খ্যাতির বিড়ম্বনা, ইউটিউবারদের প্রলোভনে পা দিয়ে ঘোর বিপদে কাঁচা সবজিমাখা কাকু, বন্ধ হল ব্যবসা

বাজারের কাঁচা সবজি যেমন লাউ, পটল, ঝিঙে, পেঁপে থেকে কাঁচকলা এমনকি কোলড্রিংস মাখা খাইয়ে কার্যত হাবরার মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন বুলন ওরফে রবীন ঘোষ (Rabin Ghosh) নামের এক ব্যবসায়ী। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে তিনি জনপ্রিয় হয়ে পড়েন গোটা বাংলার কাছে। সবাই তাকে ভালবেসে নাম দেন ‘কাঁচামাখা কাকু’ (Kacha Makha Kaku)। তবে এই জনপ্রিয়তাই যে কাল হয়ে দাঁড়াবে তা কখনও ভাবতে পারেননি সহজ সরল মানুষটি। তাই খ্যাতির বিড়ম্বনায় পড়ে আজ তার ব্যবসা হলো বন্ধ, এমনকি তিনি নিজেও চরম অসুস্থ।

কাঁচা সবজি মেখে এতদিন বেশ ভালোই রোজগার করছিলেন তিনি। হাবরা বাণীপুরের কাছে বাণী নিকেতন হাই স্কুলের সামনে রোজ কাঁচা সবজি মাখা বিক্রি করতেন তিনি। তার কাছে এই মাখা খাওয়ার জন্য স্কুল পড়ুয়া থেকে শুরু করে আশেপাশের এলাকার মানুষেরা ভিড় জমাতেন রোজ। যে সবজিই মেখে দিতেন না কেন, চেটেপুটে খেতেন গ্রাহকরা। ক্রমে তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। তিনি চলে আসেন ইউটিউবারদের নজরে। আর এটাই হল তার কাল।

সোশ্যাল মিডিয়া যেমন সৌভাগ্য আনতে পারে, তেমনই চরম দুর্ভাগ্যও বয়ে আনতে পারে। ইউটিউবারদের সৌজন্যে রীতিমতো ভাইরাল হয়েছিলেন মাখাকাকু। তবে এই ইউটিউবাররাই তার জন্য বিপদ ডেকে এনেছেন। বর্তমানে ইউটিউবারদের দৌরাত্ম্যে তার রীতিমতো পাগল পাগল অবস্থা! অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে আপাতত বাড়িতে রেস্ট করছেন। হাতজোড় করে সকলের কাছে আবেদন করেছেন, “দয়া করে আর কেউ কোনও ভিডিও বানাতে আসবেন না। আর কেউ বিরক্ত করলে প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হব।”

কিন্তু কী এমন হল তার? এত ভাল ব্যবসাটা বন্ধ হল কেন? জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউটিউবারদের ভিড় বাড়ছিল তার কাছে। প্রথম প্রথম বিষয়টিতে বেশ মজা পেতেন তিনি। ভাইরাল হওয়ার পর তার দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছিল। তবে একটা সময় তার দোকানের সামনে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ইউটিউব এরা তাকে আরও ফেমাস করে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ঘাস, কচি বাঁশ, গোলাপ ফুলের পাপড়ি, রজনীগন্ধা মেখে দেওয়ার অনুরোধ করেন। আর তা করতে গিয়েই আজ তার এই অবস্থা হয়েছে!

মাথা কাকুর অভিযোগ লোভ দেখিয়ে তাকে নিয়ে ভিডিও বানিয়ে তারমধ্যে রং চড়িয়ে নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন ইউটিউবাররা। আর নেগেটিভ প্রচারের ফাঁদে পা দিয়ে বিপদে পড়ে গিয়েছেন তিনি। স্কুলের সামনে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। দু পক্ষের মধ্যে হাতাহাতিতে একজন শিক্ষককে নিগৃহীত হতে হয়। নানা জায়গা থেকে কটুক্তি শুনে তিনি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েন। ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। মানসিক যন্ত্রণা থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। আর তিনি ভাইরাল হতে চান না। আপাতত শুধু শান্তি চাইছেন রবীন ঘোষ। ইউটিউবাররা যদি এরপরেও বেশি বাড়াবাড়ি করে তাহলে প্রশাসনের সাহায্য নিতে তিনি বাধ্য হবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন।