পা চাটেন না বলে জোটেনা বঙ্গভূষণ, টলিউডের মুখে ঝামা ঘষে বিদেশে সম্মানিত চন্দন সেন

শরীরে রোগ-ব্যাধির বাধা উপেক্ষা করে তিনি নাট্যমঞ্চে শট দিতে পারেন। টেলিভিশন থেকে সিনেমার পর্দার কাজের মধ্যে ডুবে থেকে ভুলে থাকেন মারণব্যাধির যন্ত্রণা। এভাবেই বছরের পর বছর ক্যান্সারের বিরুদ্ধে জীবনের লড়াই চালিয়ে আসছেন চন্দন সেন (Chandan Sen)। অভিনয়টাই যেন তার মনের শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা তাকে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দিয়েছে বারবার।

বাংলা সিনেমা হোক বা সিরিয়াল, এই মানুষটার অবদান কিন্তু কিছু কম নয়। অথচ এই মানুষটা টলিউডে কখনও পাননি কোনও সম্মান। নিদেন পক্ষে একটা বঙ্গ সম্মান কিংবা পদ্মভূষণ কোনওটাই জোটেনি তার কপালে। তবে প্রতিভা কখনও চাপা থাকে না। চন্দন সেন এবার আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে পেলেন সেরা সম্মান। তার প্রতিভাকে স্বীকৃতি দিল রাশিয়ার প্যাসিফিক মেরিডিয়ান চলচ্চিত্র উৎসব (Russian Pacific Meridian Filmfare)।

‘দ্য ক্লাউড অ্যান্ড দ্য ম্যান’ (মানিকবাবুর মেঘ) ছবির জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন চন্দন সেন। অভিনন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত এই ছবিটি ২০২১ সালে মুক্তি পেয়েছিল। এক ব্যক্তির সঙ্গে মেঘের সম্পর্কের গল্প নিয়ে বানানো হয়েছে এই ছবি। ছবিতে চন্দন সেন ছাড়া অভিনয় করেছেন দেবেশ রায়চৌধুরী, ব্রাত্য বসুসহ অন্যান্যরা।

এই ছবিটি রাশিয়ার প্যাসিফিক মেরিডিয়ান চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছিল। ছবিটি বিদেশে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। বাংলার শিল্পীকে কদর দিয়েছে রাশিয়ার এই চলচ্চিত্র মঞ্চ। খুব অল্প বয়সে থিয়েটার দিয়ে শুরু হয়েছিল চন্দন সেনের অভিনয় যাত্রা। এরপর তিনি তার নিজের প্রতিভার গুণে অসংখ্য ছবি এবং সিরিয়ালে অভিনয় করেন।

Chandan Sen

‘বউ ব্যারাকস ফরএভার’, ‘ম্যাডলি বাঙালি’, ‘ব্যোমকেশ ফিরে এল’ এর মত অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন চন্দন সেন। সেই সঙ্গে বাংলা টেলিভিশনেও অবাধ বিচরণ তার। ‘ইষ্টি কুটুম’, ‘আঁচল’, ‘ইচ্ছেনদী’, ‘খড়কুটো’ ইত্যাদি বহু ধারাবাহিকে তিনি অভিনয় করে বাংলার দর্শকদের অত্যন্ত পছন্দের অভিনেতা হয়ে উঠেছেন। ফলিকুলার লিম্ফোমার মত মারণ অসুখ শরীরে নিয়েও তিনি চুটিয়ে অভিনয় করে চলেছেন।

Chandan Sen

২০১০ সালে ফলিকুলার লিম্ফোমা ধরা পড়ে চন্দন সেনের শরীরে। তারপর থেকেই প্রতিনিয়ত তাকে এই রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে যেতে হচ্ছে। এই লড়াইয়ে তার সব থেকে বড় বল তার মনের জোর। অদম্য জেদ আর সাহস না থাকলে কি কেউ দীর্ঘ ১২ বছর ধরে জীবন-মৃত্যুর লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন? বাংলা তাকে সম্মান দিতে পারেনি, তবে রাশিয়ার এই মঞ্চ তার প্রতিভাকে স্বীকৃতি দিতে কোনও গড়িমসি করেনি।