিশের সাথে লড়াই করে জাতীয় সড়ক ৪৪ এর উপর দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। তখনই তাদের গুলি করে খতম করা হয়।
পুলিশের ভূমিকায় খুশি হায়দরাবাদের নির্যাতিতার বাবা। পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি জানিয়েছেন, ‘রাত জেগেই বিগত কয়েকদিন কেটেছে আমাদের। শধু আমরাই নই, হায়দরাবাদ, গোটা দেশের অবস্থা একই। ভারত রাগে ফুঁসছে। অভিযুক্তরা পালাতে গিয়েছিল, তখন পুলিশ গুলি করে ঠিক কাজ করেছে।’ অভিযুক্তদের এনকাউন্টারে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই মানুষ সাইবারাবাদ পুলিশ কমিশনারেটের বাইরে জড় হন। তাদের স্লোগানে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশের প্রশংসা শোনা যায়।