১৯৮৬ সাল থেকে ২০২২, সিনেমা, থিয়েটার, বাংলা টেলিভিশনের ধারাবাহিকজুড়ে অভিনয় করে সফল অভিনেতার খেতাব পেয়েছিলেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায় (Abhishek Chatterjee)। তবে তিনি যতটা আশা করেছিলেন বা অভিনয়গুণে তিনি যতটা পাওয়ার দাবিদার ছিলেন, ইন্ডাস্ট্রির নোংরা পলিটিক্সের ফাঁদে পড়ে তাকে মাঝপথেই সরে যেতে হয়েছিল।
সুগঠিত শরীর, এযুগের নায়কদের মত ৬ প্যাকের গড়ন, সুদর্শন চেহারা আর অভিনয় প্রতিভা, নায়ক হওয়ার জন্য যে যে গুণ থাকা প্রয়োজন ছিল তারমধ্যে সবকটিই ছিল। তবুও হাতেগোনা কিছু ছবিতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করে ধীরে ধীরে পার্শ্বচরিত্রাভিনেতার তকমা সেঁটে যায় তার গায়ে। অভিষেক সরাসরি এই প্রসঙ্গে তার সহ-অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের দিকে আঙুল তুলেছিলেন।
একাধিকবার একাধিক সাক্ষাৎকারে তিনি কোথাও নাম নিয়ে, কোথাও নাম উহ্য রেখে তার বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া অন্যায় পলিটিক্সের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে শাশ্বত চ্যাটার্জিকে তিনি বলেছিলেন, ‘তোদের খুব প্রিয় ‘দাদা’ আর ‘দিদি’, টপ হিরো আর টপ হিরোইন, তারা দু’জন জোট বেঁধে আমাকে যে কত ছবি থেকে বাদ দিয়েছে… আমার সাইন করা ১২ থেকে ১৪ খানা ছবি থেকে বাদ দিয়েছে… নতুন ভাবা ছবি মিলিয়ে ২০-২২ খানা ছবি থেকে বাদ দিয়েছে। টানা বাদ দিয়েছে। আমি অভিষেক চ্যাটার্জি, তখন অলমোস্ট নম্বর ওয়ান স্টার, হঠাৎ দেখল, তার হাতে একটাও কাজ নেই। আমি টানা ১ বছর বাড়ির বাইরে বেরোইনি। লক্ষ্মীর ভাঁড় ভেঙে তার থেকে পয়সা বার করে আমায় খেতে হয়েছিল।’
আনন্দবাজারকেও এক সাক্ষাৎকারে অভিষেক বলেছিলেন, ‘প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ’৯৭-’৯৮ সালে এরা জোট বেঁধে প্রায় ৩০-৩২টা ছবি থেকে আমাকে বাদ দিয়েছিল। সে সময়ে আমিই টলিউডে এক নম্বর। প্রায় এক বছর আমার কোনও কাজ ছিল না। বসে থেকে থেকে ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম। বছর দুয়েক পরে যাত্রায় যোগ দিলাম। তার পরই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন শুনেছি, লোকে বলছে, ‘অভিষেক তো ফুরিয়ে গিয়েছে’। এ সব শুনে কষ্ট হত। কিন্তু আমি প্রত্যয়ী ছিলাম’।
তিনি আরও বলেন, ‘চিরকালই প্রসেনজিতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলাম আমি। অনেক সময়েই টের পেয়েছিলাম, ও কিছু গোলমাল তৈরি করছে। কিন্তু ওকে বরাবরই বন্ধু ভাবতাম। তাই সিরিয়াসলি কোনও স্টেপ নিইনি। আর ঋতুপর্ণার সম্পর্কে একটি সাক্ষাৎকারে কয়েকটা কথা বলেছিলাম, সেটা ওর খারাপ লেগেছিল। তার পরেই ও সিদ্ধান্ত নেয়, আমার সঙ্গে আর কাজ করবে না। আমাকে স্বপনদা (সাহা) বলেছিলেন, তুমি ব্যাপারটা মিটমাট করে নাও। কিন্তু আমি কোনও ভুল করিনি, তাই ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তার পরই যাত্রা করা শুরু করি’।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি রিগ্রেট করার মানুষ নই। যদি জানতাম আমার চেয়ে সুপিরিয়র কেউ রয়েছে, তা হলে হয়তো আক্ষেপ থাকত। সে সময়ে আমার সিক্স প্যাক ছিল। নিয়মিত শারীরচর্চা করতাম। ভাল অভিনয় করতাম। সুদর্শন চেহারা। আর কী-ই বা করার ছিল আমার! তবে এখন ভাবি, সোলো হিরো হিসেবে একের পর এক হিট দেওয়ার পর আরও বেছে কাজ করতে পারতাম। অবশ্য সব ধরনের চরিত্রে কাজ করেছি বলেই এত দিন কাজ না করা সত্ত্বেও কেরিয়ারে ছবির সংখ্যা ২৫০ পেরিয়েছে।’ আজ আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যুর পর পুরনো এই বিতর্ক আরও একবার উঠে আসছে।