বেশ কিছু মাস থেকেই শুভেন্দু অধিকারীর (Shubhendu Adhikari) সাথে দলের একটা দ্বন্দ্ব প্রকাশ পাচ্ছিল।অবশেষে ১৯ ডিসেম্বর শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) এর উপস্থিতিতে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) ছেড়ে বিজেপিতে (BJP) যোগ দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের অত্যন্ত পরিচিত মুখ শুভেন্দু অধিকারী।
বিজেপি যোগ দিয়েই সভার মঞ্চে নিজের পুরোনো দল, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এবং তার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) নিশানা করলেন তিনি।তার কথায়, দলে চলছে পরিবারতন্ত্র। অমিত শাহ এর উপস্থিতিতে তার গলায় শোনা গেছে ‘‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও।’’ কিন্তু এর উত্তরও দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। পরিবারতন্ত্র নিয়ে তার কথা তাকেই উল্টে ফিরিয়ে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস।
জানা যাচ্ছে শুভেন্দু অধিকারীর সাথে তৃণমূল কংগ্রেসের দূরত্ব তৈরি হওয়ার মূল কারণ অভিষেক বন্দ্যোপধ্যায় এর ক্ষমতা বৃদ্ধি। বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি শুভেন্দু অধিকারী। আর তাতেই তৈরি হয় ক্ষোভ।তার বিভিন্ন বক্তব্যেও উঠে এসেছে এই প্রসঙ্গে। এইদিন প্রাক্তন দলের কর্মীদের কাছে তার দেওয়া খোলা চিঠিতেও উঠে এসেছে এমনই ইঙ্গিত।কিন্তু এবার তাকেই পাল্টা নিশানা করে পরিবারতন্ত্রের খোঁচা দিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
কাঁথি, নন্দীগ্রাম অঞ্চলে বহু যুগ ধরেই দাপট আছে অধিকারী পরিবারের। এই পরিবারের প্রায় সব সদস্যই বংশ পরম্পরায় রাজনীতির অংশ।তার বাবা শিশির অধিকারী এবং ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী দুজনেই তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে সাংসদ এর পদে আছেন।এই সব প্রসঙ্গ বলে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বোঝাতে চাইলেন যে অধিকারী পরিবারেও কিন্তু বহাল তবিয়তে বর্তমান পরিবারতন্ত্র।শুধু তাই নয়, শুভেন্দু অধিকারীর পাশাপাশি এদিন অমিত শাহ কেও নিশানা করলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ছেলে জয় শাহ কীভাবে বিসিসিআই-এর সেক্রেটারি হলেন সেই নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এই প্রথমবার নয় যখন বিজেপির তরফ থেকে ভাইপো প্রসঙ্গকে সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমন করা হয়েছে। এইদিন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করলেন যে কখনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের কেউ মুখ্যমন্ত্রী হতে আগ্রহী নন। রাজ্যের মানুষই তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসিয়েছেন।
শনিবার বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সময় রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে খোলা চিঠিতে শুভেন্দু অধিকারী প্রাক্তন দলের স্থবিরতা ও ব্যক্তিস্বার্থ নিয়ে সরব হন।এই কথারও উত্তর দিয়েছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দুকে ‘কাপুরুষ’ বলে সন্মধ্বন করে তিনি বললেন যে শুভেন্দু অধিকারী বর্তমানে যেভাবে অমিত শাহ এর সামনে মাথা নত করে আছেন তেমনই গত ১০ বছর তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে মাথা নীচু করে ছিলেন শুধুমাত্র ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই।
শুভেন্দু অধিকারীর দিকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন ছোড়েন ২০০৪ সালে লক্ষ্ণন শেঠের কাছে শুভেন্দুর নির্বাচনে হেরে যাওয়ার কথা তুলে।সেই অঞ্চলে শুভেন্দু বড় নেতা বলেই দাবি করেছেন নিজেকে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, তেমন হলে ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৪ সালে কেন হেরে গেলেন তিনি?শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ আনেন তিনি।
শুভেন্দু অধিকারীর সাথেই এইদিন আরও বেশ কিছুজন তৃণমূল বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দেয় এবং তার তালিকা প্রকাশ করে বিজেপি। কিন্তু কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন এই তালিকায় নাম থাকা ওয়েজুল হক এবং বিধাননগরের প্রাক্তন কাউন্সলির দেবাশিস জানা বিজেপিতে যাননি।এই কথার প্রসঙ্গ টেনে বিজেপিকে মিথ্যাবাদীর দল বলেছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং শুভেন্দু অধিকারীকে একসাথে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের মাঠে বাইরে থেকে লোক এনেই সভা প্রাঙ্গণ ভর্তি করতে পারেনি বিজেপি।সব মিলিয়ে কথা, পাল্টা কথার মধ্যে উত্তাপ বাড়ছে বাংলার।