মৃত্যুর পর দেহ লুকিয়ে রেখেছিল ছেলে! সংঘমিত্রা ব্যানার্জীর শেষ জীবন ছিল খুবই করুণ

খলনায়িকা হয়ে অবিরাম পেয়েছেন দর্শকদের অভিশাপ! সংঘমিত্রা ব্যানার্জীর অন্তিম জীবন ছিল খুবই করুণ

বাংলা সিনেমায় যে চরিত্রকে সব সময় কটু কথা বলতে ও ষড়যন্ত্রের দ্বারা সংসার ভাঙতে দেখা, তিনি ছিলেন বাংলার অন্যতম অভিনেত্রী সংঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়। পর্দায় এই অভিনেত্রীকে কখনও বড় দিদি কখনও আবার বড় বৌদির ভূমিকায় দেখা গেছে। অভিনয় করতে দেখা গেছে রঞ্জিত মল্লিক থেকে শুরু করে ভিক্টর ব্যানার্জি সকলের সঙ্গেই। এহেন ডাকসাইটে একজন অভিনেত্রীর শেষ সময়টা কেটেছে বড্ড করুনভাবে, জানুন কেন সংঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Sanghamitra Bandyopadhyay) মৃতদেহ কাউকে দেখানো হয়নি। কী কারণ ছিল এর পেছনে।

সংঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয় জীবন

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় উত্তম কুমারের চোখে পড়েন সংঘমিত্রা। মহানায়ক পরিচালিত শেষ সিনেমা ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’- তে অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। সংঘমিত্রায় ছিলেন উত্তম কুমারের কাস্ট করা শেষ অভিনেত্রী। প্রথম সিনেমাতেই রাহুল দেব বর্মনের সুরে বেগম পারভিন সুলতানার কণ্ঠের ‘বেঁধেছি বীনা’ গানের সঙ্গে বাইজি বেশে নৃত্য পরিবেশন করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়েছিলেন অভিনেত্রী।

Sanghamitra Bandyopadhyay

৩০০ টিরও বেশি সিনেমাতে অভিনয় করেন সংঘমিত্রা

১৯৮১ সালে উমানাথ ভট্টাচার্য সিনেমা ‘অশ্লীলতার দায়’-তে অভিনয় করার সুযোগ পান সংঘমিত্রা। এরপর একের পর এক সিনেমায় অভিনয় করে চলেন তিনি। রাজলক্ষী দেবী, গীতা দে, রেনুকা রায়ের উত্তরসূরী হিসাবে পর্দায় উঠে এসেছিলেন অভিনেত্রী। প্রায় তিন দশক ধরে তিনশরও বেশি সিনেমায় সমানভাবে অভিনয় করে গেছেন সংঘমিত্রা। অভিনেত্রী অভিনীত সিনেমার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘সকাল সন্ধ্যা’, ‘দেবী’, ‘ইন্দ্রজিৎ’, ‘শুভদৃষ্টি’, ‘চৌধুরী পরিবার’, ‘লাঠি’।

খলনায়িকা হিসেবে দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন সংঘমিত্রা

পর্দায় খলনায়িকা বাস্তবে ছিলেন বড্ড ঘরোয়া।এলাহাবাদবাসী জয়ন্ত বন্দোপাধ্যায়কে বিয়ে করেছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন অভিনেত্রী। অভিনয়ের পাশাপাশি রান্নাতেও ছিলেন বেশ পটু। কোনও ব্যক্তি আর্থিক সমস্যায় পড়লে তাকে সাধ্যমত আর্থিকভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করতেন অভিনেত্রী। বাস্তব জীবনে এমনই উদার মনের মানুষ ছিলেন তিনি।

Sanghamitra Bandyopadhyay

সংঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শেষ জীবন ছিল খুবই করুণ

২০০০ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন অভিনেত্রী আর সিনেমা করতে পারবেন না। কিন্তু নিজের অদম্য প্রাণ শক্তির ওপর ভরসা করে মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই হরনাথ চক্রবর্তী অভিনীত ‘সাথী’তে অভিনয় করে কাম ব্যাক করেছিলেন তিনি। পর্দায় খলনায়িকা সংঘমিত্রাকে দেখে বহু মানুষ দিতেন অভিশাপ। নিঃসন্দেহে এটি একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রীর কাছে পুরস্কার হলেও হয়তো এই অভিশাপের ফলেই সংঘমিত্রার শেষ জীবনটা কেটেছিল বড্ড করুন ভাবে।

আরও পড়ুন : চরম অর্থকষ্টে কেটেছে শেষ জীবন, কালি ব্যানার্জীর অন্তিম পরিণতি শুনলে শিউরে উঠবেন আপনি

Sanghamitra Bandyopadhyay

আরও পড়ুন : শেষ জীবনটা ছিল অত্যন্ত বেদনাদায়ক, মৃত্যুতেই শান্তি পেলেন নির্মলা মিশ্র

মৃত্যুর কয়েকদিন আগে অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন সংঘমিত্রা

সাথী সিনেমায় কাম ব্যাক করার মাত্র কিছু মাস পরেই হঠাৎ মরণ রোগে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী। নিজের স্টারডম বজায় রাখতে একমাত্র ছেলেকে তিনি অনুরোধ করেন, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এই তথ্য যেন গোপন থাকে। সংঘমিত্রার জীবনের শেষ কয়েকটা দিন লোক চক্ষুর আড়ালেই কেটে গিয়েছিল। অবশেষে মাত্র ৫২ দিনের মাথায় ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মায়ের কথামতো সংঘমিত্রার মৃতদেহ দেখানো হয়নি কাউকে। শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার পরেই অভিনেত্রীর মারা যাওয়ার খবর জানানো হয়েছিল সকলকে।