কি কি শাস্তি হতে পারে রোদ্দুর রায়ের, কোন কোন ধারায় দায়ের হয়েছে মামলা

এতদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামদের মত বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে কটু কথা বলে এবং তাদের গালিগালাজ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে জনপ্রিয়তা এবং দুর্নাম দুইই পেয়েছিলেন রোদ্দুর রায় (Roddur Roy)। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে কুরুচিকর মন্তব্য করতেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তড়িঘড়ি গোয়া থেকে গ্রেফতার করা হল তাকে।

রোদ্দুর রায়ের বিরুদ্ধে হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। তার বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মোট ৯টি মামলা দায়ের হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩,১৫৩ (এ), ১২০ (বি), ৪৬৫, ৪৬৭, ৪৬৮, ৫০১, ৫০৫, ৫০৯ ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোন কোন অভিযোগ উঠলো, কোন মামলার ফলে শাস্তি কী হতে পারে, জেনে নিন।

১৫৩ ধারা : হিংসা ছড়াতে ইচ্ছাকৃতভাবে উস্কানি দিলে এই মামলা দায়ের করা হয়। হিংসা যদি ছড়ায় বা না ছড়ায়, উভয় ক্ষেত্রেই এই মামলা দায়ের হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধির এই ১৫৩ ধারা অনুসারে যদি কোনও ব্যক্তি অসৎ উপায়ে, ইচ্ছাকৃতভাবে বেআইনি কিছু করে থাকেন, জেনে-বুঝে কোনও এমন কিছুতে উস্কানি দেয় যা পরবর্তীতে হিংসা ছড়াতে পারে, সেক্ষেত্রে তার সর্বোচ্চ ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা কিংবা উভয়ই হতে পারে। এটিকে জামিনযোগ্য ধারা বলে গণ্য করা হয়।

১৫৩ (এ) ধারা : ধর্ম, জাতি, জন্মস্থান, বাসস্থান, ভাষা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্বেষের বাতাবরণ তৈরি করলে এবং সামাজিক সম্প্রীতি জন্য ক্ষতিকর এমন কোনও কাজ করলে এই ধারায় মামলা দায়ের হয়। এক্ষেত্রে লিখিত বা মৌখিক ভাবে অথবা আকারে-ইঙ্গিতে কিংবা দর্শনীয় ভাবে উপস্থাপন করলে, অন্য কোনওভাবেও এমন কিছু করলে এই ধারায় শাস্তি পেতে হতে পারে। বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতিগত ভাষা বা আঞ্চলিক গোষ্ঠী কিংবা বর্ণ সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির জন্য ক্ষতিকর কিংবা জনসাধারণের শান্তি বিঘ্নিত করে বা করতে পারে বলে মনে হলে এই ধারা আরোপ করা যায়। এটিকে জামিন অযোগ্য ধারা বলে গণ্য করা হয়।

১২০ (বি) ধারা : অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে এই ধারা আরোপ হয়। যদি দোষ প্রমাণিত হয় তাহলে অপরাধের প্রকার অনুসারে দোষী ব্যক্তির দুই বছর বা তার বেশি মেয়াদের জন্য সশ্রম কারাদণ্ড থেকে শুরু করে যাবজ্জীবন এমনকি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। আবার ক্ষেত্রবিশেষে অনধিক ৬ মাসের কারাদন্ড বা জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে।

৪৬৫ ধারা : জালিয়াতির অভিযোগে এই জামিনযোগ্য ধারা আরোপ করা হয়। দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড কিংবা জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে।

৪৬৭ ধারা : কোনও মূল্যবান সম্পত্তি বা নথি জালিয়াতি করলে জামিন অযোগ্য এই ধারায় মামলা দায়ের করা যায়। কোনও মূল্যবান সম্পত্তি বা উইল, কাউকে দত্তক নেওয়ার ক্ষমতা অথবা কোনও মূল্যবান সম্পত্তি হস্তান্তর সম্পর্কিত নথি জালিয়াতি করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে।

roddur roy

৪৬৮ ধারা : প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতি করলে, কোনও নথি জাল করে প্রতারণার জন্য ব্যবহার করলে দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে। এটি একটি জামিন অযোগ্য ধারা।

৫০১ ধারা : মানহানিকর কথা বলে কোনও বিষয়ে লেখা বা ছাপানো হলে দোষী সাব্যস্ত হলে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা দুইই হতে পারে। এটি জামিনযোগ্য ধারা।

৫০৫ ধারা : সাধারণ মানুষের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনও বক্তব্য, বিবৃতি গুজব বা প্রতিবেদন তৈরি, প্রকাশ বা প্রচার করা যা কোনও অফিসার কিংবা জওয়ানকে বিদ্রোহী করে তুলতে পারে কিংবা তাদের কর্তব্য পালনে ব্যর্থ করতে পারে। এক্ষেত্রে দোষ প্রমাণিত হলে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়।

Roddur Roy

৫০৯ ধারা : কোনও মহিলার শালীনতার জন্য অবমাননাকর উদ্দেশ্যে কোনও শব্দ, অঙ্গভঙ্গি বা সমতুল্য কোনও কাজ করলে কিংবা কোনও বস্তু প্রদর্শন করলে এই মামলা দায়ের হয়। এক্ষেত্রে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে। এটি একটি জামিনযোগ্য ধারা।