কাজের অভাবে বন্ধ রোজগার, চরম অর্থসঙ্কটে উত্তমকুমারের নায়িকা কাটাচ্ছেন অথর্ব জীবন

সাতের দশকের বলিউড (Bollywood)। সে সময় হেমা মালিনী এবং রেখাকে টেক্কা দেওয়ার মতো প্রতিভা একমাত্র ছিল সুলক্ষণা পন্ডিতের (Sulakshana Pandit) মধ্যে। শুধু তাই নয়, এই সময় রিনা রায়, নীতু সিংদেরও বেশ চাপের মুখে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। শুধু অভিনয় নয়, তার সুরেলা কন্ঠের জাদুতেও মোহাচ্ছন্ন ছিল গোটা বলিউড। কিন্তু এহেন অভিনেত্রীকেই শেষ জীবনে চরম অর্থাভাব গ্রাস করে।

সুলক্ষণার জন্ম হয়েছিল হরিয়ানাতে। এক রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে ছিলেন তিনি। রক্ষণশীলতার ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে নায়িকা এবং গায়িকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন পন্ডিত যশরাজের ভাইজি। দুই প্রখ্যাত সুরকার যতীন এবং ললিত হলেন তার দুই ভাই।

তার বোন বিজয়েতা পন্ডিতও একজন নামী অভিনেত্রী। বাংলাতে উত্তমকুমারের নায়িকা হয়ে ‘বন্দী’ ছবিতে কাজ করেছিলেন তিনি। আবার প্রসেনজিতের বিপরীতে ‘অমর সঙ্গী’ ছবিতে কাজ করেছিলেন তিনি। ১৯৬৭ সালে বলিউডে গায়িকা হিসেবে ডেবিউ হয়েছিল সুলক্ষণার। ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি প্রায় ২১টি ছবিতে গান গেয়েছিলেন। এছাড়া প্রায় ৫০ টি ছবিতে তিনি অভিনয়ও করেন।

‘বেকারে দিল তু গ্যয়া’, ‘বন্ধি রে কাহে প্রীত’ এর মত গান তাকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে। নিজের ছবিতে তিনি নিজেই গান গাইতেন। হট, আবেদনময়ী হিসেবে ছবির পর্দাতেও তার বেশ ভালই কদর ছিল। সুলক্ষণা তার একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন ‘রাহগীর’ ছবিতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তাকে অভিনয়ে আসার জন্য পরামর্শ দেন। সেই থেকে অভিনয় জগতে তার যাত্রা শুরু। অভিনয় করতে করতেই তার জীবনে প্রেম এসেছিল।

‘উলঝন’ ছবিতে অভিনয় করার সময় সহ-অভিনেতা সঞ্জীব কুমারের প্রেমে পড়েন তিনি। তবে সঞ্জীব তখন রেখাকে পছন্দ করতেন বলে সুলক্ষণার ভালোবাসাকে গুরুত্ব দেননি। অবসাদে অতিরিক্ত মদ্যপানের জন্য মাত্র ৫০ বছর বয়সে মৃত্যু হয় সঞ্জীব কুমারের। সঞ্জীবের মৃত্যুর পর তিনি নিজেও অবসাদে ভুগতেন। সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে সাতটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। তার মৃত্যুর পর তিনি কাজ অনেক কমিয়ে দেন। নিজেকে ঘরবন্দী করে ফেলেন।

দীর্ঘদিন কাজ না করার কারণে তার প্রচুর টাকা ধার হয়ে যায়। একসময় নিজের ফ্ল্যাটটুকু পর্যন্ত ঠিক করার মত টাকা তার কাছে ছিল না। অভিনেতা জিতেন্দ্রর সহায়তায় তিনি ফ্ল্যাট বিক্রি করে শেষমেষ ঋণ পরিশোধ করেন। বাদবাকি টাকা দিয়ে একটি নতুন ছোট্ট ফ্ল্যাট কিনে তা ভাড়া দিয়ে দেন।

কিন্তু এরপরেও তার দুর্ভাগ্য কাটেনি। বাড়িতে শৌচাগারে পড়ে গিয়ে তার হিপ বোন ভেঙে যায়। চারবার অস্ত্রপ্রচার করিয়ে তবে আবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছিলেন তিনি। তবে এখন আর তিনি নিজে একা চলাফেরা করতে পারেন না। আপাতত তিনি বোন বিজয়েতার সঙ্গেই রয়েছেন।