তার মধ্যে যেন স্বয়ং দেবী সরস্বতীর অধিষ্ঠান। সংগীতের দুনিয়ার সুরের সম্রাজ্ঞী তিনি। তাকে ছাড়া অপূর্ণ ভারতীয় সংগীত জগত। গতকাল তার প্রয়াণ ঘটে। ‘ভারতের নাইটিঙ্গেল’ লতা মঙ্গেশকরকে (Lata Mangeshkar) সাদা শাড়ি (White Saree) ছাড়া কখনও রঙিন শাড়ি (Colouring Saree) পরতে দেখেননি কেউ। সবসময় তার পরিধানে থেকেছে সাদা শাড়ি। খুব ছোট বয়স থেকেই তাকে সাদা রংয়ের শাড়িতেই দেখা গিয়েছে বারবার। কেন সর্বদা নিজেকে সাদা শাড়িতে মুড়ে রাখতেন তিনি? রঙিন শাড়ির প্রতি এত অনীহা কেন ছিল তার?
বলিউডের জনপ্রিয় স্টাইলিস্ট ইশা বনশালির কথায়, “ফ্যাশনের প্রতি লতাজির অন্যরকম আবেগ ছিল। ধারাবাহিকভাবে সাদা শাড়িই পরেছেন তিনি। সাদা শাড়িগুড়ি তাঁর সিগনেচার ছিল। দু’টি বিনুনী এবং সিঁদূরে লাল রং-এর গোল টিপ, এই দিয়েই লতাদিদিকে সকলে চিনতাম। তাঁর মিষ্টি সুরেলা গলার সঙ্গে তাঁর এই ফ্যাশন যেন ট্রেন্ড সেট করে ফেলেছিল।” জীবনে কি কোনদিনও রঙিন শাড়ি পরেননি লতা? এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন খোদ গায়িকা।
এই প্রশ্নের জবাব মিলেছে ২০১৩ সালে লতা মঙ্গেশকরের দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে। সেখানে তিনি বলেছিলেন, “একবার একটি অনুষ্ঠানে আমি রঙিন শাড়ি পরেছিলাম। কিন্তু, আমার পেছনে থাকা কোরাস শিল্পীরা আমায় দেখে এত হেসেছিলেন, তারপর থেকে আমি শপথ নিয়েছিলাম। আর কখনও রঙিন শাড়ি পরব না।” তার আলমারিতে ঠাসা রয়েছে যে শাড়ি, তার মধ্যে বেশিরভাগই ছিল হ্যান্ডলুমের। সাদা রংয়ের হ্যান্ডলুম শাড়ি পরতেই তিনি বেশি স্বছন্দ ছিলেন।
সাদা শাড়ির পাশাপাশি হীরের তৈরি গয়নার প্রতিও তিনি আকর্ষণ বোধ করতেন। তিনি ১৯৪৭ সালে তার জীবনের প্রথম হীরের গয়নাটি কিনেছিলেন। ৭০০ টাকা দিয়ে তিনি একটি হীরের আংটি কিনেছিলেন। ২০০৫ সালে একটি ইন্টারভিউতে লতা মঙ্গেশকর বলেছিলেন, “রোজগারের টাকা দিয়ে মাকে প্রথম উপহার কিনে দিয়েছিলাম। একটি সোনার গয়না কিনে এনেছিলাম। ১৯৪৭ সালে ৭০০ টাকা দিয়ে নিজের জন্য প্রথম একটি হীরের আংটি কিনেছিলাম। তাতে আমাদের নামের আদ্যখ্যর অর্থাৎ এল এম লেখা ছিল।”
লতা তার সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছিলেন এই হীরের আংটিটিই তার কাছে অমূল্য। তিনি আরও বলেন, “গানের পর হীরেই আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস।” হীরের প্রতি তার আকর্ষণ বেড়েছিল প্রয়াত সংগীতশিল্পী কে এল সায়গল এবং তামিল শিল্পী শিবাজী গণেশনের সংস্পর্শে এসে। তিনি তাকে রাখি পড়াতেন। লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুর পর জুয়েলারি ডিজাইনার অর্চনা আগরওয়াল গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, “লতাজি অমর। তিনি আমাদের হৃদয়ে আজীবন থাকবেন। তিনি ছিলেন ন্যাশনাল আইকন।
আরও পড়ুন :- কত টাকার সম্পত্তি রেখে গেলেন লতা মঙ্গেশকর, কে হবে এই সম্পত্তির মালিক
সাদামাটা জীবনযাপনে তিনি নিজের মতো করে ফ্যাশন ট্রেন্ড গড়ে তুলেছিলেন। অনেকেই হয়ত জানেন না, গয়না পরতে তিনি ভালোবাসতেন। বিশেষ করে হীরের সাদামাটা গয়না তাঁর পছন্দ ছিল।” তিনি আরও বলেন, “তিনি একবার একটি ব্রান্ডের জুয়েলারি ডিজাইনও করেছিলেন। সেই ব্র্যান্ডের গয়নাগুলিতে তাঁর নাম খোদাই করা ছিল। তিনি নিজেই সেগুলির বিজ্ঞাপনও করেছিলেন।”