শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাণী হলো ভগবত গীতা। হিন্দু ধর্মে ভগবত গীতা একটি অত্যন্ত মূল্যবান গ্রন্থ। ভগবত গীতার বাণী যদি কেউ জীবনে অনুসরণ করেন তার জীবনের সফলতা কেউ আটকাতে পারবেনা। বলা হয় জীবনে যদি কোন সমস্যা এসে থাকে, যদি হতাশা গ্রাস করে তাহলে ভগবত গীতা পাঠ করো। পৃথিবীতে এমন কোন সমস্যাই নেই যার সমাধান ভগবদ্গীতায় নেই। এটি একটি দর্শন। যা অতীতেও সকল বিপ্লবীদের অনুপ্রাণিত করেছে বর্তমানেও (এপিজে আব্দুল কালাম এর মত) অনেক মহৎ প্রাণ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও অনুপ্রাণিত করবে।
ভগবদ্গীতা যিনি সঠিকভাবে পাঠ করবেন এবং যিনি যথাযথ ভাবে এই গীতার অর্থ উপলব্ধি করবেন তিনি নিশ্চিত ভাবেই একজন আদর্শ মানুষ হয়ে উঠবেন। তাই সকল ধর্ম বর্ণ জাতি ভেদাভেদ ভুলে প্রতিটি মানুষের উচিত ভগবত গীতা পাঠ করা। ভাগবত গীতা আমাদের জীবন সম্পর্কে জ্ঞান দেয়।এই জীবন সম্পর্কে জ্ঞান আমাদের প্রত্যেকটি মানুষের জন্য ভীষণ দরকার। উন্নত চরিত্র ও উদার মানসিকতা তৈরিতে এই ঞ্জান ভীষণ ভাবে সাহায্য করে।
কর্ম ফলের আশা ত্যাগ করার শিক্ষা :- আমরা কোন কাজ করার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের মনের মধ্যে সৃষ্টি হয় সেই কাজটির ফলের প্রতি কামনা। যেমন ধরুন আপনি চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভেবে নিয়েছেন চাকরিটি আপনি পাচ্ছেন। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেল লিস্টে আপনার নাম নেই শেষের দিকেও।তখন? আপনার মন হতাশায় ভরে উঠবে। পরবর্তীতে চাকরির পরীক্ষা নেওয়ার মতো মনের জোর আপনি হারিয়ে ফেলবেন।

তাই ভগবত গীতা বলে কর্ম ফলের আশা ত্যাগ করে কর্ম করে যাওয়া উচিত। কারণ কর্মের ফল আমাদের হাতে থাকে না। একমাত্র কর্মই আমাদের হাতে থাকে। তাই কর্মফলকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা। কর্ম ফলের আশা ত্যাগ করে যদি আমরা একই কর্ম বারবার করে যাই তাহলে জীবনে বিফলতা এলেও আমরা ভারাক্রান্ত হব না। আর এইভাবে আশা ত্যাগ করে কর্ম করতে করতে একদিন আমরা সফল হবই।
জীবনে শান্তি আসবে কীভাবে? :- ভগবত গীতায় বলা হচ্ছে যে হিংসা, লোভ, কামনা ত্যাগ করলে আপনি জীবনে শান্তি খুঁজে পাবেন। প্রকৃতপক্ষে আমরা তখনই অসুখী হয় যখন আমরা নিজেদের জীবনের সঙ্গে অন্য কারোর জীবনের তুলনা করি। অন্য কারো সুখে আমরা ঈর্ষান্বিত হই বা হিংসা বোধ করি তখনই আমাদের নিজেদেরকে দুঃখী বলে মনে হয়। সুখ শান্তি পেতে গেলে সবার আগেই লোভ-লালসা হিংসা কামনাকে বর্জন করতে হবে।

জীবনে সুখী হবেন কীভাবে? কারোর থেকে কিছু পাওয়ার আশা ত্যাগ করুন। নীরবে শুধু নিজের কর্তব্যটুকু করে যান। জীবনের সম্পদ বা অসুবিধা কিছুই আপনি নিজে বেছে নিতে পারেন না। জীবন আপনাকে যা দেবে সেটাই আপনার মেনে নেওয়া প্রয়োজন। এই বিষয়গুলি আপনার পূর্বকৃত-কর্মফলের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। তাই কারোর কাছে কিছু আশা করবেন না। সুখী হওয়ার জন্য এটাও একটি অন্যতম পন্থা।
ক্রোধ ত্যাগ করা :- ভাগবত গীতায় বলা আছে ক্রোধ মানুষের জন্য ক্ষতিকারক। ক্রোধকে আসুরিক শক্তি বলা হয়। দেখুন আজকের দিনে ডাক্তারও বলছেন যদি সুস্থ থাকতে চান রাগ উত্তেজনা ভুলে যান।আশা করি বুঝতেই পারছেন ভগবত গীতার মধ্যে কত বড় বিজ্ঞান রয়েছে।

কর্মের তাৎপর্য উপলব্ধি করা :- ভগবত গীতায় বলা হচ্ছে প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ ও কর্ম অনুসারে ফল ভোগ করে। তাই সৎ ব্যক্তিদের জীবনে দুঃখ দেখে কখনো অসৎ জীবন ধারণ করা উচিত নয়। মনে রাখবেন সৎ জীবনযাপন করাটাই হলো সুখের শান্তির।
গভীরভাবে ভেবে দেখতে গেলে মহাভারতে যুধিষ্ঠির ও পঞ্চপান্ডব যখন ১৩ বছর বনবাস ভোগ করছিলেন তখন ওনারা ভোগ করছিলেন অতিশয় কষ্ট। তখন কৌরবরা কত পাপ করার পরেও রাজ্যের মধ্যে ভোগ বিলাসে মত্ত ছিলেন। কিন্তু ভেবে দেখুন তাদের মনে শান্তি ছিল না,ছিলনা সুখ। দ্রৌপদীর অভিশাপ, পঞ্চপান্ডবের করা প্রতিজ্ঞা তাদের মনের মধ্যে ভয়ের সঞ্চার করেছিল। আবার কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের শেষে এই পাপের জন্যই কৌরবরা নির্বংশ হয়ে গেল। তাই বলা হয় ভগবানের বিচার দেরিতে হয় কিন্তু আদতে যথার্থই হয়।
সবকিছুই পূর্বনির্ধারিত :- ভগবত গীতায় বলা হচ্ছে যা কিছু হচ্ছে সবকিছুই পূর্বনির্ধারিত। বলা হয় যে পরমেশ্বর ভগবানের ইচ্ছা ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়ে না। তাই যা হচ্ছে সবকিছুই মঙ্গলময়। হয়তো আপনি তার খারাপ প্রভাবটি দেখছেন মঙ্গলময় প্রভাবটি দেখতে পাচ্ছেন না! কিন্তু একটা দীর্ঘ সময় যাওয়ার পর একটি খারাপ ঘটনার মধ্য দিয়েও আপনি ভালো প্রভাব দেখতে পাবেন।
যেমন ধরুন কোনও বন্ধু আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো। আপনি ভাবলেন যে এটি আপনার সাথে খুব বড় খারাপ হলো। কিন্তু ভেবে দেখুন আজ যে বন্ধুটির দ্বারা আপনার ছোট ক্ষতি হলো ভবিষ্যতে সেই বন্ধুটি আপনার আরো বড় কোন ক্ষতি করতে পারতো তার আগেই ঈশ্বর আপনাকে সচেতন করে দিলেন। আপনি যা অনিষ্ঠ ভাবছেন তা আসলে আপনার মঙ্গলের জন্যই।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা :- ভগবত গীতায় বলা হয় যে অন্যায় দেখতে গেলে অবশ্যই প্রতিবাদ করতে হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে হবে। চুপচাপ অন্যায় সহ্য করার থেকে বড় পাপ আর কিছু হয়না। যে পাপ ভীষ্ম, দ্রোণাচার্য এনারা করেছিলেন। যার ফলে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে এদের বীরত্ব কোনো কাজে আসে না।
সংযত আচরণ :- অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা অবশ্যই উচিত। কিন্তু তার সাথে মাথায় রাখতে হবে যে আপনার আচরণে, ব্যবহার এবং কথার দ্বারা যেন কোন নিরাপরাধ ব্যথিত না হয়। গীতায় বলা আছে বিনয় এবং অহিংসায় মানুষের ধর্ম। কিন্তু অন্যায় দেখলে তা মুখ বুঝে কখনোই সহ্য করা উচিত নয়।
আরও পড়ুন :- গীতার এই ১২টি উপদেশ আপনার জীবন বদলে দেবে
অর্থাৎ কখন আপনি আপনার আচরণের মধ্যে বিনয় আনবেন এবং কখন গর্জে উঠবেন তা আপনাকেই নির্ধারণ করতে হবে। স্থান কাল ও পাত্র বিশেষে এই দুটিকে নির্বাচন করতে হবে। দুর্মুখের সাথে যেমন বিনয় চলবে না,তেমনই স্বভাবতই দুর্বল চিত্তের সাথে রূঢ় আচরণ করাও চলবে না। অর্থাৎ আপনার যাবতীয় আচরণকে সংযত করার শিক্ষা দেওয়া হয় ভগবত গীতায়।
ভগবত গীতা আমাদের সকল জিনিসের মধ্যেই সেই মঙ্গলময় ইতিবাচক জিনিসটি খোঁজার কথা বলে থাকে। তাই ভাগবত গীতাকে যিনি উপলব্ধি করবেন তিনি কখনো হতাশাগ্রস্থ হবেনা, কখনো জীবন যুদ্ধে হেরে যাবেন না পরিশেষে তার জয় কখনো কেউ আটকাতে পারবেনা।