মিমি চক্রবর্তী (Mimi Chakraborty), এই নামটার সঙ্গে আজ প্রায় সকলেই পরিচিত। তবে আজ থেকে বেশ কয়েক বছর পিছিয়ে গেলে জলপাইগুড়ি জেলার এই ‘গ্রামের মেয়েটা’কে চিনত না কেউই। এমনকি সে যে এত বড় জায়গাতে পৌঁছাতে পারবে, টলিউডের সুপারস্টার নায়িকা হয়ে উঠতে পারবে এমনটা বিশ্বাস করতেন না তার আশেপাশের মানুষরাই। তাই মিমির অভিনয়ে আসার স্ট্রাগলটা সিনেমার থেকে কিছু কম নয়। সেটা নিয়েই আনন্দবাজারে কলম ধরলেন অভিনেত্রী।
মিমির কথায় ছোট থেকেই তিনি ভীষণ ডানপিটে ছিলেন। কাবাডি খেলতেন, ব্যাডমিন্টনে পুরস্কার পেতেন। রোদে পুড়ে জলে ভিজে গায়ের রং কালো হয়ে গিয়েছিল। তাকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় থাকতেন মা-বাবা। মেয়ের খেলাকেও তারা মন থেকে সাপোর্ট করতেন না। আশেপাশে সবাই বলতেন মেয়ে এভাবে থাকলে নাকি বিয়ে হবে না। বাবা-মা বিপদে পড়বে। অবশ্য আজও মিমির বিয়ে কবে হবে সেই প্রশ্নই বারবার তোলেন সকলে।
কীভাবে অভিনয়ে এলেন মিমি চক্রবর্তী?
মিমি আর পাঁচটা গড়পড়তা সাধারণ মানুষের জীবন চাননি। দশটা-পাঁচটার চাকরি, পাড়ার আড্ডা, ভাত ঘুম, বিয়ে, এসবের বাইরেও যে জীবন আছে সেই জীবনের পথে এগোতে চেয়েছিলেন তিনি। কলকাতার ঝাঁ চকচকে জীবন তাকে টেনেছিল। তাই স্কুলের পর কলেজে পড়াশোনা করবেন বলে বাড়ির অমতে জেদের বশে এসেছিলেন কলকাতায়। তারপর সেখান থেকেই ‘চ্যাম্পিয়ন’ ধারাবাহিকে কাজের সুযোগ পেলেন তিনি। জীবন বয়ে চলল নতুন খাতে।
কলকাতায় আসার পরেও মিমির পথ চলা সহজ ছিল না। কিন্তু তিনি হাল ছাড়তে চাননি। এমনও দিন গিয়েছে গরম থেকে বাঁচার জন্য তোষকে জল ঢেলে শুয়েছেন। তোয়ালে ভিজিয়ে রেখেছেন। “গ্রামের মেয়ে, কোনদিনও অভিনয় হবে না!”, সেদিন মিমিকে বলেছিলেন যারা আজ তাদেরই খুঁজে পাওয়া যায় না। মিমি বুঝেছেন টাকা রোজগার করে নিজের জন্য জমাতে হবে। বাবা-মায়ের পর তার জীবনে আর কেউ থাকবে না।
মিমিই একমাত্র অভিনেত্রী যিনি ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনেত্রীদের কম পারিশ্রমিক দেওয়ার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। তার কথায়, “বিজ্ঞাপনের কাজে আমায় দশ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য লোকের হাত, পা শুকিয়ে গেলে অন্য আর এক জন মাত্র এক লাখ টাকায় সেই কাজ করে দেয়। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি চায় আমাকে বা আমাদের যেন ক্যাটরিনা কইফের মতো দেখতে লাগে। অথচ সেই দেখতে চাওয়ার জন্য যে খরচ তার সিকিভাগ দিতে গেলেও লোকের যে কী কষ্ট হয়! মুম্বইয়ে প্রযোজনা সংস্থা ক্যাটরিনার বিশেষ খাবারের খরচ পর্যন্ত জোটায়। আর এখানে? লোকে তো নিজেকে কম পয়সায় ঠিক করে রাখতেই পারবে না। আর তখন শুরু হবে ট্রোলিং। ‘মোটা মেয়ে’, ‘কালো মেয়ে’, ‘বুড়ি মেয়ে’।”
আরও পড়ুন : টলিউডে কোন নায়িকা কত পারিশ্রমিক পান? চমকে দেবে কোয়েল মল্লিকের পারিশ্রমিক
View this post on Instagram
আরও পড়ুন : মিমির কারণে ভাঙে রাজ-পায়েলের প্রেম! প্রাক্তনকে নিয়ে কী বললেন পায়েল?
মিমি ব্যক্তিগত জীবনে পার্টি, হুল্লোড়ের মধ্যে থাকতে চান না। তিনি শুধু নিজের কাজ নিয়ে থাকতে চান। কম কাজ করেন ঠিকই। কিন্তু বেছে বেছে কাজ করেন। আর বাকি সময়টা লেখেন, বই পড়েন। পোষ্যদের সঙ্গে সময় কাটান। আর তার নিজস্ব বন্ধু-বান্ধব রয়েছেন। যারা আজীবন তার পাশে থাকবেন। তিনি যে একা আছেন জীবনে, এটা তার অভিযোগ নয়। বরং এটাই তার শান্তি।