‘ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড’ শো খ্যাত জনপ্রিয় অভিযাত্রী বিয়ার গ্রিলস। শুধু টিভির পর্দায় নয়, তাঁর ব্যক্তিগত জীবন হার মানায় রোমাঞ্চকেও। গ্রিলস একই সঙ্গে চিফ স্কাউট, অভিযাত্রী, লেখক, প্রেরণাদায়ক বক্তা এবং টেলিভিশন উপস্থাপক। দুঃসাহসিক নানা কর্মকাণ্ড করার জন্যই বিখ্যাত গ্রিলসের উপাধি- বর্ন সারভাইভার বা জন্ম যোদ্ধা। দুঃসাহসিক এই অভিযাত্রীর জীবনের কিছু অজানা তথ্যের তালিকা করেছি আমরা। বিয়ার গ্রিলস সম্পর্কে ১০ টি অজানা তথ্য যা আপনি জানেন না
১) আসল নাম
বিয়ার গ্রিলসের আসল নাম এডওয়ার্ড মাইকেল বেয়ার গ্রিলস। বড় বোন লারা ফসেট টেনিস কোচ। ওয়াইল্ড স্পোর্টসের ভক্ত হওয়ায় ‘বেয়ার’ নামটি তিনিই দেন ভাইকে।
২) ভারতীয় সেনা
টানা বেশ কিছু বছর বিয়ার গ্রিলস ভারতে কাটিয়েছেন। পার্বত্য হিমালয়ে ট্রেকিং করেছেন। সিকিম এবং দার্জিলিংয়েও কাটিয়েছেন কয়েক বছর। সিকিম অঞ্চলে হিমালয়ে হাইকিংও করেন। ছোটবেলা থেকেই অ্যাডভেঞ্চারের শখ। সেনাবাহিনীর অঙ্গ হলে স্বপ্নপূরণ হবে দেখে স্কুল জীবন শেষ করেই ভারতীয় সেনা বাহিনীতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন।
একটি ইণ্টারভিউয়ে ভারত এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে গ্রিলস বলেন, ‘বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগে আমি বেশ কিছু বছর ভারতে কাটিয়েছি। পশ্চিমবঙ্গ এবং তার আশপাশের দার্জিলিং, সিকিমে ট্রেকিং করেছি। ভারত আমার খুব প্রিয় দেশ। কিছুদিনের জন্য কলকাতাতেও ছিলাম। আবার সেখানে যাবার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।’
আরো পড়ুন : ভারতীয় সেনা সারমেয়দের স্যালুট
৩) ক্যারাটে ব্ল্যাক বেল্ট
গ্রিলস আক্ষরিক অর্থেই মার্শাল আর্টের ভক্ত। তবে আশ্চর্যের কথা, ভারতেই তাঁর ক্যারাটে শিক্ষার শুরু।
৪) পতন
বর্তমানের দুনিয়া কাঁপানো দুঃসাহসী বেয়ার গ্রিলসকে এক সময় বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়া হয়েছিল! এমনকি ধারণা করা হয়েছিল- চিরতরে হাঁটার ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলবেন তিনি। ১৯৯৬ সালে জাম্বিয়ায় একটি প্যারাসুট দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন তিনি। দুর্ঘটনায় তার মেরুদণ্ডের তিনটি হাড় ভেঙে যায়। তখন তার পিঠের হাড় এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে ডাক্তাররা বলেই দিয়েছিলেন, তার সুস্থ হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে বাধ্যতামূলকভাবেই সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিতে হয় তাকে। পরবর্তী বারো মাস গ্রিলস সামরিক বাহিনীর সব কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকেন ঠিকই কিন্তু হার মানেননি। মেডিকেল সায়েন্স আর সবাইকে অবাক করে দিয়ে কয়েক মাসের মধ্যেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন।
৫) এভারেস্ট জয়
১৯৯৬ সালের সেই প্যারাসুট দুর্ঘটনার পর প্রায় এক বছরের বেশি সময় বেয়ার সব কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকেন। সুস্থ হয়ে ওঠার পর তখনই শৈশবের লালিত স্বপ্ন মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার নেশা চেপে বসে মনে। অদম্য বেয়ার তার দুর্ঘটনার ১৮ মাসের মধ্যেই মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় চড়েন। মাউন্ট এভারেস্ট জয় করতে তার সময় লেগেছিল মাত্র ৯০ দিন। ১৯৯৮ সালের ১৬ মে মাত্র ২৩ বছর বয়সে শৈশবের লালিত স্বপ্ন মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন তিনি। এভারেস্ট জয়ের মাধ্যমে মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ব্রিটিশ হিসেবে এভারেস্ট জয়ের রেকর্ড গড়েন।
আরো পড়ুন : ভারতের ১০ রহস্যময় জায়গা যেখানে পর্যটন নিষিদ্ধ করা হয়েছে ভৌতিক কারণে

৬) পাহাড়ি কৃতিত্ব
শুধু এভারেস্ট জয় করার কৃতিত্ব রয়েছে তা কিন্তু নয়। ডেমন্ড হিলারির পর সবচেয়ে কম বয়সে ব্রিটেনের হয়ে হিমালয়ের সবচেয়ে দুর্গম শৃঙ্গ ‘আমা ডাবলান’ পিক জয়েরও রেকর্ড রয়েছে বেয়ারের।

৭) আকাশে ডিনার
যখনই মনে হয় বিয়ার চরমে পৌচেছেন তখনই সবাইকে ভুল প্রমাণ করে ছাড়েন তিনি। সবচেয়ে উঁচুতে ডিনার পার্টি করার রেকর্ডও তাঁর দখলে, ৭, ৬০০ মিটার উঁচুতে।
আরো পড়ুন : ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের হৃদ রোগ বেশি হয় কেন জানেন?

৮) আটলান্টিক অতিক্রম
২০০৩ সালে একটি ছোট বোটে উত্তর আটলান্টিক অতিক্রম করেন গ্রিলস। মাত্র ৫ জন মিলে।

৯) বিজ্ঞাপন থেকে রাজত্ব
মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের ঘটনা নিয়ে একটি ডিওডোরেন্ট কোম্পানি তাকে নিয়ে বিজ্ঞাপন তৈরি করলে তিনি সর্বপ্রথম টিভিতে আসেন। বেয়ার গ্রিলস নিজেও সম্ভবত ভাবেননি যে টেলিভিশনই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেবে। এভারেস্ট জয়ের পর একটি ডিওডোরেন্টের বিজ্ঞাপনে প্রথমবারের মতো ছোটপর্দায় নিজেকে তুলে ধরেন বিয়ার। এরপর অ্যাডভেঞ্চার শো দিয়ে রাতারাতি উঠে আসেন খ্যাতির শীর্ষে। দুঃসাহসী, দুর্ধর্ষ অভিযাত্রী বলতে এ সময়ে যদি কারো নাম উচ্চারণ করতে হয়, তাহলে সবার আগেই চলে আসে বিয়ার গ্রিলসের কথা।
আরো পড়ুন : মানব দেহের এমন কিছু অজানা তথ্য যা আপনি জানেন না
২০০৫ সালে ১১ জন সহযোগী নিয়ে ফ্রেঞ্চ ফরেন লিজিওনের আওতায় সাহারা মরুভূমিতে প্রশিক্ষণের উপর তৈরি করেন টেলিভিশন শো এক্সেপ টু দি লিজিওন। চ্যানেল ফোর ও মিলিটারি চ্যানেলে এটি প্রচারিত হয়। একই শো ২০০৮ এ এসে হিস্টোরি চ্যানেলেও পুনঃপ্রচারিত হয়। তবে তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিতি লাভ করেছেন যে অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে সেটি হল ‘বর্ন সারভাইভার’। যেটা ‘ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড’ নামে পরিচিতি লাভ করে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে। ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকায় একই অনুষ্ঠান ‘আল্টিমেট সারভাইভাল’ নামেও প্রচার পায়। পুরো পৃথিবীজুড়ে প্রায় ১.২ বিলিয়ন মানুষ এই অনুষ্ঠানটির ভক্ত।
আরো পড়ুন : প্যান কার্ড সম্পর্কে ১০ টি আকর্ষনীয় তথ্য যা আপনি জানেন না
১০) লেখক বিয়ার
বিয়ারের লেখা প্রথম বইয়ের নাম ‘ফেসিং আপ’। যুক্তরাষ্ট্রে ‘দ্য কিড হু ক্লাইম্বড এভারেস্ট’ নামে প্রকাশিত হয় তাঁর এই বই। যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বইও এটি। এভারেস্টে তার অভিযান এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে রচিত দ্বিতীয় বই ‘ফেসিং দ্য ফ্রোজেন ওশেন’ ২০০৪ সালে উইলিয়াম হিল স্পোর্টস বুক অব দ্য ইয়ার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। শুধু তাই নয়, ১৫টি বইয়ের লেখক বিয়ার গ্রিলস। এর মধ্যে বাচ্চাদের জন্য ৪টি কল্পকাহিনির বই রয়েছে। তবে তার আত্মজীবনী বিশ্বের সেরা বেস্ট সেলারগুলোর মধ্যে একটি। তার আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়েছে ২০১১ সালে। নাম ‘ম্যাড, সোয়েট অ্যান্ড টিয়ারস’।
আমাদের প্রতিটি পোস্ট WhatsApp-এ পেতে ⇒ এখানে ক্লিক করুন
সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হন : Facebook Instagram Twitter