বাংলা ছবি দেখতে চাইছে না বাঙালি, হলের অভাবে ধুঁকছে বাংলা সিনেমার ভবিষ্যৎ

করোনা পরবর্তী পর্যায়ে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে টলিউড (Tollywood)। তবে হলের অভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়তে হচ্ছে বাংলা বিনোদনের জগৎকে। দক্ষিণী এবং বলিউড ছবির দাপটে বাংলাতে বাংলা ছবির জন্যই হল মেলা দুষ্কর হয়ে পড়ছে। বাংলার হল (Cinema Hall) মালিকরা কেউই এখন আর বাংলা ছবির জন্য হল দিতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে মার খাচ্ছে একের পর এক বাংলা ছবি। সম্প্রতি এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন পরিচালক রোহন সেন।

‘গঙ্গুবাই কাথিয়াওয়াড়ি’, ‘রাধে শ্যাম’, ‘পুষ্পা’ যেখানে মাসের পর মাস চলছে সেখানে মাত্র কয়েক সপ্তাহের জন্যই হল খোলা থাকছে বাংলা ছবির জন্য। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার বাংলা ছবির জন্য হল দিতেই রাজি হচ্ছেন না মালিকরা। রোহন সেনের ‘অপরাজিতা’ ছবিটিও রয়েছে সেই তালিকায়। বৃহস্পতিবার এই মর্মে পরিচালক ফেসবুকে ক্ষোভ উগরে দিলেন।

পরিচালক জানিয়েছেন, ‘অপরাজিতা’র হল পাওয়া নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ চলছিল। এখনও চলছে। নন্দন-২, পিভিআর-এ কিছু শো পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়া, সিনেপলিস এবং কার্নিভ্যাল-এ পাওয়া গিয়েছে। যে কোনও কারণেই হোক আমরা আইনক্সে কোনও শো পাইনি। এটা খুবই হতাশাজনক যে কোনও পরিচালকের কাছে।’ শুধু অপরাজিতার জন্য নয়, এই মুহূর্তে প্রায় প্রত্যেকটি বাংলা ছবিই বাংলার মাটিতেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।

আনন্দবাজার সূত্রে খবর, ‘অপরাজিতা’র পাশাপাশি ‘টনিক’, ‘বাবা বেবি ও…’, ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ ভাল ব্যবসা করলেও একটা সময়ের পরে প্রেক্ষাগৃহ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সুমন মৈত্রের ‘আমি ও অপু’, শ্রীমন্ত সেনগুপ্তের ‘আবার বছর কুড়ি পরে’ ছবিরও একই হাল হয়েছে। আনন্দবাজারের কাছে রোহন জানিয়েছেন ‘অপরাজিতা’র জন্য হল পেতে গিয়ে তার কালঘাম ছুটেছে। তার প্রশ্ন, ‘বাংলায় বাংলা ছবি হল পায় না! ধিক্কার! এর পর কি আমাদের বাংলা ছেড়ে অন্য জায়গায় গিয়ে বাংলা ছবি দেখাতে হবে?’

ছবি না দেখে বা দেখিয়েই কিভাবে বলে দেওয়া যায় ছবি চলবে না? প্রশ্ন রেখেছেন তিনি। সঙ্গে দর্শকদের কাছে তার করুণ আকুতি, ‘‘আপনারাই পারেন বাংলা ছবি বাঁচাতে। হলে গিয়ে বাংলা ছবি দেখুন। বাংলা ছবিকে বাঁচান। না হলে ভবিষ্যতে কেউ স্বাধীন বাংলা ছবি বানাবে না। বাংলায় বাংলা ছবি চালাতে দেওয়া হোক। অন্তত একটা হলেও প্রাইম শো দেওয়া হোক।’’ বর্তমানে যে পরিস্থিতি সেখানে নতুন ছবি বানানোর আগে পরিচালক চার বার ভাববেন বলেও জানিয়েছেন।

দেবের ব্লকবাস্টার হিট টনিকের প্রযোজক অতনু রায় চৌধুরীও মুখ খুললেন, ‘‘বাংলা ছবি আর প্রেক্ষাগৃহ পাবে না। এই ভাবনায় অভ্যস্ত হতে বলা হচ্ছে পরিচালক, প্রযোজকদের। তার জন্য দায়ী আমরাই।’’ তার দাবি বাংলাতে একসঙ্গে ৪-৫টি ছবি মুক্তি পায়। বলিউডে তেমনটা হয় না। নিজের ভাষার ছবি কেন নিজের রাজ্যে প্রাইম টাইম পাবে না? মহারাষ্ট্র এবং দক্ষিণ ভারতের নজির তুলে ধরে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দাবি করেছেন প্রযোজক।

এত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হল মালিকরা কী বলছেন? তাদের পাল্টা দাবি, ‘‘আমরাও ব্যবসা করতে বসেছি। বাংলা ছবি থেকে আয় হলে কেন আমরা শো দেব না! কিন্তু ব্যবসা দিচ্ছে অন্য ভাষার ছবি। বাংলা দর্শকই নিজের ভাষার ছবি দেখতে চাইছেন না।’’ প্রিয়া সিনেমা হলের কর্ণধার অরিজিৎ দত্তের সাফ কথা, ‘‘পরিচালক-প্রযোজকের যদি নিজেদের ছবির উপরে আস্থা থাকে তা হলে একটি শো-এর হলভাড়া দিন। আমি শো ছেড়ে দেব।’’