ঠিক যেন সিনেমা! ট্যাক্সিচালক থেকে বলিউড স্টার, অসম্ভবকে সম্ভব করলেন রাজেশ শর্মা

একসময় মুম্বাইয়ের রাস্তায় ট্যাক্সি চালাতেন তিনি। তার কাজ ছিল মুম্বাইয়ের বাসিন্দাদের তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেওয়া। এভাবেই একদিন তিনি নিজের গন্তব্য ঠিক করে ফেলেন। নিজের গন্তব্যপথ খুঁজে পেতে দেরি হয়েছিল ঠিকই, তবে সেই পথ ধরে লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে দেরি করেননি রাজেশ শর্মা (Rajesh Sharma)। আজ টলিউড (Tollywood) তথা বলিউডজুড়ে (Bollywood) দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। কখনো ভিলেনরূপে, কখনও বা দুঁদে পুলিশ অফিসাররূপে পর্দায় তার আবির্ভাব দর্শকের মনে টানটান উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

১৯৭১ সালে পঞ্জাবের লুধিয়ানায় জন্ম হয় রাজেশ শর্মার। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে নয়াদিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে স্নাতক হন তিনি। এরপর কলকাতার একটি নাটক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন। অবাঙালি হয়েও মঞ্চে উঠে বাংলা ভাষায় সাবলীলভাবে ডায়লগ বলতে পারতেন তিনি। কাজেই দর্শকের মনে জায়গা করে নিতে খুব বেশি দেরি হয়নি তার। কিন্তু কেরিয়ারের প্রথমদিকে তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল।

ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি ছিলেন আউটসাইডার। কাজের প্রথমদিকে সেভাবে বড় পরিচালকের নজরে পড়ার সুযোগ পাচ্ছিলেন না তিনি। সময়টা তখন ১৯৯৪। মঞ্চে নাটক করে টুকটাক যা উপার্জন হতো, তাতে সংসার ঠিকভাবে চালানো সম্ভব ছিল না। বাধ্য হয়ে বিকল্প কাজ খুঁজে নেন রাজেশ শর্মা। মুম্বাইয়ের রাস্তায় ট্যাক্সি চালাতে শুরু করেন তিনি। এভাবেই কেটে যায় আরও দুটি বছর।

১৯৯৬ সালে ভাগ্য তার সহায় হয়। ওই বছর বলিউডে ‘মাচিস’ নামের একটি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। ছবিটি জাতীয় পুরস্কার পায়। তবে প্রথম ছবি থেকে রাজেশ শর্মা তেমন পরিচিতি পান নি। ১৯৯৬-এর পর ৪ বছর বলিউডে কাজের প্রত্যাশায় ঘুরেছেন তিনি। কিন্তু বহিরাগত রাজেশের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। ৪ বছরে তার পরিশ্রম বৃথা যায়। তখন বাধ্য হয়ে আবার কলকাতায় ফিরে আসেন রাজেশ শর্মা। মনপ্রাণ দিয়ে থিয়েটারে কাজ করতে শুরু করেন। টলিউড তাকে ফেরায়নি।

এখানেই অপর্ণা সেনের নজরে পড়ে যান তিনি। অপর্ণা তাকে ‘পারমিতার একদিন’ ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ দেন। সেই থেকেই তার অভিনয় জীবনের শুরু। একের পর এক বাংলা ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছেন রাজেশ শর্মা। কখনো ‘টিনু গুন্ডা’ হয়ে দর্শকের মনে ভীতি সঞ্চার করেছেন তিনি, কখনও বা দুঁদে পুলিশ অফিসাররূপে পর্দার সামনে হাজির হয়েছেন। সব চরিত্রেই তিনি ছিলেন হিট। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির আজও তাকে ‘টিনু গুন্ডা’ নামেই মনে রেখেছে।

২০০১ সাল থেকে শুরু করে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ‘দাদা ঠাকুর’, ‘প্রতিবাদ’, ‘সোনার সংসার’, ‘সাথী’, ‘দেশ’, ‘চ্যাম্পিয়ন’, ‘বাদশা দ্য কিং’, একের পর এক বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন রাজেশ শর্মা। তবে বলিউড ছিল তার স্বপ্ন। যে স্বপ্ন পূরণ হতে ৯ বছর সময় লেগে যায়। ১৯৯৬ এর পর ২০০৫ সালে এসে বিদ্যাবালানের ‘পরিণীতা’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। তাতেও অবশ্য দর্শকের মনে খুব একটা দাগ কাটতে পারেননি বাংলার খলনায়ক।

তারপর কেটে যায় আরও বেশ কিছু বছর। ২০১১ সালের ছবি ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’ ছবিটি তার জীবনের মাইলস্টোন হয়ে দাঁড়ায়। ওই ছবিতে অভিনয় করার পর থেকেই বাংলার পাশাপাশি একাধিক হিন্দি ছবির জন্য বলিউড থেকে ডাক পেতে থাকেন তিনি। ‘স্পেশ্যাল ২৬’, ‘এম এস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’, ‘ওয়ান ডে: জাস্টিস ডেলিভারড’, ‘বাটলা হাউস’ তার অভিনীত কিছু উল্লেখযোগ্য হিন্দি ছবি।

তিনি যখন টলিউডে কাজ করতেন তখন তার আলাপ হয় অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তীর সঙ্গে। ২০০৫ সালে তাদের বিয়ে হয়। তবে সেই সম্পর্ক বেশিদিন টেঁকেনি। ৪ বছরের মাথায় তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। ২০১১ সালে সঙ্গীতাকে বিয়ে করেন তিনি। একদিকে বলিউড, অপরদিকে টলিউড দুই ইন্ডাস্ট্রি ব্যালেন্স করে চলছেন রাজেশ শর্মা।