মুখ্য ভূমিকায় নয়, খলনায়কের ভূমিকাতেও নয়, যদি সব থেকে কিছু কঠিন কাজ হয়ে থাকে অভিনয় জগতে তা হল মানুষকে হাসানো অর্থাৎ হাস্যকৌতুক চরিত্রে অভিনয় করা। সাবলীল ভাবে অভিনয় করতে করতে মানুষকে হাসিয়ে দেওয়ার কঠিন কাজকে যারা সহজ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন টলিউড (Tollywood) অভিনেতা খরাজ মুখোপাধ্যায় (Kharaj Mukherjee)। জানেন কি ভীষণ সাদামাটা এই মানুষটি জীবনে ঘরছাড়া থেকে চাকুরীহারা, সব রকম খারাপ পরিস্থিতিরই সম্মুখীন হয়েছিলেন একসময়।
সম্প্রতি ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ‘বগলা মামা যুগ যুগ জিও’, সিনেমায় মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যাবে খরাজ মুখোপাধ্যায়কে। এত দীর্ঘ সময় অভিনয় জগতে থাকার পর অবশেষে তিনি পেলেন মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ। এত দেরি হল কেন? জিজ্ঞাসা করায় হাসিমুখে খরাজ বলেন, “বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছি যাতে আমাকে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করার জন্য বেছে নেওয়া হয়। এতদিনে যে আমাকে যোগ্য বলে মনে হয়েছে, তাতে আমি ভীষণ খুশি। তবে এর আগে যদি আমি সুযোগ পেতাম তাহলে আরো ভালোভাবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারতাম আমি।”
আজ ক্যারিয়ারের অনেকটা বছর কাটিয়ে এসেছেন তিনি। কিন্তু আপনি কি জানেন একটা সময় খরাজ রেলে চাকরি করতেন এবং বাড়ির কেউ চাইত না তিনি অভিনয় জগত নিয়ে কাজ করুক কারণ অভিনয় এমন একটা পেশা যেটা ভীষণ অনিশ্চিত। কিন্তু অভিনয় করার পাশাপাশি কিছুতেই চাকরিটাকে বয়ে নিয়ে যেতে পারছিলেন না খরাজ, তাই আত্মগ্লানিতে ভুগছিলেন। অবশেষে একদিন স্ত্রী প্রতিভার সমর্থন পেয়ে চাকরি ছেড়ে অভিনয়কেই বেছে নিলেন নিজের পেশা হিসেবে।
তবে যে স্ত্রীকে সবসময় পাশে পেয়েছেন হায় বাঙালি হায় খ্যাত অভিনেতা, সেই প্রতিভাকে বিয়ে করার জন্য এক প্রকার ত্যাজ্যপুত্র হতে হয়েছিল তাকে। অভিনেতার রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ পরিবার মেনে নেয়নি অব্রাহ্মণ মেয়েকে। বাবার অসম্মতিতে বিয়ে করার ফলে বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল অভিনেতাকে। পরে অবশ্য বর’দার কথায় বাবা সবটা মেনে নিয়ে বাড়িতে থাকতে দেন সস্ত্রীক খরাজকে। তারপর থেকে সেখানেই থাকেন তারা। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি পেশাগত জীবনেও যথেষ্ট অপমানিত হতে হয়েছিল খরাজকে।
আরও পড়ুন : কেন বাবার সঙ্গে সম্পর্ক নেই প্রসেনজিতের একমাত্র মেয়ের? প্রকাশ্যে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য
আজ টলিউডের একজন সফল অভিনেতা হলেও একসময় স্থূলতার জন্য যথেষ্ট কথা শুনতে হয়েছিল তাকে। অল্প বয়সে বেশি রোগাই ছিলেন অভিনেতা কিন্তু একটি অ্যাক্সিডেন্টের পর আস্তে আস্তে মোটা হতে শুরু করেন তিনি। যদিও এতে সাপে বর হয়েছে, এটাই মনে করেন অভিনেতা কারণ মোটা হওয়ার পর ধীরে ধীরে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ পেতে শুরু করেন খরাজ। চেহারার সঙ্গে মানানসই বহু চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। একসময় যে চেহারা তার অপমানের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেই চেহারাই আজ তাকে সফলতার শীর্ষে নিয়ে গেছে।
আরও পড়ুন : সাধারণ ঘরের বউ থেকে টলিউডের সেলিব্রিটি হেয়ার স্টাইলিস্ট! জলি চন্দা আজ বাংলার গর্ব
আরও পড়ুন : সিনেমা ছেড়ে সিরিয়ালে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, জি বাংলায় আসছে নতুন ধারাবাহিক
প্রসঙ্গত, একজন দাপুটে অভিনেতা হলেও খরাজ কিন্তু আদ্যপ্রান্ত একজন সাদামাটা মানুষ। অভিনেতাসুলভ কোন কাজই করেন না তিনি। আর পাঁচটা বিবাহিত পুরুষের মতোই তিনি বাড়িতে সংসারের কাজে স্ত্রীকে সাহায্য করেন, প্রয়োজনে বাসন মাজেন। বাড়ির সকলে তার হাতের রান্না খেতে ভীষণ পছন্দ করেন। অভিনেতা হলেই যে এইসব কাজ করা যাবে না তা একেবারেই মনে করেন না খরাজ। লক্ষ্য যতই দূরের হোক না কেন পা যেন সবসময় মাটিতে থাকে, এটাই চেষ্টা করেন অভিনেতা।
আরও পড়ুন : টলিউডের সবথেকে বেঁটে অভিনেত্রী কে? দেখে নিন টলিউড সুন্দরীদের কার উচ্চতা কত