ইদানিং টলিউডের (Tollywood) সর্বস্তরের কলাকুশলীদের মুখে শুধু একটাই কথা শুনতে পাওয়া যায়, ‘বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচান’, ‘বাংলা ছবির পাশে এসে দাঁড়ান’। তবে মুশকিল হল এত কিছুর পরেও বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ানোর আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না দর্শকদের মধ্যে। এখন দক্ষিণী ছবির রমরমার বাজারে বাংলা ইন্ডাস্ট্রি আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জী, চিরঞ্জিত চক্রবর্তীদের (Chiranjit Chakraborty) আমলে যেখানে ৭৫০ এর কাছাকাছি হল ছিল সেখানে এখন ৪০ টি মাত্র হলে রীতিমতো ধুঁকছে বাংলা ছবিগুলোও।
এই প্রসঙ্গে টিভি নাইন বাংলার কাছে নিজস্ব মতামত তুলে ধরলেন চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। তার কথায়, “ছবি ভালো হলে মানুষ সেই ছবি এমনিই দেখবেন। পাশে এসে দাঁড়াতে বলা খারাপ কিছু নয়। আমি একটা ছবি তৈরি করে মানুষকে সেটা দেখতে বলতেই পারি। সেটাই হয়তো পাশে এসে দাড়াতে বলা। সবাই জানেন বাংলা ছবি খুব ভালো চলছে না। হাউসফুল কমে গিয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিকে যদি বাঁচাতে হয় তাহলে মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু সবকিছু নির্ভর করে ছবির মানের উপর।” তিনি আরও বলেছেন এখন অনেকে দর্শককে টাকা দিয়ে হল হাউসফুল করেন। কিন্তু একটা ছবি চালাতে হলে ৩-৪ সপ্তাহ ভালোভাবে ছবিটা চলতে হবে।
চিরঞ্জিত মনে করেন এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্মে এসে যাওয়াতে বাংলা ছবি অনেক সাফার করছে। অনেকে সিনেমা হলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। আসলে টলিউডের ‘মাস’ দর্শক চলে গিয়েছেন। চিরঞ্জিতের কথায়, আমরাই দর্শকদের হাত ছেড়ে দিয়েছি। ওদের কথা চিন্তা করিনি। সোজা অঙ্ক হল, ধরুন একটি রেস্তোরাঁ। যে দর্শক মাছ-ভাত খান, ডাল-ভাত খান আমরা তাকে সেটা দিইনি। অন্যরকম খাবার পরিবেশন করেছি গত ২০ বছর ধরে। শিক্ষিত দর্শকের ছবি তৈরি করছি আমরা। তার ফলে মাস দর্শক মুখ ফিরিয়েছে। গালাগালি করে বেরিয়ে গিয়েছেন।” চিরঞ্জিতের সাফ কথা, ডাল-ভাত, আলু-ভাত খাওয়া দর্শককে পাস্তা খেতে দিলে তারা খাবেন কেন?
চিরঞ্জিতের কথায়, ভাল সিনেমা তৈরি করতে গিয়ে কার্যত গ্রাম বাংলার দর্শকদের হারিয়েছে টলিউড। দক্ষিণে যেমন পুষ্পা, আর আর আরের মত কমার্শিয়াল ছবি তৈরি হয়, সেই ছবি একসময় টলিউডেও হয়েছে। যেখানে হিরোকে হাইলাইট করা হয়। আজগুবি শট থাকে, মারধোর থাকে বেশি। এই ছবি বানাতে ভুলে গিয়েছে বাংলা। ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’কে ‘খারাপ ছবি’ বলে ‘বেটার সিনেমা’ বানাতে চেয়েছে টলিউড। কিন্তু সেই বেটার সিনেমাও হালে পানি পাচ্ছে না।
সবশেষে চিরঞ্জিতের বক্তব্য, বাঙালি দর্শক, আলুওয়ালা, পটলওয়ালাদের কাছে অ্যান্ড্রয়েড ফোন নেই। তারা যখন মাল্টিপ্লেক্সে গিয়ে দেখেন একটা টিকিটের দাম ১৮০ টাকা তখন বাংলা ছবি ধারেকাছেও ঘেঁষেন না। তাহলে টলিউডকে বাঁচানোর উপায় কী? চিরঞ্জিতের মতে, তাদের সময়ের যে ছবিগুলোকে একসময় খারাপ ছবির তালিকায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল সেই ছবিই এখন টলিউডকে বাঁচাতে পারে। গ্রামেগঞ্জ, মফস্বল থেকে মাস দর্শককে ফেরাতে হলে আগে গরীব মানুষের জন্য ছবি বানাতে হবে। তবে সেই গরীব দর্শকরা এসে টলিউডের পাশে দাঁড়াবেন। শান্তি বজায় রেখে আলোচনা করে টলিউডকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে। এমনটাই মনে করেন চিরঞ্জিত।