একটা সময় ছিল যখন গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহরতলীতেও বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম বলতে ছিল টিভি (Bengali Telivision)। সেই সময় আজকের মত পাড়ায় পাড়ায় এত সিনেমা হল, মাল্টিপ্লেক্স গজিয়ে ওঠেনি। স্রেফ দূরদর্শনই দর্শকদের মনের খোরাক মেটাতো। বাংলা, হিন্দি সিরিয়াল (Bengali Mega Serial), বিভিন্ন টেলিভিশন শো মিলিয়ে মিশিয়ে গোটা পরিবারের সঙ্গে বেশ আনন্দের সঙ্গেই কাটতো দিনগুলো।
তারপর হল যুগের বদল। টেলিভিশনের রুচি গেল বদলে। সঙ্গে সঙ্গে দর্শকদেরও রুচি পাল্টাতেই হল। বাস্তবতার বাইরে বেরিয়ে বাংলা সিরিয়ালগুলি হয়ে উঠল ফ্যামিলি ড্রামা। বাবা-মা, ঠাকুমা-ঠাকুরদা, কাকা-পিসি, মামা-মাসিরাই হয়ে উঠলেন ঘরের শত্রু! গল্পে ঢুকলো পরকীয়া, অবৈধ সম্পর্ক, কুটকাচালি ইত্যাদি ইত্যাদি। যাদের জন্ম ৯০ এর দশকের পর তারা এই অতিরঞ্জিত বিষয়বস্তুর ভিড়েই কোনওমতে মনোরঞ্জনের বিষয়বস্তু খোঁজেন।
তবে সত্যিই কি বাংলা সিরিয়ালগুলো এখনও সেই আগের মত গরীমা ধরে রাখতে পেরেছে? পারিবারিক, সামাজিক মূল্যবোধ কোথাও যেন সাংসারিক মারপ্যাঁচের কাছে কোণঠাসা। তাই তো এখন এই প্রজন্মের একটা বড় অংশ টিভি মুখো হতেই চাইছেন না। স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপের যুগে যখন হাতে রয়েছে গোটা পৃথিবীর সম্ভার তারা কেনই বা টিভি খুলে বসবেন? এই কারণেই নাকি এই প্রজন্মের দর্শকদের হারাচ্ছে বাংলা টেলিভিশন।
আজকাল প্রত্যেকের হাতে হাতে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ-ইন্টারনেটের যুগে ওটিটির সঙ্গে দর্শকদের সখ্যতা যেন কিছুটা বেশি বেড়েছে। এর নেপথ্যে অবশ্যই অন্যতম বড় কারণ করোনা। কেননা করোনার আগে কেই বা ভাবতে পেরেছিল সিনেমা এবার থেকে ঘরে বসেই দেখা যাবে? সিরিয়ালগুলোও নির্দিষ্ট সম্প্রচারের সময়ের আগেই চলে আসবে হাতের মুঠোফোনে?
ইদানিং বাংলা সিরিয়ালের দর্শকদের একটা বড় অংশ মুঠোফোনেই সিরিয়াল দেখছেন বলে জানা যাচ্ছে একটি সমীক্ষায়। যখন খুশি, যেখানে খুশি সিরিয়াল দেখার এই সুযোগ তাদের টিভি বিমুখ করেছে। তবে ওটিটিতে তো আর শুধু বাংলা সিরিয়াল থাকে না, থাকে দেশ-বিদেশের বহু কনটেন্ট। সারাদিনের ব্যস্ততার ফাঁকে তাই আর কতটুকুই বা সময় বরাদ্দ থাকে বাংলা সিরিয়ালের জন্য?
দূরদর্শন যখন সবে ঘরে ঘরে পৌঁছাতে শুরু করে তখন এত চ্যানেলের বহর ছিল না। ছিল না সিরিয়ালের এত ঠাসাঠাসি ভিড়। কোয়ান্টিটির কাছে কোথাও যেন হারিয়ে যাচ্ছে কোয়ালিটি। টিআরপি সর্বস্ব টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ব্যবসা ছাড়া চলবেও না। তাই এই প্রজন্মের এমনকি আগের প্রজন্মের দর্শকের একটা বড় অংশও ভিড়ছেন ওটিটির দিকে।