ছোটখাটো শারীরিক সমস্যাকে আমরা এড়িয়ে যাই যা পরে গিয়ে বড় শারীরিক সমস্যা তৈরি করে।এক্ষেত্রে শরীরের যে অংশটি সবচেয়ে বেশি সমস্যা তৈরি করে তা হল কিডনি। আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন যন্ত্র হল আমাদের দুটো কিডনি বা বৃক্ক। কোমরের কাছেই এই যন্ত্রের অবস্থান।এই যন্ত্র আমাদের শরীরে রক্তকে পরিস্রুত করে। আর রক্ত হলো আমাদের শরীরে খাদ্য থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের ও দূষিত পদার্থ অপসারণের মাধ্যম। কিডনি মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। একটু অসতর্কতা হলে এই অঙ্গটির বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যা পরবর্তীতে কিডনি ড্যামেজের মত সমস্যাও হতে পারে। তবে কিছুটা সচেতন হলে কিডনির সমস্যা অনেকেটা প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই জেনে নিন কিডনি ভালো রাখার ৭ টি সহজ উপায়
যদিও পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে কিডনি সংক্রান্ত রোগের খবর কম দেখা যায় কিন্তু বর্তমানের এই যুগে কিডনি সংক্রান্ত রোগের থাবা নারী পুরুষ সকলের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে।যদিও আমরা জানি যে একটি কিডনি দিয়েই আমাদের শরীরের রক্ত পরিস্রুতকরনের কাজ করতে পারা যায় তবুও এক কিডনির থেকে দুই কিডনি সবসময় ভালো ও তার কর্মদক্ষতা অনেক বেশি।এক সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে পুরুষদের তুলনায় মহিলারা বেশি কিডনি দাতা হয়ে থাকে। আর পুরুষেরা বেশি হয়ে থাকে কিডনি গ্রহীতা। তাই আমাদের কিডনি ঠিক রাখতে মেনে চলতে হবে বিশেষ কিছু সাবধানতা। আজ সেই সব কিছু সাবধানতা নিয়ে আমরা আলোচনা করবো
ক্যালোরি যুক্ত খাবার
আমরা অনেকেই জানি না আমাদের সারাদিনে কত ক্যালোরি খাবারের প্রয়োজন।আর তাই যখন আমাদের খুব খিদে পায়, তখন আমরা অনেক বেশি খাবার1 একসঙ্গে খেয়ে নি।আর এতেই শুরু হয় সমস্যা।অনেক বেশি খাবার খাওয়ার ফলে শরীরের আভ্যন্তরীন জৈবিক কাজের মধ্যে তৈরি হয় অস্বাভাবিকতা।শরীর তার জৈবিক কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চয় করে এই খাবার থেকে আর বাকি শক্তি বা খাবারের অংশকে ফ্যাট হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় জমা করতে থাকে।যেমন ঘাড়ে,কাঁধে,পেটে ,কোমরের দিকে ও আরও নানান জায়গায়।আর এইভাবেই বাড়তে থাকে শরীরের স্বাভাবিক ওজন।আপনি তখন হন স্থূলতার শিকার।আর স্থূলতা থেকেই সৃষ্টি হয় ডায়াবেটিসবা উচ্চ রক্ত চাপের মতো রোগের।যা শরীরে কিডনি সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
তাই সারাদিনে আপনার কতো ক্যালোরি খাবার প্রয়োজন তা সম্পর্কে আজই সচেতন হন।সহজেই আপনি জানতে পারেন আপনার বডি মাস ইনডেক্স বা BMI। আপনার শরীরের ওজনকে আপনার উচ্চতার বর্গের দিয়ে ভাগ করুন।তবে মনে রাখবেন উচ্চতা মিটারে ও ওজন কেজিতে প্রকাশ করতে হবে।আর এই ভাগফল যদি ২৫ এর কম বা সমান হয় তাহলে আপনি জানবেন আপনার সারাদিনের খাবার গ্রহণ ঠিক মতোই হচ্ছে।কিন্তু ২৫এর বেশি হলে আপনি আপনার শরীরের প্রয়োজনের বেশি খাবার গ্রহণ করেছেন।আর ২৫ এর কম হলে কম খাবার গ্রহণ করেছেন।চেষ্টা করুন BMI ২৫ এর মধ্যে।আর তাহলেই আপনার শরীরে ডায়াবেটিস বা উচ্চরক্তচাপ তৈরি হবে না।ওজন থাকবে নিয়ন্ত্রিত।কিডনি জনিত রোগ থেকে থাকবেন দূরে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য
তবে যাদের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ ইতিমধ্যেই আছে তারা নিজেদের নিন বিশেষ যত্ন।আপনারা নিজেদের শরীরে রক্তে ইউরিয়ার ও ক্রিয়েটিনিন মাত্রা নিয়ন্ত্রিত রাখার চেষ্টা করুন এবং মূত্রে প্রোটিন ও আলবুমিন এর মাত্রা সঠিক আছে কি না তা নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে জানুন।এক্ষেত্রে চেষ্টা করুন HbA1C<৭.০ এবং রক্তচাপ <১৩০/৮০ তে রাখার চেষ্টা করুন।
ব্যায়াম ও এক্সারসাইজ
আমাদের শরীরে ওজন বাড়ার মুখ্য কারণ আমাদের দৈহিক কাজের পরিমান কমে যাওয়া।আজকের ব্যস্ত জীবনে আমরা সাইকেল ছেড়ে গাড়িতে, সিঁড়ি ছেড়ে লিফট নিচ্ছি।আমরা রাতে ঘুমাচ্ছি গভীর রাতে ১২টার পর।তারফলে সকালে উঠতে পারি না আমরা অনেকেই।যার ফলে আমাদের করা হয় না প্রাতঃ ভ্রমণ, রানিং, জগিং, বা ফ্রি হ্যান্ড নানা ব্যায়াম।এছাড়া যোগাসন ও অন্যান্য ব্যায়াম না করার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রিত থাকে না, ফলে উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগ শরীরে জুড়ে বসে।তাই কাজের ও ব্যায়ামের মধ্যে রাখুন নিজেকে।কম দূরত্ব যাওয়ার জন্য সাইকেল ব্যবহার করুন।নিয়মিত প্রতিদিন ৩০মিনিট হাঁটুন জোরে জোরে যাতে আপনার শরীরে ঘাম উৎপন্ন হয়।তাহলেই শরীরের বাড়তি মেদ ঝরবে ।শরীর থাকবে সুস্থ ও কিডনি সংক্রান্ত রোগের সম্ভাবনা কম দেখা যাবে।।
পেইন কিলার, এন্টিবায়োটিক খান ডাক্তারের পরামর্শে
আমরা সাধারণত কোনো ব্যথা কমাতে বিভিন্ন পেইন কিলার ট্যাবলেট এবং সর্দি কাশির মতো ভাইরাল রোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক খেয়ে থাকি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই।আর এইসব ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে আমাদের কোনো ধারণা নেই।আর তাই যথেচ্ছ এইসব ওষুধ খেয়ে আমরা আমাদের কিডনিকে করছি খারাপ।কিডনির উপর চাপ বাড়ে এইসব ওষুধের ক্ষতিকর রাসায়নিক কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্থ করে।আর একটানা এইসব ওষুধ খেলে আমাদের শরীরে কিডনির গণ্ডগোল শুরু হয়।তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া যেকোনো প্রকার ব্যথা কমানোর ওষুধ ও এন্টিবায়োটিক ওষুধ না খাওয়া উচিত।
আরো পড়ুন : মানব দেহের এমন কিছু অজানা তথ্য যা আপনি জানেন না
পানীয় জল
আমরা রোজই জল পান করি শুধু তেষ্টা মেটানোর জন্য।কিন্তু আপনি কি জানেন একজন সুস্থ স্বাভাবিক লোকের কতটা জলের প্রয়োজন।সাধারণ ভাবে একজন সুস্থ স্বাভাবিক পূর্ন বয়স্ক লোকের একদিনে ৩-৪ লিটার জলের প্রয়োজন।নারী ,পুরুষ বা কাজের ধরন অনুযায়ী এর পরিবর্তন হতে পারে।কিন্তু তবুও আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোকেরাই ৩-৪ লিটার জল পান করি না।তাই আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় জলের পরিমান কমে যায় ,ফলে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়।কিডনি যেহেতু রক্তকে পরিস্রুত করে ,তাই কিডনির উপর তৈরি হয় বাড়তি চাপ।আর একটানা এই বাড়তি চাপের ফলে কিডনিতে দেখা যায় নানান সমস্যা।এমনকি কিডনিতে তৈরি হয় পাথর।তাই আমাদের নিয়ম করে প্রতি ঘন্টায় এক গ্লাস জল পান করা উচিত।এর ফলে যেমন শরীরের প্রয়োজনীয় জলের যোগান থাকে,তেমনই কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
আরো পড়ুন: হার্টের চিকিৎসায় ভারতের সেরা ১০ টি হাসপাতাল
সময়ে মূত্রত্যাগ করা
আমরা অনেকেই বিশেষ করে মহিলারা কাজের সূত্রে বাইরে থাকলে বা রাস্তাঘাটে বেরোলে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে মূত্রত্যাগ করি না।একটানা অনেকক্ষন মূত্র মূত্রাশয়ে জমা হয়ে থাকলে তা মূত্রাশয়ের উপর বাড়তি চাপের সৃষ্টি করে।আর এই চাপের ফলে কিডনির স্বভাবিক কর্ম দক্ষতা হ্রাস পেতে থাকে।সাধারণত সমীক্ষা করে জানা গিয়েছে একজন সুস্থ স্বাভাবিক ব্যক্তির সারাদিনে ৬-৭বার মূত্রত্যাগের ইচ্ছা জাগে বা মূত্রত্যাগ হয়।কিন্তু অনেকেই আমরা সারাদিনে ৩-৪ বারের মতো মূত্রত্যাগ করি।তারফলে মূত্রাশয় ও কিডনি উভয়ের উপরই চাপের সৃষ্টি হয়।আর একটানা এই কম মূত্রত্যাগের অভ্যাস তৈরি হলে কিডনি খারাপ বা কিডনিতে নানা সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুন বেড়ে যায়।তাই প্রকৃতির ডাকে সাড়া পেলে তা না চেপে শৌচাগারের সন্ধান করে অবশ্যই মূত্রত্যাগ করুন।
আরো পড়ুন : ভারতের সেরা ১৩ টি হাসপাতাল – সুখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য
খাদ্যে প্রোটিনের পরিমান নিয়ন্ত্রিত রাখা
আজকালকার ব্যস্ত জীবনে আমরা রাস্তার তেলমশলা যুক্ত খাবার থেকে শুরু করে খাচ্ছি বিভিন্ন ফাস্টফুড খাবার।এছাড়াও বিভিন্ন নরম পানীয় বিভিন্ন সময়ে পান করছি। বিভিন্ন প্রাণীজ প্রোটিন ছাড়া আমাদের দিনের খাবার সম্পূর্নই হয় না।মাছ,চিকেন, মাটন, বিফ, পর্ক, এইসব নানা প্রাণীজ প্রোটিন কিন্তু আমরা পরিমান মতো খাই না।সবসময় যথেচ্ছ ভাবে বেশি খেয়ে থাকি আর তাই আমাদের কিডনিতে তৈরি হচ্ছে নানান সমস্যা।প্রোটিনে থাকে আমাইনো আসিড।যা অত্যধিক হারে শরীরে তৈরি হলে কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্থ করে।ফলে দেখা যায় নানান সমস্যা আমাদের কিডনিতে।তাই কিডনি ঠিক রাখতে প্রাণীজ প্রোটিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত করতে হবে।তাহলেই ঠিক থাকবে আমাদের বহু মূল্যবান দুটো কিডনি বা বৃক্ক।
আমাদের প্রতিটি পোস্ট WhatsApp – এ সুনিশ্চিত করতে ⇒ এখানে ক্লিক করুন