“জি বাংলা’র জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো “দিদি নাম্বার ওয়ান’ এর সঞ্চালিকা “দিদি’ অর্থাৎ রচনা ব্যানার্জিকে কেন্দ্র করে বাঙালির সেনসেশন কিছু কম নয়। এই রিয়েলিটি শো মারফত বাঙালি রমণীদের আবেগ “দিদি” দীর্ঘ ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিজের কাঁধে বয়ে নিয়ে চলেছেন। টলিউডে ৫৬ বছর বয়সে আজও অটুট রচনা ব্যানার্জীর গ্ল্যামার। টলিউডের ইতিহাসে ইতিপূর্বে আর কোনও অভিনেত্রীর ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায়নি।
রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিপূর্বে বাংলা এবং ওড়িশা সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। বাংলা এবং ওড়িশি বহু সিনেমাতে রচনা নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার জুটি এবং ওড়িশি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সিদ্ধার্থ মহাপাত্রের সঙ্গে তার জুটি দর্শক ভীষণ ভাবে উপভোগ করতেন। কয়েক দশক পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তার অভিনীত সিনেমাগুলির জনপ্রিয়তা অটুট রয়ে গিয়েছে।
১৯৭৪ সালের ২রা অক্টোবর কলকাতায় জন্ম হয় রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মা-বাবার একমাত্র আদরের সন্তানের আসল নাম কিন্তু রচনা নয়, ঝুমঝুম। ১৯৯৪ সালে মিস ক্যালকাটা পুরষ্কার জিতেছিলেন ঝুমঝুম ব্যানার্জি। এরপর সুন্দরীদের প্রতিযোগিতায় একের পর এক জয়লাভ করতে থাকেন ঝুমঝুম। সেই থেকেই টলিউডে তার যাত্রাপথ প্রশস্ত হয়। সুখেন দাসের পরিচালনায় ‘দান প্রতিদান’ চলচিত্রের হাত ধরে প্রথম টলিউডে আত্মপ্রকাশ ঘটে তার। সেই সময় পরিচালক সুখেন দাস ঝুমঝুমের নাম রেখেছিলেন রচনা।
বাংলা চলচ্চিত্র জগতের তৎকালীন বলিষ্ঠ অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে প্রায় ৩৫টি ছবিতে অভিনয় করেন রচনা। হিন্দি সিনেমাতেও কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল তার। তাও আবার স্বয়ং অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে। অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে “সূর্যবংশম’ ছবিতে অভিনয় করে রচনা বলিউডেও বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। এরপর তার জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয় ওড়িশি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। ওড়িশি চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম সেরা অভিনেতা সিদ্ধার্থ মহাপাত্রের সঙ্গে রচনার জুটিও এভারগ্রীন। দক্ষিণী চলচ্চিত্রে চিরঞ্জিব এবং উপেন্দ্রের সঙ্গে রচনা জুটিও দর্শকদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিল।
সিদ্ধার্থ মহাপাত্রের সঙ্গে জোট বেঁধে ওড়িশি সিনেমাগুলিতে অভিনয় করাকালীন রচনা তার সঙ্গে প্রেম সূত্রে আবদ্ধ হন। শোনা যায় সিদ্ধার্থ এবং রচনা নাকি গোপনে বিয়েও করেছিলেন। তবে তাদের সম্পর্ক বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। মাত্র একবছরের মাথাতেই তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। সিদ্ধার্থের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণনেই নাকি ওড়িশি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে সরে আসেন রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০৪ এ বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায় দুজনের।
এরপর টলিউডে পা রাখেন রচনা। ২০০৭ সালে প্রবাল বসুকে বিয়ে করেন তিনি। জন্ম হয় রচনার একমাত্র ছেলে প্রণীলের। কিন্তু সেই বিয়েও সুখকর হয়নি। প্রবাল এবং রচনার একমাত্র সন্তানের নাম প্রণীল। বয়স তার ১৪ বছর। তবে প্রবালের সঙ্গেও রচনা সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হলো না। অভিনেত্রী এই মুহুর্তে একজন সিঙ্গেল মাদার হিসেবে নিজের সংসার এবং ছেলের ভার বহন করছেন। দ্বিতীয় বার বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পর আর কোনো সম্পর্কে জড়াতে চাননি রচনা। ছেলে প্রণীলকে আঁকড়েই নতুন করে জীবন শুরু করেন তিনি।
তবে ছেলেকে ভাল ভাবে মানুষ করার জন্য অভিনয়ের কেরিয়ার থেকে ধীরে ধীরে সরে আসতে থাকেন রচনা। প্রণীলই তাঁর ধ্যান জ্ঞান। আর ছেলেও হয়েছে একেবারে মা অন্ত প্রাণ। সিঙ্গল মাদারের দায়িত্ব বেশ দক্ষতার সঙ্গেই পালন করছেন রচনা।
ওড়িশি চলচ্চিত্র জগৎ থেকে ফিরে আসার পর রচনাকে সেইভাবে বড় পর্দায় আর দেখা যায়নি। তবে “রামধনু’ সিনেমাতে অবশ্য শিক্ষিকার ভূমিকায় তাকে দেখা গিয়েছিল। এরপর আবার শাশ্বতর সঙ্গে জুটি বেঁধে “বউদি ডট কম’ সিনেমাতেও অভিনয় করেন রচনা। তবে দুটি সিনেমা বক্স অফিসে সেভাবে সাফল্য আনতে পারেনি।
জি বাংলার “দিদি নাম্বার ওয়ান’ মানেই রচনা ব্যানার্জি। এই রিয়েলিটি শোয়ে তাকে বিট করতে পারবেন না কেউই। অভিনেত্রীর সহজ-সাবলীল সঞ্চালনা বিগত ১০ বছরে “দিদি নাম্বার ওয়ান’ এর টিআরপি ধরে রেখেছে। বাংলার মহিলাদের জীবনের জয়যাত্রার গল্প শোনায় “দিদি নাম্বার ওয়ান’। পর্দায় দিদিদের উপস্থিতিই আপামর বঙ্গকন্যাদের অনুপ্রেরণা যোগায়। “দিদি নাম্বার ওয়ান’ দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ছোটপর্দায় বাংলার মহিলাদের হার না মানার কাহিনী শোনায়। যার প্রধান কৃতিত্ব রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই।