আর যে যত অন্যায় করুক না কেন, মা কখনও সন্তানের প্রতি নিষ্ঠুর হতে পারেন না, এমনই বিশ্বাস সমাজের। তবে বর্তমান সময়ে মাঝেমধ্যেই এমন কিছু ঘটনা প্রকাশ্যে আসে যেখানে মায়ের নিষ্ঠুরতা দেখলে শিউরে ওঠেন সকলে। আজকের এই প্রতিবেদনে এমন এক অভিনেত্রীর কথা রইল যিনি তার জীবনে চরম ধাক্কা খেয়েছিলেন নিজের মায়ের থেকেই। তিনি হলেন বাংলা সিরিয়ালের জনপ্রিয় অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা রতি পাল।
‘করুণাময়ী রানী রাসমণি’র বাইজি ময়না সুন্দরী থেকে ‘জয় বাবা লোকনাথে’র জমিদার গিন্নি, একাধিক জনপ্রিয় বাংলা সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন প্রিয়াঙ্কা। বর্তমানে তিনি টলিউডের বাইরে বেরিয়ে মুম্বাইতে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি একটি ক্লাউড কিচেনও চালাচ্ছেন তিনি। আসলে প্রিয়াঙ্কার জীবনটা আগাগোড়াই স্ট্রাগলে মোড়া। ক্লাস এইটে পড়তে তিনি তার বাবাকে হারান। এরপর অবশ্য ৪ বছর তার মা খুবই কষ্ট করে তাকে এবং তার বোনকে নিয়ে সংসার চালিয়েছিলেন।
প্রিয়াঙ্কা টুয়েলভে উঠতেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। তিনি মা এবং বোনের দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের সংসারে মা ও মেয়ের মধ্যে অশান্তি লেগেই থাকতো। একদিন তো মা রেগে গিয়ে রাতে বাড়ি থেকে মেয়েকে বার করে দেন। সেটা ছিল প্রবল শীতের একটা রাত। শুধু প্রিয়াঙ্কাকে নয়, তার ছয় পোষ্যকেও মা বাড়ি থেকে বের করে দেয় ওই রাতে। এইসব অতীতের কথা দিদি নাম্বার ওয়ানে এসে রচনা ব্যানার্জীর সামনে প্রকাশ করেন প্রিয়াঙ্কা। তার কথা শুনে অবাক হয়ে যান রচনাও।
প্রিয়াঙ্কা বলেন তিনি চেয়েছিলেন তার বোন লেখাপড়া করুক। কিন্তু বোনের লেখাপড়ার দিকে আগ্রহ ছিল না। আবার সে কাজ করতেও নারাজ। এসব নিয়েই তাদের সংসারে অশান্তি ছিল। একদিন রাগের চোটে মা তার বড় মেয়েকেই বাড়ি থেকে বের করে দেন পোষ্য সমেত। এমনকি মেয়ে যাতে বাড়িতে না ঢুকতে পারে তার জন্য তিনি আইনি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। প্রিয়াঙ্কা তার বাড়ি থেকে একটা জিনিসও নিতে পারেননি।
ওই রাতে প্রিয়াঙ্কা নিজের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে পারলেও তার ৬ পোষ্য কুকুরকে জায়গা দিত না কেউ। কিন্তু সেদিন প্রিয়াঙ্কার জীবনে বিদ্যুতের মত আবির্ভাব হয়েছিল তার মামীর। মামী প্রিয়াঙ্কা এবং তার পোষ্য সন্তানদের ঠাঁই দিয়েছিলেন। তিনিই তাদের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। প্রিয়াঙ্কার কথায়, “জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না। জন্ম তো পশুরাও দেয়। মা হওয়ার জন্য দায়িত্ব পালন করতে হয়। এর জন্য সবসময় রক্তের সম্পর্ক থাকারও দরকার হয় না। এটা আমি নিজের জীবন দিয়ে বুঝেছি।”
আরও পড়ুন : ভাগ্য বদলাতে কোন আঙুলে কী আংটি পরেন রচনা? কোনটার কাজ কী?
আরও পড়ুন : টলিউডে কেন পিছিয়ে পড়লেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত? ফাঁস হল অজানা সত্যি
প্রিয়াঙ্কা প্রথমটা মনে করেছিলেন মা হয়তো রাগের মাথায় বের করে দিয়েছেন। পরে আবার ঠিক কাছে ডেকে নেবেন। কিন্তু বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও মা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। দিদি নাম্বার ওয়ানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রিয়াঙ্কা বলেন, “জীবনটা তো খুব ছোট….মায়ের তো বয়স হচ্ছে। শান্তিটা সবচেয়ে জরুরী। একটু যদি ইগোটা দূরে সরিয়ে রাখা যায় শান্তির জন্য। হয়ত জেদ বশত করেছে সবটা, এখন সবটা ভুলে যাওয়া উচিত”। কথা বলতে বলতে চোখ জলে ভিজে এসেছিল তার।