দেশ তথা রাজ্যজুড়ে করোনা সংক্রমনের গ্রাফ এখন উর্ধ্বমুখী। সম্প্রতি করোনা সংক্রমিত হয়েছেন প্রয়াত বিধায়ক ও অভিনেতা তাপস পালের স্ত্রী নন্দিনী পাল। তার অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক হয়ে ওঠায় গতকাল থেকেই তার চিকিৎসা শুরু করা হয়ে গেছে। মঙ্গলবার বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে, বর্তমানে সেখানেই তার প্লাজমা থেরাপি চলছে।
তাপস নন্দিনীর মেয়ে সোহিনীও মাকে সুস্থ করে তোলার জন্য যথাসম্ভব লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। বাবাকে হারানোর পর স্বাভাবিকভাবেই মায়ের প্রতি নির্ভরযোগ্যতা অনেক বেশি পরিমাণে বেড়ে গিয়েছিল তার, বর্তমানে মায়ের এরকম সংকটজনক অবস্থা দেখে সোহিনীও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন।
তাপস পাল তার প্রথম অভিনীত ‘দাদার কীর্তি’ছবিতেই সকলের মন জয় করে নিয়েছিলেন।এরপর ভালোবাসা ভালোবাসা, বলিদান, গুরুদক্ষিণার মত সুপারহিট ছবিতে অভিনয় করার পাশাপাশি বলিউডে ‘অবোধ’ ছবিতে মাধুরী দীক্ষিতের অপজিটেও অভিনয় করেছিলেন তিনি। ‘সাহেব’ ছবিতে তার অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ও পেয়েছিলেন।
চোখের আলো, অন্তরঙ্গ, সুরের আকাশের মত সিনেমায় অভিনয় করে টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে রাজ করা মানুষটিই ২০২০ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি চলচ্চিত্রজগতের এবং তার রাজনৈতিক জগতের সকল বন্ধুদের শোকের সাগরে ফেলে না ফেরার দেশে চলে যান। একজন অভিনেতা ও রাজনীতিবিদের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত সাধারণ জীবন যাপনেই বিশ্বাসী ছিলেন। তাই তিনি কখনই চাননি মেয়ে পড়াশোনা শেষ না করেই চলচ্চিত্রজগতে প্রবেশ করুক। বাবার কথা মেনেই পড়াশোনা শেষ করার পর সোহিনী চলচ্চিত্রের জগতে আসেন।
সোহিনী টলিউডে গুটিকতক সিনেমা করেছিলেন এবং সেই কয়েকটি সিনেমার মধ্য দিয়েই সিনে অনুরাগীদের মনে ছাপ ফেলে গিয়েছেন তিনি।কৌশিক গাঙ্গুলির ‘জ্যাকপট’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে তিনি নিজের অভিনয় দক্ষতা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। যদিও এর আগেই ২০০৪ সালে প্রথম অঞ্জন দত্তের ছবি বউ ব্যারাক্স ফরএভার এর মধ্যে দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ ঘটেছিলো তার।
বাংলায় অটোগ্রাফে সিনেমায় কাজ করার পর সোহিনী আর টলিউডে কাজ করার চেষ্টা করেননি, বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার জন্য মুম্বাই এ পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি।চিড়িয়াঘর, পার্টনার,‘আপকে আজানে সে’ এর মতো টেলিভিশনের পাশাপাশি বড় পর্দার ‘হাম তুম দুশমন দুশমন’এ কাজ করেছিলেন সোহিনী।
মেয়েকে খুব ভালোবাসতেন প্রয়াত অভিনেতা। সোহিনী যখন খুব ছোটো তখন তাপস পাল একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন “আমার মেয়ে পাখির মতো টুকটুক করে কথা বলে এখন।” আর সোহিনী যখন মুম্বাইতে ছিলেন তখন তাপস পাল সোহিনীর ফ্ল্যাটে গিয়ে নিজে হাতে মেয়ের জন্য ব্রেকফাস্ট,চা বানিয়ে দিতেন, সেই পোস্ট নিজে শেয়ার করেছিলেন সোহিনী।
এইসব কিছুর মধ্য দিয়েই বোঝা যেতো বাবা মেয়ের বন্ডিং ঠিক কতখানি স্ট্রং ছিলো। বাবার মৃত্যুর খবর শুনে তাই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন সোহিনী,বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে তার বাবা আর নেই। মাকে সঙ্গে নিয়ে সেই শুরু হয়েছিলো তার নতুন লড়াই,যদিও বাবার মৃত্যু শোক তিনি কাটিয়ে উঠতে পারেননি আজও।