উচ্চ মাধ্যমিকের পর এই কোর্সগুলি করলেই মাসে ৫০-৬০ হাজার টাকা আয় হবেই

উচ্চ মাধ্যমিকের পর এই কোর্সগুলি করলেই মাসে ৫০-৬০ হাজার টাকা আয় হবেই

Top 10 courses after 12th Career, Salary and Job Opportunities

উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট বের হওয়ার পর থেকেই সফল হওয়া বেশিরভাগ  বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের লক্ষ্য থাকে রাজ্য বা সর্বভারতীয়  জয়েন্ট এন্ট্রান্স দিয়ে ভালো একটা রাঙ্ক করে কোনো আই আই টি, বা ভালো কোন সরকারি বা বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হওয়ার। অনেকেরই আবার স্বপ্ন থাকে  মেডিক্যাল লাইন নিয়ে পড়ার অর্থাৎ ভালো কোন ডাক্তার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। কিন্তু আজকালকার দিনে শিক্ষা জগতে নানান কোর্সের সম্ভার। তাই ছাত্র ছাত্রীদের সাথে তাদের অভিভাবকরা নানা বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে। তারা বুঝে উঠতে পারছে না উচ্চ মাধ্যমিকের পর কী কোর্স করলে সহজেই ভবিষ্যৎ জীবনে প্রতিষ্ঠিত করা যায়?

আজকের প্রতিবেদনে আমরা সেইরকম কিছু কোর্সের সন্ধান দেবো, যা সহজেই  আপনার সন্তান বা আপনি যদি একজন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ সফল ছাত্র বা ছাত্রী হোন তাহলে তাদের জীবন গড়ার সহায়ক হবে।এইসব কোর্সের মধ্যে বেশ কিছু কোর্স বিজ্ঞান বিভাগে পাশ করে থাকা ছাত্রছাত্রীদের জন্য যেমন আছে, তেমনি কলা ও বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের জন্যেও আছে।তাই ভালো করে পড়ে, নিজের বা ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জেনে লাভবান হন, এবং তাদের ভবিষ্যৎ জীবন কর্মময় করে তুলুন।

কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এবং সাইবার সিকিউরিটি : যে সমস্ত উচ্চ মাধ্যমিক সফল পরীক্ষার্থী কম্পিউটার বিষয় নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করেছো তারা অবশ্যই এই কোর্স নিয়ে ভাবনা চিন্তা করতে পারো। বর্তমান ডিজিট্যাল যুগে এথিক্যাল হ্যাকিং বা সাইবার সিকিউরিটির নানান কোর্স বাজারে আছে, যা করলে সহজেই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায়। এই সব কোর্স করলে সহজেই নানা আই টি সেক্টর, রিটেল সেক্টর, অনলাইন ব্যাংকিং বা অনলাইন শপিং সেক্টরে সহজেই কাজ পাওয়া যায়। ভারতে এইসব বিষয়ে যেসব কোর্স করানো হয় তা হল Cisco CCNA  এবং Microsoft MCSE।আমাদের দেশে এই কোর্স করানো হয় যেসব প্রতিষ্ঠানে তাদের মধ্যে  Jetking অন্যতম।

ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ :- ভারত এখন বিশ্বের মানুষের কাছে অন্যতম সেরা পর্যটন কেন্দ্র। এখানে সারা বিশ্বের নানান প্রান্ত থেকে মানুষ যেমন ঘুরতে আসে, তেমনি অনেক বিদেশি ছাত্রছাত্রীরাও আসে শিক্ষা গ্রহণ করতে। আর তাই বিদেশি ভাষার উপর আপনার দক্ষতা থাকলে আপনি সহজেই এইসব প্রতিষ্ঠানে ভালো কাজ পেতে পারেন। রুশ, জার্মানি, চিনা, জাপানি, স্প্যানিশ, ল্যাটিন ইত্যাদি নানান বিদেশি ভাষা শেখার কোর্স নিয়ে পড়াশোনা করলে নানান  বৈদ্যুতিন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক খবরের চ্যানেলে, প্রিন্ট মিডিয়ায়, সরকারি সংস্থায়, এছাড়া বিদেশি কোম্পানি হাউসে নানা কাজের সন্ধান পাওয়া যায়। আর এতে বেশ ভালোই রোজগারও হয়।

ফ্যাশন ডিজাইনিং :- বর্তমানের মানুষের সৌখিন পোশাক থেকে শুরু করে সকল বিষয়েই নতুনত্বের ছোঁয়া। পায়ের জুতো থেকে মাথার চুল সকল বিষয়েই আনতে হবে নতুনত্ব। পরনের পোশাক থেকে, গলার গয়না, এছাড়াও বাড়ির ভিতরকার আভ্যন্তরীন সজ্জারও ডিজাইনের আছে নতুন নতুন পাঠ্যক্রম। এইসব কোর্স করলে আপনি আপনার সফল কেরিয়ারের জন্য ভালো সুযোগ পাবেন। তবে এই ক্ষেত্রে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃজনশীল মনোভাব থাকতে হবে।আপনার চিন্তা বা ভাবনাতে থাকতে হবে নুতনত্বের ধরন। যা সকলের মধ্যে আকর্ষণীয় হবে।

ফাইন আর্টস : আমাদের মধ্যে অনেকেই আছি যারা পড়াশোনার সাথে সাথে ছবি আঁকা, গান, নাচ প্রভৃতি সমান্তরাল ভাবে শিখে এসেছি। তাই অনেকেই গতানুগতিক পুঁথিগত পড়াশোনার থেকে এই সব বিষয়ে তাদের ভবিষ্যৎ গড়তে বেশি আগ্রহী তবে এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দরকার আপন সৃজনশীলতা। আপনি যে কাজ করতে ভালোবাসেন মন থেকে সেটাতেই আপনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করলে শেখার মধ্যে কোন একঘেয়েমি আসে না। বিষয়ের উপর দখল বাড়ে। তবে এই সব বিষয়ে গভীর ভালোবাসা বা অনুরাগ থাকলেই তাতে যাওয়া উপযুক্ত। মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে কোন সফলতা  পাওয়া যায় না।

আইন : আপনার যদি সমাজের ঘটে চলা অনিয়ম, অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার ইচ্ছা এই বয়স থেকে থাকে, অর্থাৎ যদি নিজেকে প্রতিবাদী হিসেবে দেখেন তাহলে আপনার জন্য আদর্শ হল আইনের পাঠ্যক্রম। বর্তমানে ভারতে  পাশ করা ও দক্ষ উকিলের  চাহিদা অনেক বেশি। এছাড়াও আপনি বিভিন্ন বড়ো ল ফার্মের সাথে নিজেকে যুক্ত রাখতে পারলেও কাজের অভাব হবে না।এছাড়াও আইন নিয়ে পড়াশোনা করে আপনি জুডিসিয়াল সার্ভিসের পরীক্ষা দিয়ে বিচারক হতেও পারবেন।

নার্সিং ও প্যারামেডিকেল : ভারতে হাসপাতালের সংখ্যা সরকারি ও বেসরকারি স্তরে বাড়ছে এবং বাড়বে। আর তাই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর নার্সিং পাঠ্যক্রমে নিজের ভবিষ্যৎ কেরিয়ার করতে আগ্রহী হলে সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে চাকরির অভাব হবে না। আর ছেলেরা বিভিন্ন প্যারা মেডিক্যাল পাঠ্যক্রম করে রাখলেও তাদের কাজের সুযোগ অনেক। এছাড়াও তারা ল্যাব টেকনিশিয়ান বিষয়ে কোর্স করলেও নানা সরকারি ও বেসরকারি প্যাথলজিক্যাল সেন্টারেও কাজের সুযোগ পায়। তাই এই ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ অনেক।

মিডিয়া এবং মাস কমিউনিকেশন : বর্তমান জগতের পরিপ্রেক্ষিতে যেখানে  নানা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিন খবরের নানা চ্যানেলের সমাহার, সেখানে মিডিয়া ও মাস কমিউনিকেশন বিষয়ে কোর্স করে থাকলে কাজের সুযোগ অনেকখানি। একজন খবরের উপস্থাপক, বা রিপোর্টার বা পরবর্তী ক্ষেত্রে, এডিটর  হওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। এছাড়াও সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন খবর সম্প্রচার সম্বন্ধীয় অনুষ্ঠানে কাজের সুযোগ অনেকখানি। চব্বিশ ঘন্টা নানা খবরের চ্যানেলে কাজের নানা সুযোগ পাওয়া যায়। এছাড়াও স্থানীয় ,আঞ্চলিক, রাজ্যের, সর্বভারতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক খবরের কাগজ, বৈদ্যুতিন খবরের চ্যানেলেও কাজ পাওয়া যায় দক্ষতা অনুযায়ী।

অ্যানিমেশন : আজকের স্মার্টফোন ও ভিডিও গেমের যুগে প্রতিদিনই নতুন নতুন গেম বাজারে আসছে আর জনপ্রিয় হচ্ছে। কিন্তু এইসব গেমের চরিত্র যারা তারা সবাই এনিমেটেড। অর্থাৎ একজন দক্ষ এনিমেশন প্রফেশনাল এইগুলো তৈরি করে থাকে। আর তাই নিজের যদি এইরকম কেরিয়ার করতে ইচ্ছুক হয়ে থাকো, তাহলে ভালো প্রতিষ্ঠান খুঁজে এনিমেশন এর কোর্স করতে পারো। এই কোর্স করলে কাজের পরিধি অনেক বেড়ে যায়। যেমন খবরের বৈদ্যুতিন খবরের চ্যানেলে নানা ব্যাঙ্গাত্মক  ঘটনা কার্টুনের মাধ্যমে দেখানো হয়। এছাড়াও বিজ্ঞাপন এজেন্সি,প্রকাশনী সংস্থা, ও সরকারি বেসরকারি ডিজিট্যাল শিক্ষামূলক পাঠ্যক্রম তৈরির ক্ষেত্রেও আপনার কাজের সুযোগ মেলে।

অ্যাপ্লিকেশন বা ওয়েব ডিজাইনিং : আজকের আধুনিক ও ডিজিট্যাল যুগে সবার হাতেই স্মার্টফোন। আর এই স্মার্টফোনে আছে হাজারো আপস। খবরের আপস থেকে খাবার তৈরির আপস, বিউটি টিপস দেওয়া থেকে ,রাশিফল জানানোর। অর্থাৎ সকল বিষয়ের জন্য আপস। আর এই আপসের বাড়বাড়ন্ত কমবে না তা বাড়বে।আর তাই যারা এইসব বিষয় নিয়ে একটু বেশি সচেতন তারা শিখে নিতে পারো আপস মেকিং। তবে এরজন্য কম্পিউটার বা প্রযুক্তি নিয়ে আকর্ষণ থাকতে হবে হবে। কাজের সুযোগ অনেক আছে একথা আলাদা করে বলার দরকার নেই। তবে দক্ষতা বেশি থাকলে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কম্পিউটার আপ্লিকেশন সংস্থায়  কাজ পাওয়া যায়।এছাড়াও নিজের স্টার্ট আপ ও শুরু করা যায় এবং ভবিষ্যতে একজন দক্ষ শিল্পপতি বা আপ ডিজাইনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবেন।

ট্যাক্স কনসালট্যান্ট বা চার্টার একাউন্টেন্ট : আজকের দিনে দিন দিন বাড়ছে রোজগারের নানা পদ্ধতি। আর তাই রোজগার বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে ট্যাক্সের বহর। কিন্তু একজন সঠিক ট্যাক্স কনসালট্যান্ট আপনাকে সঠিক উপায় দেখিয়ে আপনার রোজগার করা টাকা সুরক্ষিত করতে সাহায্য করে। আর তাই এদের কদর সবসময় বেশি। মূলত যারা বাণিজ্য বিষয় নিয়ে যারা পড়াশোনা করেছেন তারা এই সব বিষয়ে দক্ষতা বেশি দেখাতে পারবেন। আর একজন সফল চার্টার্ড একাউন্টটেন্ট হলে তো আপনি নিজেকে সহজেই প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। তাই এই বিষয়ে কোর্স করে থাকলে কাজের সুযোগ অনেকখানি।

তবে একটা জিনিস সবার আগে মনে রাখতে হবে যে বিষয় নিয়েই আপনি পড়াশোনা করুন বা কেরিয়ার তৈরি করার চেষ্টা করুন না কেন তা ভালোবেসে করতে হবে, যা আপনার মনকে চালিত করবে। তবেই পাবেন সাফল্য। ভবিষ্যতে হবেন প্রতিষ্ঠিত।